Advertisement
৩১ মার্চ ২০২৩

ঘুড়ি উড়িয়ে শিশুশ্রম বন্ধের বার্তা ময়দানে

এই ঘুড়ি অবশ্য বাজার থেকে কেনা নয়। কোনও ঘুড়িতে লেখা, ‘ছোট হাতে যন্ত্র না’, কোনওটায় ‘নরম হাতে কলম দাও’, কোনও ঘুড়িতে আবার লেখা ‘গ্লাস মাজব না, ক্লাসে যাব’।

ঘোড়া-ঘুড়ি: ঘুড়ি ওড়াতে ব্যস্ত সাদ্দাম। মঙ্গলবার, ময়দানে। নিজস্ব চিত্র

ঘোড়া-ঘুড়ি: ঘুড়ি ওড়াতে ব্যস্ত সাদ্দাম। মঙ্গলবার, ময়দানে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৩:০৩
Share: Save:

টাট্টু ঘোড়া নিয়ে প্রতিদিনের মতোই মঙ্গলবার সকালে সওয়ারির আশায় ময়দানে চক্কর কাটছিল বছর বারোর সাদ্দাম। কয়েক জন কচিকাঁচা ঘুড়ি ওড়াচ্ছিল কাছেই। এমন তো অনেকেই আসে ময়দানে। কেউ ক্রিকেট খেলে, কেউ ফুটবল। এই কচিকাঁচারা অবশ্য সাদ্দামকে হাত নেড়ে ডাকল। বলল, ‘‘এই ঘুড়ি ওড়াবি?’’ সানন্দে ঘোড়া ফেলে তাদের সঙ্গে যোগ দিল সাদ্দাম।

Advertisement

এই ঘুড়ি অবশ্য বাজার থেকে কেনা নয়। কোনও ঘুড়িতে লেখা, ‘ছোট হাতে যন্ত্র না’, কোনওটায় ‘নরম হাতে কলম দাও’, কোনও ঘুড়িতে আবার লেখা ‘গ্লাস মাজব না, ক্লাসে যাব’। যে সব খুদেরা এই ঘুড়ি ওড়াচ্ছে, তাদের কেউ কেউ বা তাদের পরিবারের কোনও সদস্য সাদ্দামের মতোই এক সময়ে শিশু শ্রমিক ছিল। ঘুড়িতে এই সব কথা লিখেছে তারাই। আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া পরিবার থেকে আসা ওই শিশুরা এখন কাজ ছেড়ে পড়াশোনা করছে। বিশ্বকর্মা পুজোর দিন (বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত মতে) এই শিশুরা ময়দানে ঘুড়ি ওড়ানোর পাশাপাশি শিশু শ্রম বন্ধের বার্তাও দিচ্ছে।

লেক টাউনের বাঙুর এলাকার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এই ছেলেমেয়েদের জন্য একটি স্কুল চালায়। সেই পড়ুয়ারাই এসেছিল ময়দানে ঘুড়ি ওড়াতে। ওই স্কুলের তরফে মহেন্দ্র আগরওয়াল বলেন, ‘‘ঘুড়ি তৈরি হয়েছে পুরনো খবরের কাগজ, র‌্যাপিং পেপার, আইসক্রিমের কাঠির মতো জিনিস দিয়ে। কয়েকটা ঘুড়িতে দুর্গার ছবি এঁকেছে ওই পড়ুয়ারাই।’’

এ রকমই এক পড়ুয়া দীপ মণ্ডল জানায়, তার বাবা রিকশা চালান। এক দাদা একটু বড় হয়েই দু’টো পয়সা আয় করতে কাজে নেমে পড়েছে। তবে দীপ বলে, ‘‘আমি দাদার মতো কাজ করব না। আমি পড়াশোনা করতে চাই। মাঝেমধ্যে ঘুড়িও ওড়াতে চাই।’’

Advertisement

বহু বছর পরে ঘুড়ি ওড়াতে পেরে খুশি আর ধরে না সাদ্দামের। সেই কবে পড়াশোনা ছেড়ে বিহার থেকে রুজির টানে চলে এসেছিল কলকাতায়। তার পর থেকে ঘোড়ার চালক হয়েই দিন কেটে যায়। এ দিন অবশ্য ঘুড়ি ওড়াতে ওড়াতে সে বলে, ‘‘রোজ ২০০ থেকে ৩০০ টাকা রোজগার হয় আমার। তবে আজ একটু বেশি ক্ষণ ময়দানে থাকব। ঘুড়ির টানে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.