দু’দিনে তিন-তিনটে ছিনতাই, সব ক’টিই মোটরবাইকে চেপে!
ফের মোটরবাইক-আরোহী ছিনতাইবাজদের দাপট শহরে। প্রথম ঘটনাটি ঘটেছে রবিবার ভোরে খিদিরপুরে, দ্বিতীয়টি সোমবার দুপুরে সার্ভে পার্ক থানা এলাকায়, পরেরটি সে দিনই নেতাজিনগর থানা এলাকায়। তবে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত কাউকেই ধরতে পারেনি পুলিশ।
পুলিশ জানায়, সোমবার দুপুরে তিন মোটরবাইক-আরোহী ছিনতাইবাজের কবলে পড়েন কান্তা রায় নামে সন্তোষপুর মডার্ন পার্কের বাসিন্দা এক বৃদ্ধা। পুলিশের কাছে অভিযোগে তিনি জানিয়েছেন, এক আত্মীয়ের বাড়ি থেকে নিজের বাড়িতে ফিরছিলেন তিনি। রাসমোহন ভদ্র রোডে একটি মোটরবাইকে চেপে তিন দুষ্কৃতী পিছন থেকে তাঁর গলার হার ছিনতাই করে পালায়। পুলিশ জানিয়েছে, দুষ্কৃতীদের দু’জনের মাথায় হেলমেট ছিল।
সেই সন্ধ্যায় একই ঘটনা ঘটে নেতাজিনগর থানা এলাকার খানপুর রোডে। পুলিশ জানিয়েছে, জয়শ্রী সেনগুপ্ত নামে এক মহিলা পাড়ার দোকানে যাবেন বলে বেরিয়েছিলেন। ওই মহিলা পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি বাড়ি থেকে বেরিয়ে কিছু দূর যাওয়ার পরেই একটি মোটরবাইকে চেপে দুই দুষ্কৃতী তার গলার হার ছিনিয়ে পালায়। তাঁর চিৎকার শুনে অন্য প্রতিবেশীরা ছুটে এলেও কাউকে ধরতে পারেননি।
অন্য দিকে, রবিবার ভোরে একই কায়দায় ছিনতাই হয় ওয়াটগঞ্জ থানা এলাকায়। পুলিশ জানিয়েছে, ভোর সাড়ে পাঁচটা নাগাদ হাঁটতে বেরিয়েছিলেন খিদিরপুরের রমানাথ পাল লেনের বাসিন্দা বৃদ্ধা উমা গুপ্ত। অভিযোগ, ওই বৃদ্ধার বাড়ির কিছু দূরে মোটরবাইক-আরোহী দুই দুষ্কৃতী তাঁর গলার হার ধরে হ্যাঁচকা টান দেয়। পুলিশের কাছে ওই মহিলা জানান, তিনি কিছু বুঝে ওঠার আগেই হার নিয়ে পালায় তারা।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান, দক্ষিণ শহরতলির ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলি একই দলের কাজ। অভিযোগকারিণীদের সঙ্গে কথা বলে ছিনতাইকারীদের ছবি আঁকানো হচ্ছে। গত কয়েক মাস ধরে শহরে একের পর এক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। বেশির ভাগ সময়েই শিকার হচ্ছেন মহিলারা। গত ১৪ জুন ইলিয়ট পার্কে প্রাতর্ভ্রমণকারী এক মহিলার সোনার হার ছিনতাই করে পালিয়েছিল এক যুবক। প্রসঙ্গত, ওই পার্কেই সান্ধ্যভ্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই ঘটনার দু’সপ্তাহ পরেই পরপর হরিদেবপুর, টালিগঞ্জ ও যাদবপুরে ছিনতাই হয়। হরিদেবপুরেও ছিনতাইবাজদের কবলে পড়েন সীমা ঘোষ নামে এক প্রাতর্ভ্রমণকারী। তাঁরও গলার হার ছিনতাই করে পালায় দুষ্কৃতীরা।
পুলিশ সূত্রের খবর, ইলিয়ট পার্ক ও টালিগঞ্জের দুই দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হলেও বাকিদের ধরা যায়নি। লালবাজার সূত্রের হিসেবে, চলতি মাসে এ পর্যন্ত অন্তত ৭টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। অবশ্য লালবাজারের কর্তাদের দাবি, এ বছর কলকাতা পুলিশে বিভিন্ন থানায় রেকর্ড হওয়া প্রায় ৬০টি ছিনতাইয়ের ঘটনার অধিকাংশেরই কিনারা হয়ে গিয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে দুষ্কৃতীদের।
বছর দুয়েক আগেও কলকাতায় ছিনতাইয়ের রমরমা বেড়েছিল। কসবা-ঢাকুরিয়া-যাদবপুরে তো ছিনতাই করতে এসে গুলিও চালায় দুষ্কৃতীরা। এর পরেই নড়েচড়ে বসেন লালবাজারের গোয়েন্দারা। ধরপাকড় শুরু হয়। লালবাজারের গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, মাঝে বেশ কয়েক দিন বন্ধ থাকলেও সম্প্রতি শহরে ফের ছিনতাইয়ের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে। পুলিশের একাংশের দাবি, পুজোর আগে প্রতি বছর ছিনতাই বাড়ে। এ ছাড়া, বেশ কয়েক জন গ্রেফতার হওয়া ছিনতাইবাজ সম্প্রতি জামিনে ছাড়া পেয়েছে। ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলির সঙ্গে তারা কেউ জড়িত কি না, তা খতিয়ে দেখছে লালবাজারের গোয়েন্দারা।
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার (অপরাধ দমন) পল্লবকান্তি ঘোষ মঙ্গলবার বলেন, “ছিনতাইয়ের ঘটনায় বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিগুলিরও কিনারা করার চেষ্টা চলছে।”
তবে পুলিশকর্তারা দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবি করলেও শহরে কিন্তু ছিনতাই থেমে নেই!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy