Advertisement
E-Paper

অর্থনৈতিক ভাবে আমার নিজেকে বুদ্ধিমতী মনে হয়, অবশ্যই রানের থেকে পারিশ্রমিক নিই: কোয়েল

দুই সন্তানকে নিয়েই এখন তাঁর জগৎ। কবীর, কাব্যকে সামলে তিনি যতই সুগৃহিণী হোন না কেন, এখনও তিনি মা-বাবার আদুরে কোয়েল। মায়ের শাড়িগুলো তাঁর প্রিয়। ‘মিতিন: একটি খুনির সন্ধানে’র প্রচারে মায়ের শাড়ি পরেই সাক্ষাৎকার দিতে এলেন নায়িকা।

উৎসা হাজরা

শেষ আপডেট: ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫ ০৯:৫৫
বক্সঅফিস যুদ্ধ, প্রতিযোগিতা নিয়ে কতটা ভাবেন কোয়েল?

বক্সঅফিস যুদ্ধ, প্রতিযোগিতা নিয়ে কতটা ভাবেন কোয়েল? ছবি: সংগৃহীত।

প্রশ্ন: ২২ বছরের অভিনয়জীবন আপনার। কোনও বিতর্ক নেই, কখনও কোনও বেফাঁস মন্তব্য করেননি, কোয়েল মানেই যেন ‘পারফেক্ট’। কী ভাবে বজায় রাখলেন?

কোয়েল: সত্যি বলছি, আমি যে খুব ভেবে সব কিছু করি তা নয়। এই ভাবেই তৈরি হয়েছি। আমার কোনও কথা যদি অন্য মানুষকে কষ্ট দেয়, তা হলে সেই কথাটাই বলি না। নিজেকে অসম্ভব নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। রাগের মুহূর্তে অনেকে খারাপ কথা বলে ফেলেন। আমার ক্ষেত্রে, রাগের মুহূর্তেও আমি নিজেকে অসম্ভব সহজে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারি। তাই রাগের চেয়ে দুঃখ তাড়াতাড়ি হয় আমার। আর একটা বিষয়, আমি হঠকারী নই। কেউ তাতিয়ে দিল, আর উত্তেজিত হয়ে আমি খারাপ খারাপ কথা বলে ফেললাম। সেটা সহজে কেউ করতে পারেন না আমাকে দিয়ে। তাই আলাদা করে নিজেকে যে এ ভাবে তৈরি করেছি, তা নয়।

প্রশ্ন: তা হলে কোয়েল মল্লিকের রাগ আছে, না নেই?

কোয়েল: ধৈর্য খুব বেশি। হঠাৎ করে রেগে গিয়েছি, এমনটা খুব কম হয়েছে। তাই অনেকক্ষণ ধৈর্য ধরে রাখার পরে হয়তো বলি। তবে সেটাও যে খুব চেঁচামেচি করে, তা নয়। বলতে পারেন, তখন একটু কড়া হয়ে কথা বলি। খারাপ ভাবে কখনও কথা বলিনি।

প্রশ্ন: আপনাদের পেশাতেও তো ধৈর্য জরুরি

কোয়েল: পেশা বলে নয়, মানুষের জীবনে এই বিষয়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে কোনও পেশাতেই ধৈর্য দরকার। আমাদের তো বটেই। এটা ছাড়া নিজেকে ভাবতেই পারব না আমি।

প্রশ্ন: নতুন মিতিন কোয়েলকে কী কী শেখাল?

কোয়েল: মিতিন খুব দৃঢ়, আত্মবিশ্বাসী, আত্মনির্ভর একজন মহিলা, যে একজন গৃহিণী, সেই সঙ্গে গোয়েন্দাও। কে কী ভাবছে না ভাবছে, সহজে বুঝতে পারে। প্রতি বারই এই চরিত্রটা আমায় উত্তেজিত করে। ‘স্বার্থপর’-এর হল ভিজিটে গিয়েও সবাই বলছিলেন মিতিন দেখাতে চান। মিতিনের মতো আমিও সহজে মানুষ চিনতে পারি।

প্রশ্ন: অনেকেই বলেন, মেয়েদের ‘বায়োলজিক্যাল ক্লক’ আর ‘কেরিয়ার ক্লক’ একটা সময় পরস্পরের সঙ্গে সংঘাত ঘটায়। আপনার সঙ্গে হয়েছে কখনও?

কোয়েল: এটা একটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এক দিকে যেমন আমার কেরিয়ার আছে, তেমনই আমার সংসার, সন্তানদের দেখা, সেটাও কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। তাই সংঘাত শব্দটা আমি ব্যবহার করতে চাই না। ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে অভিনয় করাটাও যেমন আমার জীবনের অংশ, তেমনই কাব্য-কবীরকে বড় করা, মা-বাবার বয়স হয়েছে, তাঁদের সুযোগ-সুবিধার কথা ভাবাটাও গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ জীবনের। কোনও ক্ষেত্রেই আমি ফাঁকি বা অজুহাত দিতে পারব না। আর মানুষ হিসাবে অজুহাত ব্যাপারটাও আমার খুব বেশি পছন্দের নয়। তাই দু’দিকটাই আমি সমান ভাবে দেখার চেষ্টা করি। কবীর যেমন জানে, আমি বাড়িতে থাকলে পুরো সময়টাই ওর জন্য। তখন আমি ফোন বা টিভি দেখছি, তেমন নয়।

প্রশ্ন: তা হলে ‘একান্ত সময়’ নিশ্চয়ই পান না?

কোয়েল: ‘মি টাইম’ আমার কাছে বিলাসিতা। এক দিন কবীরকে বলেছিলাম, আমার ‘মি টাইম’ দরকার। আমার নিজের জন্য সময় দরকার। ও ভাবছে, এটা নতুন শব্দ। জিজ্ঞেস করেছিল, সেটার মানে কী? তখন ওকে বুঝিয়েছিলাম, আমি একটু নিজে নিজে একা, একা থাকতে চাই। সব শুনে আমার কোলে উঠে বসে গেল। বলল, না না মাম্মা, হবে না। নিজের মতো কথা বলতে শুরু করল। আমার মনে হয়, এটাও একপ্রকার আনন্দ।

প্রশ্ন: নিশ্চয়ই মাঝে মাঝে বিরক্ত লাগে?

কোয়েল: ধুর! বিরক্তি, আফসোস দূরের কথা। আমার মনে হয় ভগবান বলেছেন, যা ‘মি টাইম’ পাওয়ার পেয়ে গিয়েছ। তবে ওরা ঘুমিয়ে পড়লে নিজের সঙ্গে সময় কাটানোর চেষ্টা করি। একটু টিভি দেখি, বই পড়ার চেষ্টা করি। বন্ধুদের সঙ্গে অনেক দিন কথা না হলে, রাতে ওদের সঙ্গে কথা বলে নিই।

প্রশ্ন: মানুষ খুব বেশি সফল হলে তাঁদের বন্ধু, বন্ধুত্ব থাকে না আপনার বন্ধু আছে?

কোয়েল: ছোট থেকে যাঁদের সঙ্গে আমি বড় হয়েছি, তারা থাকেন। আসলে খুব বেশি বন্ধু আমার কখনও ছিল না। বন্ধুর তালিকা খুব কম। যাঁর সঙ্গে নিবিড় যোগ তৈরি হয়, তাঁর সঙ্গেই যোগাযোগ থাকে। স্কুলের কিছু বন্ধু রয়েছে। কলেজের যে প্রিয় বন্ধু আছে, তার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। আমরা একসঙ্গে ক্রিসমাস পার্টিও করলাম। অনেক দিন কথা না হলেও জানি, ও আছে।

প্রশ্ন: ২২ বছরের সফল অভিনয়জীবন, সুখী পরিবার— জীবনকে এ ভাবেই সাজাতে চেয়েছিলেন?

কোয়েল: এটা কি সম্ভব? প্রথম ছবির পরে দ্বিতীয় ছবি হবে কি না, সেটারই নিশ্চয়তা ছিল না। আগেও বলেছি এটা। কী করে যে একটার পর একটা কাজ হয়ে গেল। ২২ বছর অভিনয়জীবন, ৫০টারও বেশি সিনেমা। আমার সঙ্গে সঙ্গে একটা যুগ বড় হয়েছে। যাঁরা ছোট থেকে আমায় দেখছেন।

প্রশ্ন: যুগ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে মূলধারার বাণিজ্যিক ছবি থেকে বাংলা সিনেমার অভিমুখ বদলেছে। আগে ‘জুটি’র টানে দর্শক ভিড় জমাত। এখন পুরোটাই বদলে গিয়েছে। তা হলে কি বাংলা ছবিতে নায়ক-নায়িকার জুটির গুরুত্ব কমে যাচ্ছে?

কোয়েল: না, জুটি জুটির জায়গায় ছিল তখনও, এখনও তা-ই আছে। আমরা অভিনেতারা আলাদা করে জুটি তৈরি করি না। আমাদের কাছে চিত্রনাট্য, চরিত্র আসে। আমরা ক্যামেরার সামনে অভিনয় করি। দর্শক পর্দায় আমাদের দেখে জুটি তৈরি করে। নিজের চরিত্রের গুরুত্ব বুঝেই বরাবর কাজ করেছি, সব ছবির ক্ষেত্রে।

প্রশ্ন: ডিসেম্বরে আপনার ছবি ছাড়া আরও দুটো ছবি মুক্তি পাচ্ছে। এই বক্সঅফিস যুদ্ধ, লাভ-ক্ষতির হিসাব, সমাজমাধ্যমে তর্ক-বিতর্কের খোঁজ রাখেন?

কোয়েল: আমার জীবনে আরও অনেক কিছু আছে, যেগুলোতে মনোযোগ দিতে হয়। আমার স্বামী, উনি ছবির প্রযোজক। ওঁকে যেমন খোঁজ রাখতে হয় ইন্ডাস্ট্রির খুঁটিনাটি। আমি সৃজনশীল মানুষ। আমি সেই দিকটা ভাল বুঝি। তবে একই সঙ্গে আমি এটাও দেখি, কোন ছবি দর্শকের বেশি পছন্দ হচ্ছে। সেটা আমি বরাবরই দেখি। এমনটা নয় যে প্রযোজককে বিয়ে করেছি বলে ভাবছি। এটা বাবাই আমার মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়েছেন, যে নিজের জায়গাটাও যেমন আমি দেখব, তেমনই যেন প্রযোজকের কথাও ভাবি। যা বিনিয়োগ করা হচ্ছে, তার অনেকটাই যেন তিনি ফেরত পান। শিল্পী হিসাবে সেই দায়িত্ব আমার রয়েছে।

প্রশ্ন: প্রযোজনা সংস্থার কোনও দায়িত্ব সামলান?

কোয়েল: অনেকটাই দেখি। সৃজনশীল দিকটা দেখি। গল্প শুনি। সেখান থেকে ছবি না ওয়েব সিরিজ়, কোনটা হলে ভাল হবে, সেটা করার চেষ্টা করি। কারণ, আমাদের ‘আড্ডাটাইম্‌স’ও আছে। যতটা পারি, ততটাই দেখি।

প্রশ্ন: প্রযোজক নিসপাল সিং রানে আপনার স্বামী। আপনি ওঁর থেকে পারিশ্রমিক নেন?

কোয়েল: অবশ্যই নিই! এমনি এমনি নাকি! সেই দিক থেকে আমি আর রানে দু’জনেই খুব পরিষ্কার। ২২ বছরের অভিনয়জীবন আমার। আর আমরা বিয়ে করেছি ১২ বছর হল। ১২ বছর পারিশ্রমিক ছাড়া তো আর চলবে না। আমার আত্মসম্মানবোধ মারাত্মক। নিজের ব্যাঙ্কে টাকা, ব্যাঙ্কের বই, সব কিছুর হিসাব আছে আমার কাছে। আর আমার মনে হয়, আমি অর্থনৈতিক দিক থেকে খুবই বুদ্ধিমতী। সব মহিলাকে বলছি, আপনাদের অর্থনৈতিক সব হিসাব বাবা দেখছেন বা স্বামী দেখছেন, দয়া করে এমন করবেন না। কারণ, নিজের জায়গাটা বুঝে রাখা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ২০ বছর বয়সে প্রথম পারিশ্রমিক পাই। তখন থেকে আমার কাছে হিসাবনিকাশ খুব পরিষ্কার।

প্রশ্ন: আপনাকে এখনও ওয়েব সিরিজ়ে দেখা গেল না।

কোয়েল: সিরিজ়ের অনেক অফার পেয়েছিলাম। কিন্তু এখনও আমার মনে হয় বড়পর্দার একটা আলাদা আকর্ষণ আছে। তবে এটা ঠিক সিরিজ়ই ভবিষ্যৎ। খুব ভাল ভাল কাজ হচ্ছেও। কিন্তু আমি এখনও ওয়েব সিরিজ়ে কাজ করা নিয়ে ভাবিনি।

Koel Mallick Tollywood
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy