Advertisement
E-Paper

পালিকা মায়েদের কান্না ভুলতে পারছেন না জননী

পালিকা মায়েদের আশ্রয় ছেড়ে জন্মদাত্রী মায়ের কোলে চেপেছিল ৪৮ ঘণ্টা আগেই। সোমবার শেষ পর্যন্ত আইনি পথে দু’বছরের মেয়েকে ফিরে পেলেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ফুটপাথবাসী মহিলা। এ দিন দুপুরে ইলিয়ট রোডে শিশুকল্যাণ সমিতির অফিসে ওই মহিলা যখন মেয়েকে ফিরে পাওয়ার নির্দেশ শুনছেন, তখন একরত্তি শিশুটি ঘুমিয়ে কাদা!

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৫ ০২:৪২

পালিকা মায়েদের আশ্রয় ছেড়ে জন্মদাত্রী মায়ের কোলে চেপেছিল ৪৮ ঘণ্টা আগেই। সোমবার শেষ পর্যন্ত আইনি পথে দু’বছরের মেয়েকে ফিরে পেলেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ফুটপাথবাসী মহিলা। এ দিন দুপুরে ইলিয়ট রোডে শিশুকল্যাণ সমিতির অফিসে ওই মহিলা যখন মেয়েকে ফিরে পাওয়ার নির্দেশ শুনছেন, তখন একরত্তি শিশুটি ঘুমিয়ে কাদা!

পুলিশ জানায়, ২৬ ফেব্রুয়ারি মেডিক্যাল কলেজের কাছে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ের ফুটপাথবাসী ওই মহিলার বছর দুয়েকের কন্যাসন্তান চুরি যায়। শিশু চুরির অভিযোগে প্রথমে মুজফফর খান ওরফে মুজফফর মণ্ডলকে গ্রেফতার করে বৌবাজার থানা। পরে সেই সূত্র ধরেই শুক্রবার ছত্তীসগঢ়ের রায়পুরের বৃহন্নলাদের আড্ডা থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশ। তবে উদ্ধারকারী অফিসারেরা অবশ্য বলছেন, ওই বৃহন্নলারা শিশুটিকে চুরি করেননি। বরং শিশুচোর মুজফফরের কবল থেকে উদ্ধার করে রীতিমতো সন্তানস্নেহেই আগলে রেখেছিল মেয়েটিকে।

এ দিন শিশুকল্যাণ সমিতির অফিসে দাঁড়িয়েও সেই বৃহন্নলাদের বাৎসল্যের কথাই বলছিলেন মহিলা। তিনি জানান, সত্যিই ওটা তার শিশু কি না, তা আগে যাচাই করে নেয় বৃহন্নলাদের দলটি। মেয়েটিকে যে সন্তানস্নেহেই আগলে রেখেছিলেন ওঁরা, তা-ও ফুটে উঠেছে ওই মহিলার কথায়। কলকাতার ওই মহিলার সাড়ে তিন বছরের আরও একটি মেয়ে রয়েছে। মহিলার কথায়, “বড় মেয়ের কথা শুনে ওই বৃহন্নলারা বলেন, ছোট মেয়েকে ওরাই লালনপালন করতে চান। সন্তানসুখ তো ওদের মেলে না। কিন্তু এত কষ্ট করে খুঁজে পাওয়ার পরে আমি কি মেয়েকে ছেড়ে দিতে পারি!” তিনি জানাচ্ছেন, ছোট মেয়েকে ফেরত নিয়ে আসার সময়ে ওই বৃহন্নলাদের কান্না এখনও ভুলতে পারছেন না।

রায়পুর থেকে এ দিন সকালেই ওই শিশু এবং তার বাবা-মাকে নিয়ে হাওড়া স্টেশনে পৌঁছয় পুলিশের দলটি। শিশুটি এবং তার বাবা-মাকে নিয়ে যাওয়া হয় বৌবাজার থানায়। দুপুরে খাওয়া সেরে সেখান থেকেই এক পুলিশ তাঁদের শিশুকল্যাণ সমিতির অফিসে নিয়ে যায়।

তবে হারানো ছোট মেয়েকে ফিরে পাওয়ার আইনি পথ খুব সহজ হয়নি। শিশুকল্যাণ সমিতি সূত্রের খবর, ওই মহিলার কোনও পরিচয়পত্র নেই। মেয়েটি যে তাঁর, তেমনও কোনও কাগজপত্র নেই। শেষে শিশুকল্যাণ সমিতির এক কর্মীকে মেডিক্যাল কলেজ সংলগ্ন ওই ফুটপাথে পাঠানো হয়। তিনি গিয়ে ফুটপাথের অন্যান্য বাসিন্দার কাছ থেকে বিষয়টি যাচাই করে এসে রিপোর্ট জমা দেন। তার ভিত্তিতেই শিশুটিকে তার জন্মদাত্রী মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেয় সমিতি। কলকাতার শিশুকল্যাণ সমিতির সদস্য অমিত ভট্টাচার্য জানান, পরিচয়পত্র না দেখানোয় শিশুটিকে ফেরত দেওয়া সম্ভব হত না। কিন্তু ফুটপাথবাসীদের সাধারণত পরিচয়পত্র থাকে না। “লোক পাঠিয়ে যাচাই করে দেখা হয়, উদ্ধার হওয়া শিশুটি সত্যিই মহিলার সন্তান কি না। না হলে শিশুটিকে হোমে পাঠাতে হত। সেটা আমরা চাইনি,” বলছেন অমিতবাবু।

লালবাজার সূত্রের খবর, বৌবাজার থানার অফিসার-কর্মীরা যে ভাবে শিশুটিকে উদ্ধার করেছেন, তার প্রশংসা করেছেন কলকাতা পুলিশের শীর্ষকর্তারা। ডিসি (সেন্ট্রাল) দেবেন্দ্রপ্রকাশ সিংহ এ দিন জানান, বৌবাজার থানার এসআই মানব দে-র নেতৃত্বে উদ্ধারকারী দলটিকে পুরস্কৃত করা হবে।

raipur eunach child abduction
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy