Advertisement
E-Paper

নিহতের পরিচয় অজানা, আটকে ছয় খুনের তদন্ত

খুন যারা করেছে, ‘দিওয়ার’ নির্ঘাত তাদের প্রিয় ছবি। এই নিয়ে গোয়েন্দারা মোটামুটি নিশ্চিত। বিশেষ করে ছবির ওই জায়গাটা। যেখানে বিজয় ওরফে অমিতাভ বচ্চনের হাতে লিখে দেওয়া হবে ‘মেরা বাপ চোর হ্যায়।’ সেই ঢঙেই খুন করার পরে যুবকের জামার পিছনে খুনিরা লিখে দেয়, ‘চোর হুঁ ম্যায়।’ তবে বাংলা হরফে।

সুরবেক বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ৩১ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৪৪
১৭ অগস্ট উদ্ধার হওয়া যুবক।

১৭ অগস্ট উদ্ধার হওয়া যুবক।

খুন যারা করেছে, ‘দিওয়ার’ নির্ঘাত তাদের প্রিয় ছবি। এই নিয়ে গোয়েন্দারা মোটামুটি নিশ্চিত। বিশেষ করে ছবির ওই জায়গাটা। যেখানে বিজয় ওরফে অমিতাভ বচ্চনের হাতে লিখে দেওয়া হবে ‘মেরা বাপ চোর হ্যায়।’ সেই ঢঙেই খুন করার পরে যুবকের জামার পিছনে খুনিরা লিখে দেয়, ‘চোর হুঁ ম্যায়।’ তবে বাংলা হরফে। ওটা আবার শহিদ কপূর, সোনাক্ষী সিংহের ‘আর...রাজকুমার’ ছবির ‘মত মারি’ গানের একটি কলি।

বছর চল্লিশের ওই নিহত যুবকের চুলও খাবলা খাবলা করে কাটা। চোরকে ধরে অনেক সময়ে যেমন শাস্তি দেওয়া হয়। তদন্তকারীদের ধারণা, হয় চুরি করে ধরা পড়ায় তাঁকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, নয় তো কোনও কারণে খুন করার পরে ঘটনাটিকে অন্য চেহারা দিতে তাঁকে চোর সাজানো হয়েছে। আর বাংলা হরফে ‘চোর হুঁ ম্যায়’ লেখা থেকে মনে হচ্ছে, খুনিরা বাংলাভাষী।

কিন্তু খুনিদের ধরা তো দূরস্থান, দেড় বছর কেটে গেলেও রাজাবাগান এলাকার হাট লাগোয়া লরি দাঁড়ানোর জায়গায় উদ্ধার হওয়া যুবকের পরিচয় আজ পর্যন্ত জানা যায়নি। গত বছর ৬ এপ্রিল ভোরে লরিগুলি চলে গিয়ে জায়গাটি ফাঁকা হওয়ার পরেই স্থানীয় ব্যবসায়ীদের চোখে পড়ে মৃতদেহটি। পাশে একটি বস্তা পড়ে। বস্তায় পুরে লরিতে এনে দেহটি ফেলে দেওয়া হয়েছে বলেই গোয়েন্দাদের ধারণা।

তবে ওই যুবকের মতোই জানা যায়নি, গায়ে সাদার উপরে কালো ডোরা কাটা জামা ও নিম্নাঙ্গ অনাবৃত বছর পঁচিশের তরুণীর নাম। যাঁকে মুখ চেপে শ্বাসরোধ করে খুন করে গঙ্গায় ভাসিয়ে দেওয়া হয় এবং রামকৃষ্ণপুর ঘাটে ২০১৪-এর অগস্ট মাসের প্রথম দিনে যাঁর দেহ উদ্ধার হয়। খুনের মামলাটি রুজু করা হয় সে মাসের ২৫ তারিখ, ময়না-তদন্তের রিপোর্ট হাতে আসার পরে।

গত আড়াই বছরে ছ’টি খুনের মামলায় লালবাজারের গোয়েন্দারা কার্যত এক চুলও এগোতে পারেননি মূলত একটাই কারণে। মৃতদেহ যাঁদের, তাঁদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। কিন্তু রেকর্ডে থেকে যাচ্ছে, এই সব খুনের কিনারা করতে ব্যর্থ হয়েছেন লালবাজারের দুঁদে গোয়েন্দারাও। সেই জন্যই মৃতদেহ অজ্ঞাতপরিচয় থেকে যাওয়ায় ফাঁপরে পড়েছে কলকাতা পুলিশ।

লালবাজার সূত্রের খবর, এঁদের মধ্যে সব চেয়ে নৃশংস ভাবে খুন করা হয় ৩৫ বছরের এক যুবককে। লাল রঙের তিনটে নাইলনের দড়ি দিয়ে হাত-পা শক্ত করে বেঁধে মাথায় আঘাত করে তাঁকে খুন করা হয়েছিল। সেই দেহ ভেসে ওঠে রতনবাবুর ঘাটে। সেটা ২০১৪-র ৪ জুনের ঘটনা। উত্তর বন্দর থানায় খুনের মামলা রুজু করা হয় ৭ জুন।

কালো ডোরা কাটা জামা পরা মহিলাকে খুনের মামলাটিও রুজু করা হয়েছিল একই থানায়।

নিহত যে ছ’জনের দেহ শনাক্ত করা যায়নি, তাঁদের মধ্যে চার জনের ক্ষেত্রেই মামলা রুজু করা হয়েছে উত্তর বন্দর থানায়। কারণ, ওই দেহগুলি জলে ভেসে আসা। এই সবই আবার ২০১৪-র মামলা। সে বছর ১৯ মার্চ গঙ্গায় বছর তিরিশের এক যুবকের মুণ্ডহীন দেহ পাওয়া যায়। মুণ্ড কিন্তু গঙ্গায় পাওয়া যায়নি। ২২ এপ্রিল রুজু করা হয় খুনের মামলা। যখন অটোপ্সি সার্জন লিখিত ভাবে জানান, গলা কাটার ফলেই ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। একই ভাবে সে বছর ২০ এপ্রিল আর একটি মুণ্ডহীন লাশ গঙ্গায় মেলে। যাঁর দেহ, সেই ব্যক্তির বয়স বছর চল্লিশেক।

উত্তর বন্দর থানার চারটি মামলা ছাড়া বাকি যে দু’টি খুনের মামলায় লাশ শনাক্ত করা যায়নি, তার একটি মামলা রুজু হয় ২০১৫-র ৬ এপ্রিল রাজাবাগানে। সেই যেখানে নিহতের জামার পিছনে লিখে দেওয়া হয় ‘চোর হুঁ ম্যায়।’ খুনের অন্য মামলাটি এ বছর ১৭ অগস্ট ময়দান থানার।

ওই দিন সকালে দ্বিতীয় হুগলি সেতুর এজেসি বসু রোড র‌্যাম্পের নীচ থেকে উদ্ধার করা হয় এক যুবকের রক্তাক্ত দেহ, যা ভরা ছিল একটি ড্রামে। ভোঁতা কিন্তু খুব ভারী আর বড় কিছু দিয়ে ওই যুবকের মুখমণ্ডল আর বুকের উপরে সজোরে আঘাত করার ফলে তাঁর মৃত্যু হয়। ওই সব জায়গার হাড় গুঁড়িয়ে গিয়েছে। তবে ওই ভারী বস্তুটির সঙ্গে ধারালো কিছু আটকানো ছিল বলে মনে হচ্ছে তদন্তকারীদের। যার ফলে বাঁ কানের পিছনটা কেটে গিয়েছে। বছর পঁয়ত্রিশের ওই যুবকের বাঁ হাতে উল্কি দিয়ে বাংলা হরফে কিছু লেখা। তবে সেটা ‘রানা’ নাকি ‘রমা, গোয়েন্দারা বুঝতে পারছেন না।

গোয়েন্দাদের সন্দেহ, রাতে র‌্যাম্পের যেখান থেকে মৃতদেহ-সহ ড্রাম নীচে ফেলা হয়, সেখানে উপরের র‌্যাম্পের ছায়া পড়ায় অন্ধকার থাকে। দুষ্কৃতীরা তার মানে রীতিমতো অন্দিসন্ধি জেনেই সব কাজ করেছে। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, যাতে মৃতদেহটি ভরা ছিল, সেই ধরনের ড্রাম আদতে রাসায়নিক রাখা হলেও পরে সেটি সুবিধে মতো কেটে নিয়ে, মুখে মোটা নাইলনের জাল লাগিয়ে জিওল মাছ রাখা হত। এক গোয়েন্দা অফিসারের কথায়, ‘‘সম্ভবত ওই ড্রামে হাইব্রিড মাগুর রাখা হত। না হলে অতটা মোটা জাল ড্রামের মুখে থাকার কথা নয়।’’

নিহতের পরিচয় জানতে গোয়েন্দারা দক্ষিণ শহরতলির ভাঙড়, ঘটকপুকুর, নেপালগঞ্জ, মালঞ্চ-সহ বিভিন্ন স্থানীয় মাছের বাজারে ওই যুবকের ছবি-সহ লিফলেট বিলি করেছেন। এখনও ইতিবাচক কোনও খবর আসেনি। লালবাজারের এক কর্তার কথায়, ‘‘নিহতের পরিচয় জানা গেলেই এই খুনের কিনারা হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’’

Murder Police Detectives
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy