Advertisement
E-Paper

মেয়ের মৃতদেহ ঘরে আগলে মা বসে সাত দিন

সকাল থেকেই দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ পড়শিরা। বেলার দিকে গন্ধের উৎস খুঁজতে নেমে তাঁরা বুঝতে পারেন, বন্ধ ফ্ল্যাটেই কিছু রয়েছে। যার ভাঙা জানলার ফাঁক দিয়ে দুর্গন্ধ আসছে। সন্দেহ হওয়ায় খবর দেন পুলিশে।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০১৫ ০০:২৬

সকাল থেকেই দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ পড়শিরা। বেলার দিকে গন্ধের উৎস খুঁজতে নেমে তাঁরা বুঝতে পারেন, বন্ধ ফ্ল্যাটেই কিছু রয়েছে। যার ভাঙা জানলার ফাঁক দিয়ে দুর্গন্ধ আসছে। সন্দেহ হওয়ায় খবর দেন পুলিশে।

পরে পুলিশ এসে ফ্ল্যাটের দরজা খুললে দেখা যায়, ঘরের মেঝেতে পড়ে পচাগলা এক মহিলার দেহ। আর তাঁর সামনে বসে হাত জোড় করে কেঁদে চলেছেন এক বৃদ্ধা। কোনও প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন না তিনি। শনিবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটে টালিগঞ্জের নেতাজিনগর এলাকায়।

পুলিশ জানায়, মৃতার নাম মাম্পি নাথ (৪৩)। মায়ের নাম জলি নাথ। মা এবং মেয়ে নেতাজিনগরের এক তিনতলা আবাসনের দোতলায় থাকতেন। পড়শিরা জানান, জলিদেবীকে মাঝেমধ্যে রাস্তায় দেখা গেলেও পাঁচ বছরে কোনও দিন তাঁর মেয়ে মাম্পিকে দেখা যায়নি। তদন্তকারীদের অনুমান, অন্তত দিন সাতেক আগেই মৃত্যু হয়েছে মাম্পির।

পড়শিরা জানান, বছর দশেক আগে নেতাজিনগরে ফ্ল্যাট কিনে বসবাস শুরু করেন জলিদেবীরা। মা-মেয়ে নিজেদের মতোই থাকতেন। পাড়ায় বা নিজেদের আবাসনের বাসিন্দাদের সঙ্গেও মিশতেন না। তাঁর স্বামীকেও কোনও দিন দেখা যায়নি। স্থানীয় বাসিন্দা আনন্দরূপ ভদ্র বলেন, ‘‘গত পাঁচ দিন ধরে এক বারের জন্য জলিদেবী ঘর থেকে বেরোননি। পুলিশ আসার পরে দরজা খোলেন।’’ মাস ছয়েক আগে জলিদেবীদের ঘরে আগুন লেগেছিল। তখন পুলিশ ও দমকলকর্মীরা এসে একই ভাবে দরজা খুলেছিলেন বলে জানান বাসিন্দারা।

জুনে রবিনসন স্ট্রিটের একটি বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছিল দেবযানী দে নামে এক মহিলার কঙ্কাল। তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে, দিদির মৃত্যু সংবাদ কাউকে না দিয়ে ঘরের মধ্যে ছ’মাস ধরে রেখে দিয়েছিলেন তাঁর ভাই পার্থ দে। মাস খানেক আগে নৈহাটিতে বড় দাদার মৃতদেহ সৎকার না করে দিন সাতেক বাড়িতে রেখে দিয়েছিলেন ভাই আর বোন। সম্প্রতি নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটনে ভারতীয় বংশোদ্ভুত এক পরিবারে মৃত স্বামীর দেহ পাঁচ মাস ধরে আগলে রেখে দিয়েছিলেন স্ত্রী। পরে পুলিশ সেই দেহ উদ্ধার করে।

নেতাজিনগরের ঘটনার তদন্তকারীরা জানান, ঘরের মেঝেতে ছিল মাম্পির দেহ। তাঁর একটি চোখ খোবলানো ছিল। দেহ ফুলে গিয়েছিল। দেহের চারপাশে মাছি আর পোকা কিলবিল করছিল। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, মা-মেয়ে দু’জনেই মানসিক ভারসাম্যহীন। আবাসনের বাসিন্দা রেখা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দশ বছর ধরে এক বাড়িতে আছি। অথচ মা-মেয়ের সঙ্গে এক দিনও কথা হয়নি। সব সময়ে ঘরের দরজা বন্ধ থাকত।’’ মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যালের কথায়, ‘‘মনোবিজ্ঞানের ভাষায় এই ধরনের সম্পর্ককে বলা হয় ‘সিমবায়োটিক রিলেশন।’ মা এই ক্ষেত্রে সন্তানের থেকে নিজের অস্তিত্বকে আলাদা করে ভাবতে পারেন না। দু’জনের মধ্যে সর্ম্পকের ক্ষেত্রে পৃথক অস্তিত্ব গড়ে না ওঠার জন্যই এই ধরনের সমস্যা হয়।’’

state news crime murder mother live with dead body
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy