গ্রেফতারের পরেও সে বিভিন্ন সাহিত্যমূলক বই পড়ত। নিজেকে সেই সব সাহিত্যের চরিত্রে কল্পনাও করত। এখন আর সে সব পড়ে না। বরং ধর্মীয় বইতেই মনঃসংযোগ বেড়েছে এ রাজ্যে প্রথম ধৃত সন্দেহভাজন ইসলামিক স্টেট (আইএস) জঙ্গি মহম্মদ মসিউদ্দিন ওরফে আবু মুসার। কিন্তু তাকে সেই সব বই দিতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ জানাচ্ছে মুসার পরিবার।
২০১৬ সালের জুলাই মাসের গোড়ায় মুসাকে গ্রেফতার করেছিল সিআইডি। পরবর্তীতে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার (এনআইএ) মামলায় এখন আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে রয়েছে সে। কারা দফতর সূত্রের খবর, ‘মাল্টিপল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডারে’ ভুগছে মুসা। এর কারণ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে, এক সময়ে সংশোধনাগারেই চামচ ঘষে ধারালো অস্ত্র তৈরি করেছিল মুসা। তা দিয়ে এক কারারক্ষীকে আঘাত করেছিল। এমনকি, পাথর দিয়ে মেরেছিল সে। গরাদে দাঁত ধারও দিয়েছে মুসা। বছর ছাব্বিশের যুবকের হিংস্র আচরণে ভয়ে থাকতেন রক্ষীরা।
সাধারণত, কোনও কিছু নিয়ে মনের মধ্যে লাগাতার দ্বন্দ্ব চললে এই ধরনের আচরণের প্রকাশ হয় বলে জানাচ্ছেন মনোরোগ চিকিৎসক সুজিত সরখেল। যদিও মনোরোগ চিকিৎসক অনিরুদ্ধ দেবের দাবি, মুসার ক্ষেত্রে যা হয়েছে তাকে মাল্টিপল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার বলা যায় না। কারণ, সাহিত্য গ্রন্থ পড়ার পরে কেউ কেউ বিভিন্ন চরিত্রে নিজেকে কল্পনা করেন। পথের পাঁচালীর অপুও যা পড়ত তেমনটাই কল্পনা করত নিজেকে। যাঁদের কল্পনাশক্তি প্রবল বা যাঁরা একা অনেকটা সময় কাটান, তাঁদের ক্ষেত্রেই মাল্টিপল পার্সোনালিটি ডিসঅর্ডার দেখা যায়। এই সমস্যায় নিজের ব্যক্তিত্ব ছাপিয়ে ওঠে অন্য চরিত্র। যার সঙ্গে সত্ত্বার কোনও যোগই থাকে না।
কয়েক সপ্তাহ আগে মুসাকে কয়েকটি বই দিতে গিয়েছিলেন তার স্ত্রী। কিন্তু তা দিতে দেওয়া হয়নি বলে দাবি মুসার বাবা নাসিরুদ্দিনের। সে কারণে কয়েকটি বই ক্যুরিয়রের মাধ্যমে পাঠাতে চান বলে জানিয়েছেন তিনি। নাসিরুদ্দিনের বক্তব্য, ‘‘অনেককেই ধর্মীয় বই দিতে দেওয়া হয়। কিন্তু মুসাকে দিতে দেওয়া হয়নি।’’ যদিও সংশোধনাগার সূত্রে খবর, ওই বইগুলি ছিল মৃত্যু সম্পর্কিত। তাই তা দিতে দেওয়া হয়নি। উল্লেখ্য, সংশোধনাগারে আবাসিকদের জন্য কোন বই এবং কী কী ঢুকতে দেওয়া হবে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেন সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী সংস্থা। সংশোধনাগারে আবাসিক যে সংস্থার মামলায় বন্দি রয়েছেন, তারাই স্থির করে।
কারা দফতর সূত্রের খবর, এখন আর আগের মতো আক্রমণাত্মক নেই মুসা। অনেকটাই রক্ষণাত্মক সে। তবে তার আচরণ নিয়ে স্পষ্ট করে কোনও মন্তব্য করা যায় না বলেই মত কর্তাদের। এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘আগে থেকে আঁচ করা যায় না মুসাকে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy