Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Dengue

ডেঙ্গি-সচেতনতার বার্তা মুখে, রাস্তার ভ্যাটেই অবাধে বংশবৃদ্ধি মশার

বিধাননগর পুর এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ইতিমধ্যেই সাড়ে পাঁচশো ছুঁয়েছে। গত সপ্তাহের রিপোর্টে জানা গিয়েছিল, সাত দিনে সংক্রমিত হয়েছেন ২৪৫ জন।

অস্বাস্থ্যকর: আবর্জনা ফেলার কথা কম্প্যাক্টরে। অথচ, রাস্তার ধারে ভ্যাটে আবর্জনা ফেলছেন এক পুরকর্মীই। রাজারহাটের কালী পার্ক এলাকায়।

অস্বাস্থ্যকর: আবর্জনা ফেলার কথা কম্প্যাক্টরে। অথচ, রাস্তার ধারে ভ্যাটে আবর্জনা ফেলছেন এক পুরকর্মীই। রাজারহাটের কালী পার্ক এলাকায়। নিজস্ব চিত্র

প্রবাল গঙ্গোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২২ ০৭:১৩
Share: Save:

দৃশ্য এক: রাস্তার ধারে স্তূপাকৃতি আবর্জনা। দুর্গন্ধ তো বেরোচ্ছেই। সেই আবর্জনা ধরে টানাটানি করছে কুকুর-গরুও। কী নেই তার মধ্যে? ডাবের খোলা, কাগজের কাপ, ভাঁড়, প্লাস্টিকের ভাঙা বোতল— সব রয়েছে। যার মধ্যে বৃষ্টির জল জমে ডেঙ্গির মশার লার্ভা জন্মানোর প্রভূত আশঙ্কা। এই ছবি রাজারহাট রোডের উপরে কালীপার্কের কাছে ডিরোজ়িয়ো কলেজ সংলগ্ন এলাকায়।

দৃশ্য দুই: ফাঁকা প্লটে দাঁড় করানো রয়েছে পরিত্যক্ত লরি। আশপাশে ছড়িয়ে প্লাস্টিকের বোতল, চায়ের কাপ, থার্মোকলের থালা। কোথাও আবার ভ্যাটে জমে আছে জঞ্জাল। এই ছবি সল্টলেকের উন্নয়ন ভবন এবং সেচ ভবন চত্বরের পিছনে।

বিধাননগর পুর এলাকায় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ইতিমধ্যেই সাড়ে পাঁচশো ছুঁয়েছে। গত সপ্তাহের রিপোর্টে জানা গিয়েছিল, সাত দিনে সংক্রমিত হয়েছেন ২৪৫ জন। আজ, বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য দফতরের নতুন গণনায় সেই সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুজো কমিটিগুলিকে তাদের মণ্ডপের গেট এবং তোরণে ডেঙ্গি নিয়ে সচেতনতার প্রচার চালাতে বলেছেন মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী।

অবস্থা ক্রমশ ঘোরালো হতে থাকায় বুধবার বিধাননগর পুরসভায় বৈঠকে বসেন পুর কর্তৃপক্ষ। চিকিৎসকদের পাশাপাশি হাজির ছিলেন বিভিন্ন ওষুধের দোকানের মালিকেরাও। পুরসভা সূত্রের খবর, ওষুধের দোকানগুলিকে বলা হয়েছে, কেউ প্যারাসিটামল কিনতে এলে তাঁর নাম ও অন্যান্য তথ্য নথিভুক্ত করতে হবে। পরে তা জানাতে হবে পুরসভায়।

পুরবাসীদের অভিযোগ, রাস্তার ধারে ও ফাঁকা জমিতে আবর্জনা পড়ে থাকলেও তা সাফ করা হচ্ছে না। নির্মীয়মাণ বাড়ি, ফাঁকা জমিতে গজিয়ে ওঠা ঝুপড়িতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মানুষের বসবাস— এই সব কিছুকে ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্তের কারণ বলে মনে করছেন তাঁরা। বাসিন্দাদের প্রশ্ন, এই দিকগুলিতে পুর কর্তৃপক্ষের নজর পড়বে কবে? রাজারহাটের কালীপার্ক এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, আগে ওই এলাকায় একটি ভ্যাটে স্থানীয়েরা আবর্জনা ফেলতেন। এখন পুরসভার গাড়ি এসেও সেখানেই ময়লা ফেলছে।

সল্টলেকের অফিসপাড়া ঘুরেও নজরে পড়েছে আবর্জনা জড়ো হয়ে থাকার চিত্র। বিধাননগর (উত্তর) থানা লাগোয়া সেচ ভবনের পিছন দিকে কিছুটা অংশে ভ্যাটের মধ্যে প্লাস্টিক-সহ নানা জঞ্জাল জমে থাকতে দেখা গিয়েছে। উন্নয়ন ভবনের পিছনে আরক্ষা ভবনের পাশের মাঠে পড়ে আছে থার্মোকলের থালা, প্লাস্টিকের কাপ-সহ জল জমার নানা উপকরণ।

বিধাননগর পুরসভা সূত্রের খবর, জঞ্জাল সাফ করার জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে পৃথক ভাবে কর্মী নিযুক্ত আছেন। এর বাইরে রয়েছে কেন্দ্রীয় ভাবে আবর্জনা সাফাইয়ের দল। তা সত্ত্বেও ডেঙ্গির মরসুমে রাস্তাঘাটে ও বহু ফাঁকা জমিতে আবর্জনা পড়ে থাকছে।

কালীপার্কের কাছে ওই ভ্যাটটি বিধাননগর পুরসভার চার নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়ে। স্থানীয় কাউন্সিলর শাহনওয়াজ আলি মণ্ডলের দাবি, ‘‘পুরসভা নিয়মিত আবর্জনা পরিষ্কার করা সত্ত্বেও স্থানীয়দের একাংশ ওখানে ময়লা ফেলেন। কিছুতেই এই প্রবণতা ঠেকানো যাচ্ছে না।’’ আবার বিধাননগরের অফিসপাড়া যেখানে, সেই ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তথা পুর চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্তের দাবি, ‘‘সরকারি ভবনগুলি রক্ষণাবেক্ষণ এবং সেখান থেকে জঞ্জাল সাফ করার দায়িত্ব পূর্ত দফতরের। আমরা তাদের সঙ্গে কথা বলছি।’’ অন্য দিকে, বিধাননগর পুরসভার মেয়র পারিষদ (জঞ্জাল অপসারণ) দেবরাজ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বিশ্বকর্মা পুজোর কারণে কর্মী সঙ্কট থাকায় কিছু জায়গায় আবর্জনা জমে রয়েছে। তা শীঘ্রই পরিষ্কার করা হবে। জঞ্জাল অপসারণের ক্ষেত্রে বরোভিত্তিক নির্দিষ্ট পরিকল্পনাও করা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Dengue KMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE