Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ভ্যাপসা দিনে কটু গন্ধে মেট্রো সফর যেন বিভীষিকাময়!

এমন যখন দশা, তখন মিম ঘুরছে ফোনে ফোনে— লন্ডনের মেয়র না কি সুগন্ধী আর জলের বোতল নিয়ে সেখানের মেট্রোয় ওঠার নিদান দিয়েছেন।

অস্বস্তি: গরমে ভিড়ে ঠাসা মেট্রোয় গন্ধ-দূষণে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন।

অস্বস্তি: গরমে ভিড়ে ঠাসা মেট্রোয় গন্ধ-দূষণে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন।

সুচন্দ্রা ঘটক
শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৮ ০৩:১৪
Share: Save:

সকালে অফিসটাইমের মেট্রো। ঠেলাঠেলি-ধাক্কাধাক্কি। ভরা গরমে অথবা প্যাচপেচে বৃষ্টির দিনে এসি রেক এসেছে। ফলে পা রাখার জায়গা মিলুক বা না-ই মিলুক, নিজেকে কোনও মতে আঁটিয়ে নিতেই হবে। এমন অবস্থায় মহিলাদের সিটের পাশে কসমেটিক্সের গন্ধের মাঝেই হঠাৎ রসভঙ্গ। পাশে এসে হাত তুলে দাঁড়িয়েছেন দু’জন। দুর্গন্ধে টেকা দায়। এ দিকে, নাকে রুমাল চাপা দেওয়ার মতোও নড়াচড়ার জায়গা নেই।

রাত ১০টার মেট্রো। সকালের মতো ভিড় নয়, আবার যেমন ইচ্ছে দাঁড়ানোর জায়গাও নেই। পরপর দু’টি দলের আগমন। প্রথমটি চাঁদনি চক, পরেরটি সেন্ট্রাল। ঘাম, ধোঁয়া এবং পানীয়ের গন্ধে অস্থির দশা যাত্রীদের।

ভ্যাপসা গরমে মেট্রোয় প্রায় সকলেরই পরিচিত এমন অভিজ্ঞতা। বহু যাত্রীরই অভিযোগ, শুধু দুর্গন্ধে অসুস্থ হয়ে পড়ার ভয়ে খোলামেলা যান ব্যবহারের চেষ্টা করেন তাঁরা। কিন্তু প্রবল গরমে দিনভর খাটনির শেষে বাড়ি ফেরার পথে এসি মেট্রোর স্বস্তির লোভও চেপে ধরে। ফলে সুখ রাখি না স্বস্তি, সেই সঙ্কটে ভুগছে নিত্যযাত্রীদের বড় অংশ।

এমন যখন দশা, তখন মিম ঘুরছে ফোনে ফোনে— লন্ডনের মেয়র না কি সুগন্ধী আর জলের বোতল নিয়ে সেখানের মেট্রোয় ওঠার নিদান দিয়েছেন। কারণ, ঘামের গন্ধে মেট্রোয় যাতায়াতই দায়। ফলে যাঁরা অসুস্থ বোধ করবেন, তাঁদের রাখা দরকার জল আর যাঁরা অসুস্থতার কারণ হয়ে থাকেন, তাঁদের দরকার সুগন্ধী। সেই মিম ঘিরেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে কলকাতা মেট্রোর ব্যবস্থাপনা নিয়ে।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে এমনই মিম।

মেট্রোয় গন্ধ কি হয়ে উঠতে পারে অসুস্থতার কারণ? যাদবপুরে এক বেসরকারি সংস্থার কর্মী সোহিনী তালুকদার জানালেন, বার দুই তিনি ভিড় মেট্রোয় ঘামের গন্ধে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। মাথা ঘুরে, গা গুলিয়ে একাকার কাণ্ড। ডালহৌসিতে অফিস সেরে দমদম যেতে কোনও মতেই শেষ মেট্রোয় উঠতে চান না পেশায় ইঞ্জিনিয়ার রাহুল গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘শেষ মেট্রোয় গন্ধ-দূষণ বাড়ি ফেরার আগে শরীর ও মেজাজ, দুইয়ের পক্ষেই বড্ড অস্বস্তির।’’

গন্ধ-দূষণ একটি গুরুতর সমস্যা বলে মনে করেন পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ঘামের সঙ্গে দুর্গন্ধ মানে তো টক্সিক গ্যাসও বেরোচ্ছে। তা সহ্য করে অসুস্থ হওয়া অস্বাভাবিক নয়।’’ তবে তিনি এ কথাও মনে করান, এই গন্ধ বিচারে গিয়ে মেট্রো যাত্রা সুখের কখনও করে ফেলা সম্ভব নয়। কারণ, দুর্গন্ধই শুধু দূষণের কারণ, এ ভাবনা মোটেই ঠিক নয়। অনেকে অতি ভাল গন্ধেও অসুস্থ বোধ করেন। ফলে যা প্রয়োজন, তা হল বাতাসের মানে নজর দেওয়া। তা দিচ্ছেন কি মেট্রো কর্তৃপক্ষ, প্রশ্ন সুভাষবাবুর?

মেট্রোর জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘রোজ মেট্রো চালুর আগে ব্লোয়ার পরীক্ষা করে নেওয়া হয়।’’ যদিও সেই পরীক্ষাই মান নির্মাণের জন্য যথেষ্ট কি না, তা নিয়ে চিন্তিত নন কর্তৃপক্ষ। শুধু ইন্দ্রাণীদেবী জানান, অভিযোগ থাকলে বলা যায় স্টেশন মাস্টারের ঘরে।

অর্থাৎ, নিজেদের খেয়াল নিজেদেরই রাখতে হবে। সচেতন হতে হবে যাতে অন্যের অসুবিধার কারণ না হন কেউ। অসুবিধায় পড়লে কী করতে হবে, তা-ও খেয়াল রাখতে হবে। কারণ চিকিৎসকেরা জানান, দুর্গন্ধে বেশি ক্ষণ কাটালে তা হতে পারে গুরুতর অসুস্থতার কারণ। চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদার বলেন, ‘‘ঘামের সঙ্গে বেরোয় শরীরের বর্জ্য। তাতে অনেক ক্ষেত্রে ক্ষতিকর হাইড্রো কার্বন থাকে। সেই সব হাইড্রো কার্বন ক্যানসারেরও কারণ হয়।’’

চিকিৎসকেদের উপদেশ, কলকাতার আবহওয়ায় অবশ্যই বারবার স্নান করা প্রয়োজন। দরকার হাল্কা খাবার এবং সুতির পোশাক। শুধু দুর্গন্ধ রোধে নয়, সুস্থ থাকার জন্যও জীবনযাত্রায় নজর দেওয়া জরুরি।

আর যাঁরা অসুস্থ বোধ করেন, তাঁদেরও সচেতন হওয়া দরকার। চিকিৎসকেরা বলছেন, অসুবিধা হলেই পরের স্টেশনে নেমে পড়তে হবে। একটু খোলা হওয়া না পেলে এমন অবস্থায় কেউ জ্ঞানও হারাতে পারেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Metro Passengers Rain Bad Smell
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE