Advertisement
১১ মে ২০২৪
House

তিন বার হাতবদল হলেও পুর নথিতে ফাঁকা জমি! ইডির নজরে এ বার মাদুরদহের চারতলা বাড়ি

চার কাঠা জমিতে চারতলা বাড়ি। প্রতিটি তলে দু’টি করে ফ্ল্যাট। ই এম বাইপাস সংলগ্ন মাদুরদহে ওই বাড়ির বেশির ভাগ ভাড়াটেই চিকিৎসক।

মাদুরদহের সেই বাড়ি। মঙ্গলবার।

মাদুরদহের সেই বাড়ি। মঙ্গলবার। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার

মেহবুব কাদের চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২২ ০৬:২১
Share: Save:

চার কাঠা জমিতে চারতলা বাড়ি। তিনটি তলে দু’টি করে ফ্ল্যাট। ই এম বাইপাস সংলগ্ন মাদুরদহে ওই বাড়ির বেশির ভাগ ভাড়াটেই চিকিৎসক। তাঁরা স্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত। ইডি-র নজরে এখন কলকাতা পুরসভার ১০৮ নম্বর ওয়ার্ডের মাদুরদহের সেই ৬৮৩ নম্বর বাড়িটি।

এমনকি, বাড়িটির মালিকানা তিন বার হাতবদল হলেও কলকাতা পুরসভার অ্যাসেসমেন্ট বিভাগের রেকর্ডে এখনও সেটি নথিভুক্ত রয়েছে প্রথম মালিকের নাম-সহ ফাঁকা জমি হিসাবেই! যে কারণে পুরসভা মোটা অঙ্কের সম্পত্তিকর থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, কলকাতা পুরসভাকে অন্ধকারে রেখে বসতবাড়ি কী ভাবে ব্যবসায়িক কাজে লাগানো হচ্ছে?

পুরসভার কর রাজস্ব বিভাগ সূত্রের খবর, চার কাঠা ফাঁকা জমি হিসাবে মাদুরদহের ওই জমি থেকে যৎসামান্য সম্পত্তিকর আসছে। অথচ ওই জমিতে বেশ কয়েক বছর আগে বিশাল বাড়ি হয়েছে। কিন্তু সেই সম্পত্তির মূল্যায়নই হয়নি! সম্পত্তির মূল্যায়ন হলে কয়েক লক্ষ টাকা সম্পত্তিকর আদায় হতে পারত বলে সূত্রের খবর। কসবার রাজডাঙা মেন রোডে প্রাসাদোপম অনুষ্ঠান বাড়ির মালিকানা ঘিরেও সোমবার একই রকম বিতর্ক উঠেছিল পুরসভার বিরুদ্ধে।

পুরসভার অ্যাসেসমেন্ট বিভাগের রেকর্ড অনুযায়ী, ৬৮৩ মাদুরদহের বাড়িটির মালিক এখনও সত্যরঞ্জন মজুমদার। অথচ বেলেঘাটার বাসিন্দা চিকিৎসক সত্যরঞ্জন ওই ফাঁকা জমি ১৯৯৩ সালে কিনে ২০০৭ সালে পার্ক সার্কাসের এক বাসিন্দাকে বিক্রি করে দেন। ডোমকলের বাসিন্দা পেশায় জমি-বাড়ির দালাল মেকাইল আনসারি মঙ্গলবার টেলিফোনে বলেন, ‘‘সত্যরঞ্জনের থেকে জমিটি কিনে নেন পার্ক সার্কাসের বাসিন্দা মহম্মদ নিয়াজ়। তিনিই ওই জমিতে তেতলা বাড়ি করেন। বাড়ি তৈরি করতে আমি ঠিকাদারির দায়িত্ব নিয়েছিলাম। ২০১৩ সাল নাগাদ বাড়িটি কিনে নিতে মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের লোকেরা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন।’’ মেকাইলের দাবি, ‘‘তখন বাড়িটির মূল্য ছিল দু’কোটি টাকা। দর কমাতে আমায় দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১ কোটি ৪২ লক্ষে দাম নামিয়েছিলাম। কথা ছিল, মধ্যস্থতাকারী হিসাবে সতেরো লক্ষ টাকা পাব। ওই টাকা বহু বার চেয়েছি। তাতে একাধিক বার বিভিন্ন নম্বর থেকে হুমকি ফোন আসত। ২০১৪ সালে বাধ্য হয়ে ডোমকলের বাড়িতে ফিরে ছোট ব্যবসা শুরু করেছি।’’

মঙ্গলবার সেই বাড়ির বর্তমান বাসিন্দা, একাধিক চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, হাসপাতালের সঙ্গে বসবাস সংক্রান্ত চুক্তির ভিত্তিতে তাঁদের ফ্ল্যাটের ভাড়া মেটান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সংশ্লিষ্ট আর এন টেগোর হাসপাতাল জানিয়েছে, দূর-দূরান্তের কর্মীদের মাদুরদহের ওই বাড়িতে থাকার জন্য ২০১৩ সালে একটি বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে চুক্তি হয়। হাসপাতালের তরফে প্রতি মাসে ওই সংস্থার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা হয়।’’ জানা গিয়েছে, সেই সংস্থার মালিক অর্পিতা মুখোপাধ্যায়!

এ দিন মাদুরদহের ৬৮৩ নম্বর বাড়িতে ঢোকার আগে এক নিরাপত্তারক্ষী বলে ওঠেন, ‘‘বাড়ির মালিক পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেই শুনেছি।’’ বাড়ির কেয়ারটেকার পরমেশ্বর দাসের কথায়, ‘‘মাস ছয়েক আগেও অর্পিতা ম্যাডাম এসেছিলেন। বাড়িটির খোঁজখবর নিয়ে চলে যান।’’ স্থানীয় আবাসিকদের একাংশের দাবি, মাস তিনেক আগে অর্পিতাকে আসতে দেখা গিয়েছে। মন্ত্রী পার্থকে আসতেও দেখা গিয়েছে বলে জানান স্থানীয় কয়েক জন।

বেলেঘাটার রামকৃষ্ণ নস্কর লেনে সস্ত্রীক থাকেন নবতিপর সত্যরঞ্জন। একমাত্র মেয়ে ইংল্যান্ডবাসী। এ দিন সত্যরঞ্জনের বাড়ি গেলে তিনি বলেন, ‘‘বহু বছর আগে মাদুরদহের ওই জমি বিক্রি করে দিয়েছি। বছর দুয়েক আগে আমার নামে সম্পত্তিকরের বিল এসেছিল। পুরসভার কাছে প্রশ্ন, জমির মালিকানা অন্যের, তবুও কেন আমার নামে বিল আসবে? কেনই বা অ্যাসেসমেন্টের খাতা থেকে ওই জমির মালিক হিসাবে আমার নাম মোছা হবে না?’’

পুরসভার কর-রাজস্ব বিভাগের এক আধিকারিকের মন্তব্য, ‘‘যে সব বাড়ির অ্যাসেসমেন্ট হয়নি, তার রেকর্ড এ বার পরীক্ষা হবে।’’ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কলকাতারমেয়র ফিরহাদ হাকিমকে ফোন এবং মেসেজ করা হলেও তিনি উত্তর দেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

House Municiplaity
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE