E-Paper

পরিকাঠামোহীন আয়ুষ ক্লিনিক জোর করে ‘স্মার্ট’, ক্ষুব্ধ চিকিৎসকেরা

রাজ্যের গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে প্রায় ২২০০ আয়ুষ (আয়ুর্বেদ, ইউনানি, সিদ্ধা, হোমিয়োপ্যাথি) চিকিৎসা কেন্দ্রে কর্মরত মেডিক্যাল অফিসারেরা কার্যত ন্যূনতম পরিকাঠামো এবং সাহায্যকারী ছাড়াই নিযুক্ত রয়েছেন বলে অভিযোগ।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২৪ ০৫:৫১

— প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

তাঁদের বলা যেতে পারে, ঢাল-তলোয়ারহীন নিধিরাম সর্দার।

কারণ, রাজ্যের গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে প্রায় ২২০০ আয়ুষ (আয়ুর্বেদ, ইউনানি, সিদ্ধা, হোমিয়োপ্যাথি) চিকিৎসা কেন্দ্রে কর্মরত মেডিক্যাল অফিসারেরা কার্যত ন্যূনতম পরিকাঠামো এবং সাহায্যকারী ছাড়াই নিযুক্ত রয়েছেন বলে অভিযোগ। ওই চিকিৎসা কেন্দ্রগুলিতে তাঁরাই একমাত্র কর্মী। এ হেন মৃতপ্রায় ক্লিনিকগুলিকে আচমকা পঞ্চায়েত দফতর ‘স্মার্ট ক্লিনিক’-এর স্তরে উন্নীত করার ঘোষণা করায় তীব্র বিতর্ক দেখা দিয়েছে। ক্ষুব্ধ চিকিৎসকেরা বিষয়টি নিয়ে পঞ্চায়েত ও রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরে অভিযোগ জানিয়েছেন।

চিকিৎসকদের প্রশ্ন, পরিকাঠামোর এতটুকু মানোন্নয়ন না করে শুধু একটি কম্পিউটার বসিয়ে দিলেই কি নড়বড়ে চিকিৎসা কেন্দ্র ‘স্মার্ট’ হয়ে যায়? গত ২ জানুয়ারি থেকে পঞ্চায়েত দফতরের তরফে সব জেলার জেলাশাসক ও জেলা পরিষদকে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে, অতি জরুরি ভিত্তিতে (মোস্ট আর্জেন্ট) কেন্দ্রের পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকা থেকে স্মার্ট ক্লিনিকের জন্য কম্পিউটার, ইউপিএস এবং প্রিন্টার কিনতে হবে। কিন্তু প্রশ্ন হল, সেগুলি চালাবে কে?

আয়ুষ ক্লিনিকে কর্মরত মেডিক্যাল অফিসারদের এখনও পর্যন্ত ডেটা এন্ট্রির প্রশিক্ষণ হয়নি। ক্ষুব্ধ ওই চিকিৎসকদের প্রশ্ন, মাত্র ১৬ হাজার টাকা বেতন পাওয়া এক জন ডাক্তার বহির্বিভাগে রোগীর শারীরিক অবস্থা পরীক্ষা করবেন, না কি সেখানে ভিড় সামলাবেন, না কি কম্পিউটারে রোগীর তথ্য আপলোড করবেন? সেই সঙ্গে রয়েছে ওষুধের স্টক মেলানো, দফায় দফায় ওষুধের তথ্য আপলোড করা, রোগীকে ওষুধ দেওয়া, ই-প্রেসক্রিপশন লেখা, অনলাইনে কোন রোগী কোন সময়ে অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিলেন, তা নজরে রাখা। এত কাজ কি তিনিই করবেন? এটা কি আদৌ বাস্তবসম্মত?

আয়ুর্বেদ চিকিৎসকদের সর্বভারতীয় সংগঠন ‘ন্যাশনাল আয়ুর্বেদ স্টুডেন্টস অ্যান্ড ইউথ অ্যাসোসিয়েশন’ (নাস্য)-এর চিকিৎসকদের কথায়, ‘‘সরকারের উদ্দেশ্য মহৎ, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। স্মার্ট ক্লিনিক হলে গ্রামাঞ্চলে আয়ুষ চিকিৎসা কেন্দ্রগুলিতে রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত তথ্য, চিকিৎসকদের কাজ, ওষুধের পরিমাণ নথিভুক্ত থাকবে। কিন্তু এর জন্য যে ন্যূনতম কর্মী ও পরিকাঠামো দরকার, সেটা কোথায়?

খামতি রয়েছে আরও। আয়ুষ ক্লিনিকে কোনও ফার্মাসিস্ট, নার্স, আশাকর্মী, মহিলা সাহায্যকারী নেই। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে বহির্বিভাগে মহিলা রোগী দেখা হবে কী করে? এখানে সাধারণ রক্ত পরীক্ষা বা এক্স-রেও হয় না। গত সেপ্টেম্বরে বারাসতের এক চিকিৎসক তথ্যের অধিকার আইনে পঞ্চায়েত দফতরের কাছ থেকে স্মার্ট ক্লিনিকের পরিকাঠামোর বিষয়ে জানতে চেয়েছিলেন। তার উত্তরে অক্টোবর মাসে পঞ্চায়েত দফতর জানিয়েছিল, স্মার্ট ক্লিনিকের পরিকল্পনা একেবারে প্রাথমিক স্তরে রয়েছে। অথচ, তার দু’মাসের মধ্যে জানুয়ারিতে কোনও পরিকাঠামোর বদল না ঘটিয়েই আচমকা জরুরি ভিত্তিতে কম্পিউটার কেনার নির্দেশিকা জারি হয় এবং গত ৪ এপ্রিল পঞ্চায়েত দফতর থেকে স্মার্ট ক্লিনিক সংক্রান্ত ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেশন প্রসিডিয়োর’ (এসওপি) প্রকাশিত হয়।

নাস্য-র পশ্চিমবঙ্গ শাখার আহ্বায়ক কেশবলাল প্রধানের কথায়, ‘‘স্মার্ট ক্লিনিকের জন্য আয়ুষ চিকিৎসা কেন্দ্রের পরিকাঠামো ও কর্মী না বাড়িয়ে শুধু কম্পিউটার কেনার যা তাড়া রাজ্য দেখাচ্ছে, তাতে আমাদের সন্দেহ বাড়ছে। এর আগে কেন্দ্রের প্রচুর টাকা রাজ্য খরচ করতে পারেনি। এখানেও কি টাকা খরচের খতিয়ান দেখানোর চাপ আছে? কাটমানির প্রসঙ্গও উড়িয়ে দিচ্ছি না।’’

বামপন্থী চিকিৎসকদের সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অব হেল্‌থ সার্ভিস ডক্টর্স’-এর তরফে মানস গুমটা বলেন, ‘‘শুধু কম্পিউটার কিনে ফেলে রাখলে কোনও ক্লিনিক স্মার্ট হয় না। এর মধ্যে অন্য রহস্য রয়েছে।’’ যদিও সব অভিযোগ উড়িয়ে পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার বলেন, ‘‘একটা নতুন জিনিস শুরু হওয়ার আগেই এত প্রশ্ন কাম্য নয়। পরিকাঠামো সবই হয়ে যাবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

AYUSH Infrastucture Medical Officer

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy