একটি খুেনর ঘটনার জেরে ফিরল ‘স্টোনম্যান-এর স্মৃতি। আশির দশকের শেষ দিকে কলকাতা শহরে মূলতপাথরের চাঁই কিংবা কংক্রিটের স্ল্যাব দিয়ে আঘাত করে একাধিক ফুটপাতবাসীকে খুনের ঘটনা ঘটেছিল। যা থেকে ওই নামকরণ হয়েছিল খুনির। যদিওশেষ পর্যন্ত সে অধরাই থেকে গিয়েছিল। এ বার সেই একই কায়দায় এক যুবককে খুনের অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার ভোরে ঘটনাটি ঘটেছে দক্ষিণ কলকাতার শরৎ বসু রোডে।তদন্তে নেমে এ বার অবশ্য অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে সমর্থ হয়েছে পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন শরৎ বসু রোডের ফুটপাতে রক্তাক্ত অবস্থায় এক যুবককে পড়ে থাকতে দেখেনস্থানীয় লোকজন। প্রথমে তাঁর পরিচয় জানা না গেলেও বিকেলে জানা যায়, ওই যুবকের নাম সোমনাথ চক্রবর্তী ওরফে বুম্বা(২৮)। তাঁর বাড়ি মহেশতলায়। শরৎ বসু রোডের ফুটপাতে সোমবার রাতে ঘুমিয়ে ছিলেন সোমনাথ। পুলিশ জানিয়েছে, এ দিন ওইযুবকের দেহ উদ্ধারের সময়ে পাশেই একটি বড় পাথর পড়ে ছিল। যা দেখে পুলিশের অনুমান, ওই পাথরটি দিয়ে বার বার আঘাত করে সোমনাথকে খুন করে অভিযুক্ত।
স্থানীয়েরা জানিয়েছেন, এ দিন সোমনাথের দেহ উদ্ধারের সময়ে তাঁর কান দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছিল।যুবকের পরনে ছিল হাফ প্যান্ট, ঊর্ধাংশ ছিল অনাবৃত। পুলিশ এসে সোমনাথকে উদ্ধার করে এম আর বাঙুর হাসপাতালে নিয়েগেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে জানান। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন লালবাজারের হোমিসাইড শাখার আধিকারিকেরা। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, সোমনাথের বাঁ হাতের একাধিক জায়গায়আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। হাতেই কনুই ছিল ভাঙা।
তদন্তে নেমে ঘটনাস্থলের কাছে থাকা সিসি ক্যামেরারফুটেজ দেখে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, ঘটনাটি ঘটে এ দিন ভোর সাড়ে ৪টে নাগাদ।ঘুমন্ত সোমনাথকে পাথর দিয়ে বার বার আঘাত করে খুন করে অভিযুক্ত। এর পরে ঘটনাস্থল ছেড়েচম্পট দেয়। শেষে এ দিন বিকেলে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর থেকে অভিযুক্ত রাজু নস্করকেগ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, সোমনাথ ও রাজু দু’জনেই ভিক্ষা করতেন। রাজুর বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিক অভিযোগ রয়েছে। আজ, বুধবার তাকে আদালতেতোলা হবে।
এ দিন সকালে শরৎ বসু রোডে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়,ফুটপাতের ওই অংশ গার্ডরেল দিয়ে ঘিরে দিয়েছে পুলিশ। পাশেই এক চায়ের দোকানদার সুধীর গিরি বলেন, ‘‘ভোর সাড়ে৫টায় এসে দেখি, এক যুবক পাশ ফিরে অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে রয়েছেন। কান দিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে। পাশেই একটা বড় পাথরপড়ে ছিল।’’ উল্লেখ্য, গত বছরের মার্চ মাসে বৌবাজারেরযোগাযোগ ভবনের কাছে পাথর দিয়ে আঘাত করে খুন করাহয়েছিল বছর ২৬-এর এক যুবককে। তিনিও রাতে ফুটপাতেঘুমিয়েছিলেন।
প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশ জানিয়েছে, সোমনাথ ও রাজুর মধ্যে বিবাদ নতুন নয়। দিনদুয়েক আগেও একটি বিষয় নিয়ে তাঁদের মধ্যে বচসা ও হাতাহাতি হয়েছিল। তদন্তকারীদের অনুমান, পুরনো শত্রুতার জেরে সোমনাথকে খুন করেছে রাজু।
আশির দশকের শেষে কলকাতা পুলিশের রাতের ঘুম ছুটিয়েদিয়েছিল ‘স্টোনম্যান’। প্রাক্তন এক পুলিশকর্তা জানাচ্ছেন, ১৯৮৯-এর শেষ দিক থেকে পর পর একই কায়দায় খুন হন ১৩ জন।মূলত মধ্য কলকাতায়, শিয়ালদহ থেকে হাওড়া সেতুর মধ্যে ওই ঘটনাগুলি ঘটেছিল। বড় পাথরের চাঁই অথবা কংক্রিটেরস্ল্যাব দিয়ে আঘাত করে, মূলত ফুটপাতে একা ঘুমিয়ে থাকা ব্যক্তিদের মাথায় আঘাত করে তাঁদেরখুন করত তথাকথিত ‘স্টোনম্যান’। খুনের পরে মৃত ব্যক্তির পাশেই রেখে যেত অস্ত্রটি। যাতেলেগে থাকত মৃতের রক্তের দাগ। তবে, সেই সময়ে ১৩টি খুন হলেও পুলিশ একটি ঘটনারও কিনারা করতে পারেনি। ফলে, খুনি অধরাই থেকে গিয়েছিল পুলিশের কাছে। মঙ্গলবার অবশ্য লালবাজারের কর্তারা জানাচ্ছেন, দেহ উদ্ধারের ন’ঘণ্টার মধ্যে অভিযুক্ত ‘স্টোনম্যান’কে গ্রেফতার করা গিয়েছে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)