Advertisement
E-Paper

কোলছাড়া করেও সদ্যোজাত সন্তানকে ফিরিয়ে নিলেন মা

ঘরভাড়া ও খাওয়া-পরার বিনিময়ে সদ্যোজাত সন্তানকে অন্যের হাতে তুলে দেবেন বলে ঠিক করেছিলেন। যাঁর হাতে তুলে দেওয়ার কথা ছিল, মঙ্গলবার প্রসবের পরে হাজির ছিলেন সেই মহিলাও। কথামতো তাঁর হাতে ছেলেকে তুলেও দিয়েছিলেন। কিন্তু মায়ের মন মানতে পারেনি। দরজা আগলে তাই তিনি বলে দেন, বাচ্চাকে ছাড়বেন না। জড়ো হয়ে যান পড়শিরাও। শেষমেশ সদ্যোজাত ফিরে আসে মায়ের কোলেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০১৪ ০৩:৫৩
সন্তান কোলে সেই মা। সঙ্গে দুই মেয়ে। মঙ্গলবার। ছবি: আর্যভট্ট খান

সন্তান কোলে সেই মা। সঙ্গে দুই মেয়ে। মঙ্গলবার। ছবি: আর্যভট্ট খান

ঘরভাড়া ও খাওয়া-পরার বিনিময়ে সদ্যোজাত সন্তানকে অন্যের হাতে তুলে দেবেন বলে ঠিক করেছিলেন। যাঁর হাতে তুলে দেওয়ার কথা ছিল, মঙ্গলবার প্রসবের পরে হাজির ছিলেন সেই মহিলাও। কথামতো তাঁর হাতে ছেলেকে তুলেও দিয়েছিলেন। কিন্তু মায়ের মন মানতে পারেনি। দরজা আগলে তাই তিনি বলে দেন, বাচ্চাকে ছাড়বেন না। জড়ো হয়ে যান পড়শিরাও। শেষমেশ সদ্যোজাত ফিরে আসে মায়ের কোলেই।

মঙ্গলবার ঘটনাটি ঘটেছে নিউ টাউনের জ্যোতিনগরে। নিউ টাউন থানার পুলিশ জানায়, যে মহিলা শিশুটিকে নিতে এসেছিলেন, তাঁর নাম রূপা মণ্ডল ওরফে রেজুনা খাতুন। তাঁকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, সদ্যোজাতকে অন্য কারও হাতে বিক্রি করে দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল ওই মহিলার। বিধাননগর কমিশনারেটের এডিসিপি সন্তোষ নিম্বলকর বলেন, “ওই মহিলা শিশুটিকে কেন অন্যের হাতে তুলে দিতে চেয়েছিলেন, সে বিষয়ে ওঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।”

জ্যোতিনগরের অরবিন্দপল্লিতে টিনের ঘুপচি ঘরে পাঁচ বছর ও তিন বছরের দুই মেয়েকে নিয়ে থাকেন বছর পঁচিশের সেই মা, মমতা সর্দার। মমতা বলেন, “অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় আমাকে ছ’মাস আগে স্বামী ছেড়ে চলে গিয়েছে। তার পর থেকে ঠিক মতো খাওয়াও জোটে না। ব্যাগের কারখানায় কাজ করতাম। সেই কাজও করতে পারছিলাম না। তখনই আলাপ হয় ওই মহিলার সঙ্গে। প্রথমে ওঁর নামও জানতাম না। পরে উনি বলেন, বাচ্চাটাকে নিয়ে গিয়ে দেখভাল করবেন।”

মমতা জানান, তিনি অন্তঃসত্ত্বা থাকাকালীন রেজুনা মাঝেমধ্যে আসতেন। তিনি বলেন, “আমার জন্য উনি মাঝেমধ্যে খাবার, ফল নিয়ে আসতেন। শারীরিক কোনও অসুবিধা হচ্ছে কি না, জিজ্ঞেসও করতেন। তখনই উনি বলেন, ছেলে বা মেয়ে যা-ই হোক, উনি তাকে নিয়ে যাবেন। বিনিময়ে আমার ঘরভাড়া এবং যত দিন না কাজে যোগ দিচ্ছি, তত দিন খাওয়া-পরার খরচও দেবেন।”

মমতা জানান, অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজি হন তিনি। বলেন, “নিজের তো খাওয়া জোটে না। দুই মেয়ের মুখেও খাবার তুলে দিতে পারি না। দিনরাত কান্নাকাটি করে। কোন মা এ সব সহ্য করতে পারে! ছ’মাসের ঘরভাড়াও বাকি। বাধ্য হয়ে রাজি হয়েছিলাম।”

মঙ্গলবার সকালে নিজের ঘরেই প্রসব করেন মমতা। ওই তরুণী জানান, প্রসবের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হাজির হয়ে যান রেজুনা। চুক্তি অনুযায়ী, বাচ্চাকে তাঁর কোলে তুলেও দিয়েছিলেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত মন মানেনি। দরজা আগলে দাঁড়িয়ে পড়েন। তবে মমতা জানান, শুধু তিনি নন, বাচ্চাকে নিয়ে যাওয়া আটকে দেন পাড়ার বাসিন্দারাও। যাদব রাজবংশী নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “এ ভাবে যে শিশুটিকে তুলে দেওয়া হতে পারে, সে বিষয়ে কিছুই জানতাম না। ওই মহিলাকে আটকে জিজ্ঞেস করতে গিয়ে কথায় কিছু অসঙ্গতি পাই। তখন আমরাই পুলিশকে খবর দিই।”

রবীন বিশ্বাস নামে আর এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “আমরা পাড়ার সবাই প্রতিবাদ করেছি। কিছুতেই ওই বাচ্চাটিকে আমরা মায়ের কোলছাড়া করতে দেব না।” মমতাও বলেন, “পেটে যখন ছিল, তখন এক রকম মনে হয়েছিল। এখন বুঝতে পারছি, যতই কষ্ট হোক না কেন, কিছুতেই ওকে ছেড়ে দিতে পারব না।”

কিন্তু বাচ্চাকে বড় করে তোলার খরচ দেবে কে? জ্যোতিনগরের ওই পাড়ার বাসিন্দারা অধিকাংশই দরিদ্র। কেউ রাজমিস্ত্রি, কেউ বা ঠেলা চালান। তবু তাঁরাই একযোগে জানিয়েছেন, মমতা যত দিন না ফের কাজে যেতে পারছেন, তত দিন তাঁর ছেলেকে সবাই মিলেই মানুষ করবেন। আর মমতার বাড়িওয়ালা জয়ধন বলেন, “বাচ্চাটা তো আমারও নাতির মতো। মমতা যত দিন খুশি ওই ঘরে থাকুক। ঘরভাড়ার ৯০০ টাকা আমি নেব না।”

new town new born jyotinagar arabinda pally mamata sardar rejuna new-born child’s sold mother kolkata news online news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy