Advertisement
E-Paper

মেট্রোয় চড়তে গিয়েই ধমক, পাশের কামরায় যান

‘ইস কামরে মে সাহাব হ্যায়’ — মেট্রোয় যাত্রীদের পথ আটকে বললেন উর্দিধারী। যাত্রীরা হতবাক। এ বার খানিক তাচ্ছিল্য, ‘‘যান, যান। পাশের কামরায় চলে যান।’’

সুনন্দ ঘোষ

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৩৯
অঙ্কন: সুমিত্র বসাক

অঙ্কন: সুমিত্র বসাক

‘ইস কামরে মে সাহাব হ্যায়’ — মেট্রোয় যাত্রীদের পথ আটকে বললেন উর্দিধারী।

যাত্রীরা হতবাক।

এ বার খানিক তাচ্ছিল্য, ‘‘যান, যান। পাশের কামরায় চলে যান।’’

সোমবার সকালে অফিসের ব্যস্ত সময়। মহাত্মা গাঁধী রোড স্টেশন থেকে দক্ষিণে যেতে বেলা ১১টা ৩৩ মিনিটের নির্ধারিত মেট্রোর অপেক্ষায় বহু যাত্রী। প্রায় ১১টা ৩৬ মিনিটে একটি বাতানুকুল ট্রেন এসে দাঁড়াল প্ল্যাটফর্মে। চালকের ঠিক পিছনের কামরাটিতে ওঠার জন্য ট্রেনের প্রথম দু’টি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বেশ কয়েক জন যাত্রী।

অফিসের এই ব্যস্ত সময়ে সাধারণত মেট্রোয় ভিড় একটু বেশিই থাকে। ট্রেনের দ্বিতীয় দরজা খুলতে দেখা গেল, কিছু যাত্রী থাকলেও কামরা ভিড়ে ঠাসা নয়। তবু গেট আগলে দাঁড়িয়ে প্রায় ছ’সাত জন আরপিএফ (রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্স) অফিসার-জওয়ান। কামরায় উঠতে গেলে তাঁরাই বাধা দেন যাত্রীদের। এক জন বলেন, ‘‘সামনে চলে যান।’’

স্টেশনে বড় জোর ১০-১৫ সেকেন্ড দাঁড়ায় ট্রেন। তার পরেই বন্ধ হয়ে যায় কামরার দরজা। পড়িমরি করে যাত্রীরা ছুটলেন একেবারে সামনে, প্রথম দরজার দিকে। সেখানেও একই হাল। যাত্রীদের হটিয়ে দিলেন খাকি উর্দির জওয়ানেরা।

এ বার লক্ষ্য তৃতীয় দরজা। ফের ছুট দিলেন যাত্রীরা। সেখানে কামরার লোকই দরজায় ঝুলছেন। নতুন লোক ভিতরে ঢুকবেন কী করে!

তৃতীয় দরজাও বন্ধ করা যাচ্ছিল না। তাই বাড়তি কিছু সময় স্টেশনে দাঁড়িয়ে ছিল ওই ট্রেনটি। ইতিমধ্যে দ্বিতীয় দরজার কাছে ফিরে আপাত ফাঁকা সেই কামরায় ওঠার জন্য কাকুতিমিনতি জুড়ে দিয়েছেন বেশ কয়েক জন যাত্রী। যা শুনে এস কে পান্ডে নামে এক অফিসার তাঁদের বলেন, ‘‘কামরে মে সাহাব হ্যায়। দুসরে কামরে মে যাও।’’

একটু পরেই বন্ধ হয়ে যায় ট্রেনের দরজা। অপেক্ষমাণ যাত্রীদের মধ্যে ছিলেন বেসরকারি সংস্থার কর্মী সোহম সাউ। তাঁর এবং আরও বেশ কয়েক জনের চোখের সামনে দিয়ে চলে যায় ট্রেনটি।

মেট্রো রেলের চিফ সিকিউরিটি কমিশনার বিনোদ ডাকা-র সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মেট্রো রেলের ৩২তম বার্ষিকী উপলক্ষে এ দিন ওই কামরায় পথশিশুদের নিখরচায় ভ্রমণ করানো হচ্ছিল। মেট্রোর উচ্চপদস্থ কর্তারা সেখানে ছিলেন। কমিশনারের কথায়, ‘‘ভিড় বাড়লে বাচ্চাদের কষ্ট হবে ভেবেই সাধারণ যাত্রীদের ওই কামরায় উঠতে বারণ করা হয়েছিল।’’

কিন্তু ওই ভাবে? বিনোদ ডাকা বলেন, ‘‘আমাদের অফিসার কোনও যাত্রীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে থাকলে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।’’ প্রশ্ন উঠেছে, পরিকল্পনার অভাব নিয়েও। আরপিএফ-এর সিনিয়র কম্যান্ড্যান্ট দিবাকর খান বলেন, ‘‘শোভাবাজার থেকে বাচ্চাদের নিয়ে কবি সুভাষ স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। কামরায় ছিল প্রায় ৫০টি শিশু। তবে খবরটা আমরা যদি আগে থেকে যাত্রীদের জানিয়ে দিতাম, তা হলে এই সমস্যা হতো না।’’

এমনকী, বিশেষ ট্রেনটি প্রতিটি প্ল্যাটফর্মে ঢোকার আগে যদি ঘোষণা করা হত, তা হলে যাত্রীরা প্রথম কামরার সামনে দাঁড়াতেনই না। প্ল্যাটফর্মে কর্তব্যরত আরপিএফ জওয়ানদেরও আগে থেকে জানা থাকলে তাঁরাও যাত্রীদের আগে থেকেই সতর্ক করতে পারতেন। সে ক্ষেত্রে ট্রেনটির প্রথম কামরার জন্য কোনও যাত্রীই অপেক্ষা করতেন না।

কিন্তু কিছুই না করে অত্যন্ত রুক্ষ, কর্কশ ভাবে যাত্রীদের ওই কামরায় উঠতে বাধা দিয়ে গিয়েছেন আরপিএফ অফিসারেরা। যাত্রীদের বিস্ময় সেখানেই!

নিজেদের ভুল অবশ্য মেনে নিয়েছেন মেট্রোর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার প্রত্যুষ ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘ট্রেনটির বিষয়ে আগে থেকে ঘোষণা করা উচিত ছিল আমাদের। যাত্রীদের অসুবিধার জন্য আমরা দুঃখিত। ভবিষ্যতে এ ধরনের কোনও অনুষ্ঠান হলে এ বিষয়টি মাথায় রাখা হবে।’’

Police metro controversy
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy