Advertisement
E-Paper

প্রাণের ঝুঁকি, তবু জীর্ণ বাড়ি ভাঙার ‘ঝুঁকিতে’ নেই পুরসভা

মাথায় বাড়ি ভেঙে পড়ার ভয়ে বাসিন্দারা কাতর। কিন্তু ‘মানবিক’ পুর-প্রশাসন বাড়ি ভাঙতে নারাজ। তাই প্রেমচাঁদ বড়াল স্ট্রিটে রবিবার রাতে একটি বাড়ি ভেঙে পড়ার পরেও এলাকার ছবিটা বিশেষ বদলাল না। বহু বছর ধরেই বিপদের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে আতঙ্কের দিন কাটছিল মধ্য কলকাতার প্রেমচাঁদ বড়াল স্ট্রিটের জীর্ণ বাড়িগুলির বাসিন্দাদের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০১:৪৫
প্রেমচাঁদ বড়াল স্ট্রিটের ভেঙে পড়া সেই বাড়ি।

প্রেমচাঁদ বড়াল স্ট্রিটের ভেঙে পড়া সেই বাড়ি।

মাথায় বাড়ি ভেঙে পড়ার ভয়ে বাসিন্দারা কাতর। কিন্তু ‘মানবিক’ পুর-প্রশাসন বাড়ি ভাঙতে নারাজ। তাই প্রেমচাঁদ বড়াল স্ট্রিটে রবিবার রাতে একটি বাড়ি ভেঙে পড়ার পরেও এলাকার ছবিটা বিশেষ বদলাল না।

বহু বছর ধরেই বিপদের ঝুঁকি মাথায় নিয়ে আতঙ্কের দিন কাটছিল মধ্য কলকাতার প্রেমচাঁদ বড়াল স্ট্রিটের জীর্ণ বাড়িগুলির বাসিন্দাদের। আশঙ্কা দেখেও এতকাল মুখ ফিরিয়ে রেখেছিল পুর-প্রশাসন। এমনকী, রবিবার রাতে এলাকার একটি বাড়ির একাংশ ভেঙে পড়ার পরেও প্রশাসন কার্যত নির্বিকার। সোমবার নির্দেশ গিয়েছে কিছু বাড়িতে ‘বিপজ্জনক’ নোটিস ঝোলানোর। সারা দিনে অবশ্য সে কাজটুকু হতেও দেখা যায়নি। তা ছাড়া, প্রয়োজনে বিপজ্জনক বাড়ি ভেঙে ফেলার নির্দেশও দিতে পারে পুরসভা। পুর-আইনে সে কথা থাকলেও প্রশাসনের আছে মানবিকতার অজুহাত। পুর-প্রশাসনের একাংশের ব্যাখ্যা, বাড়িগুলিতে যৌনকর্মীরা থাকেন। বাড়ি ভাঙলে তাঁদের চলবে কী করে, তাই বাড়ির মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এ দিকে, রবিবারের দুর্ঘটনার পরে আতঙ্ক আরও বেড়েছে বাসিন্দাদের মধ্যে। অধিকাংশের মতেই, আগে প্রাণ, পরে রোজগার। বহু যৌনকর্মী প্রশ্ন তুলেছেন, বাড়ির এমন হাল হলে তো খদ্দের আসতেই ভয় পাবে। এমন বাড়িতে ব্যবসা চলবেই বা কী করে?

আতঙ্কে আছেন ওই বরোর চেয়ারম্যান অপরাজিতা দাশগুপ্তও। তাঁর বক্তব্য, “এলাকার অধিকাংশ বাড়ির হাল এত খারাপ যে, রাতে ঘুম হয় না। মনে হয়, যদি ভেঙে পড়ে!”

ওই এলাকার আরও দু’টি ভগ্নপ্রায় বাড়ি। সোমবার।

শুধু ভেঙে পড়া ৭০ নম্বর প্রেমচাঁদ বড়াল স্ট্রিটই নয়, ৬০, ৬৯, ৭৪, ১৬, ১৫/৩-সহ বহু বাড়ির অবস্থা ভয়ঙ্কর। গড়গড় করে ঠিকানাগুলি জানিয়ে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর সত্যেন্দ্রনাথ দে বললেন, “অনেক আগেই পুর-ইঞ্জিনিয়ারদের জানিয়েছি। ওঁরা হয়তো দেখছেন।” রবিবার ঘটনার পরে সত্যেন্দ্রনাথবাবু জানিয়েছিলেন, সোমবার সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ারকে বিপজ্জনক বাড়িতে ঝোলানোর জন্য ২০টি নোটিস বোর্ড আনতে বলা হয়েছে। সোমবার বিকেল পর্যন্ত তেমন কোনও কাজের আয়োজন নজরে পড়েনি। এ বিষয়ে পুরসভার বিল্ডিং দফতরের ডিজি (২) দেবাশিস চক্রবর্তী বলেন, “পুর-আইনের ৪১১ ধারায় বেশ কয়েকটি বাড়ির মালিকের কাছে অনেক আগেই নোটিস ধরানো হয়েছে। তাতে কোনও কাজ হয়নি।” ওই আইন অনুযায়ী, বাড়ির মালিককে অবহিত করা হয় তাঁর বাড়ির হাল খারাপ। খুব শীঘ্রই সব সারানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য ওই নোটিস দিয়েই নীরব থেকেছে পুর-প্রশাসন। যদিও পুর-আইনেই বলা আছে, ৪১১ মোতাবেক কাজ না হলে পুর-প্রশাসন ওই বাড়ির সামনে বিপজ্জনক বাড়ি বলে নোটিস বোর্ড ঝুলিয়ে দেবে। এ ক্ষেত্রে অবশ্য তা করা হয়নি। কেন, তা নিয়ে এখন নানা প্রশ্ন উঠছে। মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় এ দিনই ওই এলাকার বিপজ্জনক বাড়িগুলি নোটিস ঝোলানোর নির্দেশ দেন।

তবে নোটিস ঝোলানোর পরেও কাজ না হলে তাঁদের কিছু করার নেই বলেই জানান শোভনবাবু। তাঁর বক্তব্য, “আমাদের হাত-পা বাঁধা। পুর-আইনে বাড়ি ভাঙার অধিকার পুর-প্রশাসনকে দেওয়া নেই।” মেয়রের ওই যুক্তি একেবারেই ভিত্তিহীন বলে দাবি করেন প্রাক্তন মেয়র বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। পুর-আইনের ৪১১ (৪) (ক) ধারায় আছে, বাড়ির মালিক বিপজ্জনক বাড়ি না ভাঙলে পুর-প্রশাসন তা ভাঙতে পারে। মানুষের সুরক্ষার জন্য বাড়িটি ভাঙা প্রয়োজন হলে, তা করার অধিকার পুর-প্রশাসনকে দেওয়া আছে সেই আইনে। বর্তমান মেয়র বিষয়টি জেনেও ভোটের কথা ভেবে এড়িয়ে যাচ্ছেন বলে মন্তব্য বিকাশবাবুর।

ঘটনার পর থেকে ওই বাড়ির জনা পঞ্চাশেক মানুষের ঠিকানা পাশের ক্লাব। উৎকণ্ঠায় রাত কেটেছে। এ দিন তাঁদের খাবারের ব্যবস্থা করেন পড়শিরাই। বেলা ১১টা নাগাদ এলাকায় যান বাড়ির মালিক কার্তিকচন্দ্র হালদার। তিনি জানান, বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটে থাকেন তিনি। বাড়িটি তাঁর নিজেরও ভাড়া নেওয়া। এই বাড়ির আসল মালিক যাদবপুর থানার গাঙ্গুলিবাগান লেনের বাসিন্দা রেবা বেবি (ঠাকুর)। বাড়িটির এত দুরবস্থা সত্ত্বেও কেন সংস্কার করেননি? কার্তিকবাবুর জানান, ১০ বছর আগে বাড়িটি সারাই করা হয়েছিল। তাঁর অভিযোগ, এই বাড়িতে কেউ ১০ টাকা, কেউ ২৫ টাকা দিয়ে থাকেন। মাসে হাজার টাকাও ওঠে না। এই টাকায় সারাই করা অসম্ভব।

—নিজস্ব চিত্র।

old house dilapidated condition calcutta municipal corporation kolkata news online kolkata news municipality several problem worn house
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy