Advertisement
E-Paper

শতবর্ষেও উজ্জ্বল মাইকেল লাইব্রেরি

শতবর্ষ পেরলো খিদিরপুরের মাইকেল মধুসূদন লাইব্রেরি। সেকালের বন্দর এলাকা খিদিরপুরের আর্থসামাজিক দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়া মানুষের মধ্যে বইপড়ার আগ্রহ এবং সাংস্কৃতিক চর্চা বাড়াতে এই গ্রন্থাগারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। গ্রন্থাগারের সাধারণ সম্পাদক নব বন্দ্যোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘‘শতবর্ষ উপলক্ষে কোনও সরকারি অনুদান বা সাহায্য না মিললেও লাইব্রেরির সদস্যরাই উদ্যোগী হয়ে এলাকার মানুষের সাহায্যে অর্থ সংগ্রহ করে বছরভর নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করেছেন।

বিভূতিসুন্দর ভট্টাচার্য

শেষ আপডেট: ১৬ মে ২০১৫ ০০:২৫
স্বাগত পাঠক। —নিজস্ব চিত্র।

স্বাগত পাঠক। —নিজস্ব চিত্র।

শতবর্ষ পেরলো খিদিরপুরের মাইকেল মধুসূদন লাইব্রেরি।

সেকালের বন্দর এলাকা খিদিরপুরের আর্থসামাজিক দিক দিয়ে পিছিয়ে পড়া মানুষের মধ্যে বইপড়ার আগ্রহ এবং সাংস্কৃতিক চর্চা বাড়াতে এই গ্রন্থাগারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। গ্রন্থাগারের সাধারণ সম্পাদক নব বন্দ্যোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘‘শতবর্ষ উপলক্ষে কোনও সরকারি অনুদান বা সাহায্য না মিললেও লাইব্রেরির সদস্যরাই উদ্যোগী হয়ে এলাকার মানুষের সাহায্যে অর্থ সংগ্রহ করে বছরভর নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করেছেন। রাজা রামমোহন রায় ফাউন্ডেশন থেকে বার্ষিক কিছু অনুদান এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের গ্রন্থালয় বিভাগ থেকে বার্ষিক ১২০০০ টাকা পাওয়া যায়। এতে লাইব্রেরির সারা বছরের খরচ ওঠে না। গ্রন্থাগারটি চলে মূলত এলাকার মানুষের আর্থিক সাহায্য এবং বিভিন্ন প্রকার সহায়তায়।’’

তবে বদলে যাওয়া সময়ে মানুষ আজ কতটা গ্রন্থাগারমুখী?
এই গ্রন্থাগারের সঙ্গেই বা তাঁদের যোগাযাগ কতটা?

নববাবু জানালেন, আগের তুলনায় বেশ ভালো। বর্তমানে এই গ্রন্থাগারের সদস্য সংখ্যা ৫০০-এর বেশি। গড়ে প্রতি দিন কম করে ২০টি বইয়ের লেনদেন হয় এখানে। এ ছাড়াও ছোটদের গ্রন্থাগারমুখী করে তুলতে ২০০১ থেকে প্রতি বছর আয়োজন করা হয় হট্টমেলা। এতে গ্রন্থাগারের সদস্যরা যেমন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে থাকেন। তেমনই ছোটদের রচনাগুলি নিয়ে প্রকাশিত হয় হট্টমেলা স্মরণিকা।

বর্তমানে এই গ্রন্থাগারে রয়েছে ২২ হাজারেরও বেশি বই। এর মধ্যে ছোটদের বইয়ের সংখ্যা সাড়ে তিন হাজারের বেশি। গ্রন্থাগারে যোগ হয়েছে কম্পিউটার বিভাগও।

১৯১৫ সালে খিদিরপুরের কিছু তরুণ বইপ্রেমিক মাইকেল মধুসূদন দত্তের নামে ‘মাইকেল লাইব্রেরির’ পত্তন করেছিলেন। লাইব্রেরিটির সূচনা হয়েছিল ৪৬/২ মনসাতলা লেনের বাড়িতে। দু’বছরের মধ্যে ঠিকানা পরিবর্তন করে লাইব্রেরি স্থানান্তরিত হয়েছিল ডেন্টমিশন রোডে। গ্রন্থাগারের নিজস্ব ভবন তৈরির আগে মোট চারবার বাড়ি বদল হয়েছিল।

১৯৪০ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের আশীর্বাদ নিয়ে গ্রন্থাগারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল। সেই সময় কলকাতা পুরসভার সহায়তায় ভবন তৈরির জন্য পাঁচ কাঠা জমি পাওয়া গিয়েছিল। এর পরে ১৯৪৮-এর ২০ জুন নিজস্ব ভবনে গ্রন্থাগারটি স্থানান্তরিত করা হয়। ইতিমধ্যে গ্রন্থাগারের নাম পরিবর্তন করে হয়েছে মাইকেল মধুসূদন লাইব্রেরি। ১৯৪৮ সালের ১ জুলাই নতুন ভবনের দ্বারোদ্ঘাটন করেন আইনবিদ ও সাহিত্যিক অতুলচন্দ্র গুপ্ত। পরে ১৯৬১ সালে শুরু হয় দোতলা তৈরির কাজ। এই সময় পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সাহায্য মিলেছিল।

এই গ্রন্থাগারের আর এক আকর্ষণ মাইকেল মধুসূদনের জন্মদিনে মধুমিলন উত্‌সব। এর একটি ইতিহাস আছে। স্বদেশী যুগে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল অনুশীলন সমিতির কর্মকাণ্ড। খিদিরপুরের মনসাতলা ও বেড়াপুকুর অঞ্চলে তাঁদের গোপন আস্তানা ছিল। এক দিন সন্ধ্যায় লাইব্রেরিতে পুলিশি তল্লাশি হওয়ায় বেশ কিছু বইও পুলিশ বাজেয়াপ্ত করেছিল। পরে বই ফেরত পাওয়া গেলেও দেখা দিল অন্য এক সমস্যা। এলাকার মানুষ এই লাইব্রেরিকে রাজনীতির কেন্দ্র মনে করায় পাঠক সংখ্যা কমতে লাগল।
এই ভুল ধারণা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য লাইব্রেরির সভ্যবৃন্দ এক সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন যার নাম দেওয়া হয়েছিল ‘মধুমিলন উত্‌সব’। ১৯১৬ সালে এই অনুষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন আশুতোষ মুখোপাধ্যায়।
মাঝে কিছু বছর এটি বন্ধ থাকলেও সেই উৎসব আবার শুরু হয়েছে পুরনো সেই ঐতিহ্যকে মনে রেখে। এখনও সদস্য বাড়ানোই এর মূল উদ্দেশ্য।

michelle library bibhuti sundar bhattacharya khidirpur book
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy