E-Paper

চিকিৎসার অপেক্ষায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল ছেলে! প্রশাসন তৎপর হলে বাঁচাতে পারতাম: মৃত ছাত্রের মা

দুর্ঘটনার পরে চিকিৎসার অপেক্ষাতেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল ছেলে। নিজের সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানালেন মা।

নুরজাহান পাইক (দুর্ঘটনায় মৃত ছাত্রের মা)

শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৫:৩৩
শোকার্ত আয়ুষ পাইকের মা l

শোকার্ত আয়ুষ পাইকের মা l —নিজস্ব চিত্র।

বাগুইআটির একটি বেসরকারি স্কুলের মর্নিং সেকশনে পড়ত আমার ছোট ছেলে। ওই স্কুলেরই ডে সেকশনে আমার বড় ছেলে পড়ে। মঙ্গলবার বড় ছেলেকে স্কুলে রেখে ছোট ছেলেকে স্কুটারে চাপিয়ে বাড়ি ফিরছিলাম। তখন বেলা ১১টা। উল্টোডাঙার হাডকো মোড় সংলগ্ন সল্টলেকের দু’নম্বর গেটের কাছে রাস্তার একেবারে ধার দিয়ে আসছিলাম। একটি বাস বেপরোয়া গতিতে পিছন দিক থেকে আসছিল। দু’টি বাস রেষারেষি করছিল কিনা বলতে পারব না। বাসটি হঠাৎ আমার স্কুটারে ধাক্কা মারল। ছোট ছেলে পিছনে বসেছিল। সামনে ছিল আমার দু’বছরের ভাইঝি। বাসের ধাক্কায় তিন জনই রাস্তায় পড়ে গেলাম। আমার তেমন চোট লাগেনি। কিন্তু ছেলে আয়ুষের আঘাত গুরুতর ছিল। ওর জ্ঞান ছিল না। ভাইঝিরও ভালই চোট লেগেছিল। ওই অবস্থায় ছেলে প্রায় ১৫ মিনিট রাস্তায় পড়ে ছিল। ভাইঝি খুব কান্নাকাটি করতে থাকে। কাছাকাছি পুলিশ থাকলেও কেউ এগিয়ে আসেননি।

খবর পেয়ে আমার বাড়ির লোকেরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান। স্থানীয় এক জন অটোচালক আমাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন। তাঁর অটোয় করে ছেলেকে প্রথমে উল্টোডাঙার একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে ওর মাথায় ব্যান্ডেজ বেঁধে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু ওই নার্সিংহোমে ছোটদের আইসিইউ নেই। তাই তারাই অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করে দেয়। সেখান থেকে ছেলেকে নিয়ে আমরা ফুলবাগানের বি সি রায় শিশু হাসপাতালে যাই। কিন্তু সেখানে আমাদের তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা কিছুতেই ছেলেকে ভর্তি নিতে চাননি। ওঁরা জানিয়েছিলেন, ছেলের মাথায় যে ধরনের আঘাত লেগেছে, সেই ধরনের আঘাতের চিকিৎসার পরিকাঠামো বি সি রায়ে নেই।

উল্টোডাঙার নার্সিংহোমে এসে বিধাননগরের পুলিশ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। তারা কয়েক বার আমাকে ফোনও করেছিল। অথচ, বি সি রায় হাসপাতালে ছেলেকে ভর্তি করানোয় সাহায্য করতে পুলিশ এগিয়ে আসেনি। ছেলেকে ভর্তি করানোর জন্য বাধ্য হয়ে বিধাননগর পুলিশের দেওয়া মোবাইল নম্বরে ফোন করি। কিন্তু ফোনে আমাকে জানানো হয়, ওই শিশু হাসপাতাল তাদের এলাকাভুক্ত নয়। ছেলে তখন প্রায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। শেষে বেলেঘাটার একটি নার্সিংহোমে নিয়ে গেলে সেখানকার চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানান, ছেলে আর নেই।

রোজই ছেলেদের নিয়ে স্কুটারে চড়ে স্কুলে যাওয়া-আসা করতাম। যে এলাকায় দুর্ঘটনা ঘটে, সেখানে কোনও স্পিড ব্রেকার নেই। গাড়ি খুব দ্রুত গতিতে চলে। ট্র্যাফিক পুলিশকেও তেমন দেখা যায় না। মাঝেমধ্যে সিভিক ভলান্টিয়ারদের দেখা যায়। দুর্ঘটনাস্থলের আশপাশে একাধিক স্কুল রয়েছে। রাস্তার পাশে কোনও ফুটপাত নেই। তাই পথচারীদের বাধ্য হয়ে রাস্তার উপর দিয়ে হাঁটতে হয়। প্রশাসনের কাছে আমার বিনীত আবেদন, সাধারণ মানুষকে সুষ্ঠু ভাবে হাঁটাচলার জন্য ফুটপাতের বন্দোবস্ত অন্তত করুন। প্রশাসন তৎপর হলে ছেলেটাকে অকালে হারাতাম না।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Accident Death Road Accident

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy