Advertisement
E-Paper

বন্দিদের জন্য লড়াই চালাচ্ছেন জেল খাটা মুনমুন

মুনমুন নামটাই লোকে জানে বটে! তবে বিয়ের আগে কাগজে-কলমে তাঁর নাম ছিল অপরাজিতা। অফিসে, বন্ধুমহলের চোখে তিনি এখন সত্যিই অপরাজিতা হয়ে উঠেছেন। গারদের অন্ধকার তাঁর জীবনের ১৩টা বছর কেড়ে নিলেও দমেননি অপরাজিতা ওরফে মুনমুন বসু।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০১৭ ০২:৫৫
প্রত্যয়ী: মুনমুন বসু। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

প্রত্যয়ী: মুনমুন বসু। ছবি: দেবস্মিতা ভট্টাচার্য

মুনমুন নামটাই লোকে জানে বটে! তবে বিয়ের আগে কাগজে-কলমে তাঁর নাম ছিল অপরাজিতা। অফিসে, বন্ধুমহলের চোখে তিনি এখন সত্যিই অপরাজিতা হয়ে উঠেছেন।

গারদের অন্ধকার তাঁর জীবনের ১৩টা বছর কেড়ে নিলেও দমেননি অপরাজিতা ওরফে মুনমুন বসু। স্বামী কুণালকে খুনের অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস হয়ে বেরিয়ে এখন অন্য হতভাগ্যদের মুক্ত করার লড়াই চালাচ্ছেন।

এ দেশে জেল থেকে বেরোলেও দাগি তকমা অনেককেই তাড়া করে জীবনভর। নিজের পরিবারও সব সময়ে মেনে নেয় না। মুনমুন জেলে যাওয়ার সময়ে তাঁর দুই ছেলেই অবোধ বালক। এত দিন বাদে তাঁদের সঙ্গে ফের যোগাযোগ হলেও এক সঙ্গে থাকা হয়নি দুর্ভাগা মায়ের। তবে জেলের ভিতরে চেনা সমাজের বৃহত্তর পরিবারটিকেও মুনমুন ভোলেননি।

‘‘আলিপুর জেলের লক্ষ্মী চিন্তালপুরী, কবিতা পাইনের মতো যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্তদের কথা খুব মনে হয়! ওদের আইনি সাহায্য দিয়ে পাশে দাঁড়াতেই হবে।’’— প্রত্যয়ী মুনমুন। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থায় চাকরির সূত্রে তিনি এখন আলিপুর, প্রেসিডেন্সি, দমদম থেকে মেদিনীপুর, বহরমপুর, মালদহ, বালুরঘাটের জেলে গিয়ে আসামিদের জন্য আইনি সাহায্য বাতলানোর কাজ করে চলেছেন। জেল নিয়ে সেমিনারেও ইংরেজিতে সাবলীল বক্তৃতা দিচ্ছেন।

আরও পড়ুন: টেররিজম না ট্যুরিজম, পথ বাছো কাশ্মীর: প্রধানমন্ত্রী

প্রাক্তন কারা শীর্ষকর্তা তথা বর্তমানে রাজ্য সংশোধনাগার প্রশাসন দফতরের উপদেষ্টা বংশীধর শর্মা এই মুনমুনকে দেখে উচ্ছ্বসিত। ‘‘মেয়েটি শিক্ষিত, বিএ পাশ। আবার নিজে জেলের জীবনটা জানে। বন্দিদের কষ্ট ওর মতো ভাল করে কে আর বুঝবে!’’— বলছেন তিনি। কালীঘাটে তাঁদের অফিসের কোঅর্ডিনেটর স্যাভিও পিন্টোর কাছেও মুনমুন বড় ভরসার জায়গা! ‘‘গোড়ায় অফিসের রিসেপশন সামলানোর জন্যই ওকে নেওয়া হয়। এখন জেলে-জেলে ঘুরে কাজ করছে।’’ আদালতে লেগে থেকে নথি ঘেঁটে কী ভাবে বন্দিদের আইনি লড়াই লড়তে হয়, তা হাড়ে হাড়ে জানেন মুনমুন। আইনজীবী ও বন্দিদের মধ্যে সমন্বয় গড়ে তোলার কাজটাই তিনি করে চলেছেন।

নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন সাজা পেয়েছিলেন ৩১ বছরের মুনমুন। ২০০০-এর জুন থেকে ২০১৩-র এপ্রিল জেল খাটেন। এপ্রিলে জামিনের পরে ডিসেম্বরে বেকসুর খালাস করার নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট। মুনমুনের শাশুড়ি তবু সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। ২০১৪-র মে-তে সর্বোচ্চ আদালতও জানিয়ে দেয়, স্বামীকে খুনের ষ়ড়যন্ত্রে মুনমুন সামিল হননি, আসামি নান্টু রায়ের সঙ্গে তাঁর যোগসাজশ ছিল না। হাইকোর্টের আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘এত বছর অহেতুক ভুগেছেন মুনমুন। মামলাটি দীর্ঘদিন হাইকোর্টে তোলাই যায়নি।’’ কয়েদি জীবনের ভোগান্তির এই গল্প মুনমুন মুম্বইয়ে টাটা ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল সায়েন্সেস-এর আসরেও শুনিয়ে এসেছেন।

নিজের জীবনের তেতো স্বাদই এ মেয়ের হার না মানা লড়াইয়ের রসদ।

Munmun Basu Rights of Prisoners
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy