কলকাতা পুরসভা। —ফাইল চিত্র।
প্রকল্পের কোথাও তাঁর সশরীর উপস্থিতি নেই। কিন্তু মহিমা এমনই যে, তাঁর নামাঙ্কিত এক বহুতল প্রকল্পের চূড়ান্ত নকশা অনুমোদনের আগে সব নথি বারবার খতিয়ে দেখছেন পুরকর্তারা। নেওয়া হচ্ছে বাড়তি সতর্কতা। হবে না-ই বা কেন? প্রস্তাবিত ওই বহুতলের নাম যে খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নামে!
ইএম বাইপাসের ওই প্রকল্প নিয়ে এখন চূড়ান্ত ব্যস্ততার মধ্যে রয়েছেন পুরকর্তাদের একাংশ। সূত্রের খবর, প্রস্তাবিত ওই বহুতলের নকশা অনুমোদনের বিষয়টি আপাতত পুরসভার বিবেচনাধীন। ‘মিউনিসিপ্যাল বিল্ডিং কমিটি’ (এমবিসি) প্রাথমিক ভাবে নকশা অনুমোদন করলেও চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়ার আগে আরও কয়েকটি বিষয় সংশ্লিষ্ট নির্মাণ সংস্থার কাছ থেকে জানতে চেয়েছেন পুর কর্তৃপক্ষ।
পুরসভা সূত্রের খবর, ইএম বাইপাসের ওই বহুতলের নকশাটি ২০১৪ সালের মে মাসে অনুমোদনের জন্য পুরসভায় জমা পড়েছিল। প্রথমে
ওই বহুতল বেসমেন্ট-সহ বত্রিশ তলার হবে বলে ঠিক ছিল। সেই মতো পুরসভা ছাড়পত্রও দিয়েছিল। তখন অবশ্য বহুতলের নাম নিয়ে পুরকর্তাদের বাড়তি চিন্তা ছিল না।
কিন্তু কয়েক মাস আগে আবার ওই নির্মাণ সংস্থা পুরসভায় আবেদন করে। তারা জানায়, ওই বহুতলে আরও সাতটি ফ্লোর তারা তৈরি করতে চায়। তত দিনে অবশ্য ওই বহুতল যে ট্রাম্পের নামে হবে, তা ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। যা নিয়ে পুর মহলে তুমুল আলোচনাও শুরু হয়ে যায়। তার পরেই নির্মাণ সংস্থার কাছ থেকে আরও নথিপত্র চায় পুরসভা। এক পদস্থ পুরকর্তার কথায়, ‘‘২৫-৩০ তলার বহুতলগুলির ক্ষেত্রে সব সময়েই আমরা বাড়তি সাবধানতা অবলম্বন করি। কিন্তু এটা অস্বীকার করার জায়গা নেই যে, এটা একটা বিশেষ প্রকল্প। তাই কয়েকটি বাড়তি তথ্য চাওয়া হয়েছে।’’
পুর আধিকারিকদের একাংশ জানাচ্ছেন, ওই বহুতলের নকশার সঙ্গে পুরসভার নথিভুক্ত স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারের শংসাপত্র জমা দিয়েছে নির্মাণ সংস্থা। কিন্তু তার পরেও আইআইটি, শিবপুর বা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো কোনও নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে একটি ‘স্ট্রাকচারাল ভেরিফিকেশন রিপোর্ট’ চাওয়া হয়েছে। ওই বাড়তি নথি চাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে পুর ইঞ্জিনিয়াররা জানাচ্ছেন, প্রাথমিক ভাবে ওই বহুতল বত্রিশতলার অনুমোদন নিয়েছিল। এখন আরও বাড়তি সাততলা হলে নির্মাণ সংক্রান্ত কী পরিবর্তন হবে বা ভিতের উপরে তার কী প্রভাব পড়বে, সে সম্পর্কে নিশ্চিত হতেই ওই নথি চাওয়া হয়েছে।
ওই বহুতল সংলগ্ন মাটি সেই বাড়তি ভার বহনে সক্ষম কি না, তার জন্যও নথিভুক্ত জিও-টেকনিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের থেকে একটি শংসাপত্র চাওয়া হয়েছে। ওই সমস্ত নথি জমা দিলেই চূড়ান্ত ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়া হবে। আর সেটা শুধু সময়ের অপেক্ষা বলেই জানাচ্ছেন পুরকর্তাদের একাংশ। এক পুরকর্তা তো রীতিমতো রসিকতা করে বলছেন, ‘‘কোনও গোলমাল হলে তো আমেরিকায় হাজিরা দিতে যেতে হবে! তাই সব দিক দেখে নেওয়াই ভাল।’’
প্রসঙ্গত, এর আগেও চৌরঙ্গির উপরে শহরের সর্বোচ্চ বহুতলের ক্ষেত্রে একটি সমস্যা হয়েছিল। ২০১১ সালে ‘এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া’ (এএআই) প্রস্তাবিত ওই বহুতলের উচ্চতায় (২৬০ মিটার) অনুমোদন দিলেও পরে তা নিয়ে আপত্তি জানায়। সংশ্লিষ্ট নির্মাণ সংস্থাকে উচ্চতা কমিয়ে ১৯৮ মিটার করার কথা বলা হয়েছিল। তা নিয়ে এএআই এবং ওই নির্মাণ সংস্থার লড়াই আদালত পর্যন্ত গড়ায়। পরে অবশ্য আদালতের রায় নির্মাণ সংস্থার পক্ষেই গিয়েছিল। যার প্রেক্ষিতে গত মাসেই এএআই ৬৮তলার ওই বহুতলকে ছাড়পত্র দিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy