বিস্ফোরণস্থল পরীক্ষা করছেন সিআইডি-র গোয়েন্দারা।নিজস্ব চিত্র
নাগেরবাজারে বিস্ফোরণের ৩৬ ঘণ্টা পরেও কার্যকারণ ঘিরে অন্ধকার বিন্দুমাত্র কাটেনি। বুধবার ঘটনার তদন্তভার তুলে দেওয়া হয় সিআইডি-র হাতে। কিন্তু তদন্তে নেমে পদে পদে হোঁচট খেয়েছেন গোয়েন্দারা। সৌজন্যে দমদম থানার পুলিশ। ফরেন্সিক পরীক্ষার আগেই মঙ্গলবার বিকেলে পুরসভাকে দিয়ে ঘটনাস্থল ধুয়েমুছে সাফ করিয়ে দিয়েছে তারা।
এ দিন কাজিপাড়ার ঘটনাস্থলে যায় সিআইডি এবং কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির দল। আহতরা কে কোথায় পড়ে ছিলেন তার বিশদ বিবরণ নেন তদন্তকারীরা। ছবিও জোগ়়াড় করেন। কথা বলেন প্রত্যক্ষদর্শী ও আশপাশের আবাসনের বাসিন্দাদের সঙ্গে। বোমার স্প্লিন্টারের আঘাত খতিয়ে দেখেন। সিআইডি সূত্রের খবর, প্রাথমিক পরীক্ষায় সকেট বোমাটিতে বিস্ফোরক হিসেবে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট এবং স্প্লিন্টার হিসেবে জালকাঠির উপস্থিতি মিলেছে। গন্ধকের প্রমাণ মেলেনি। কিন্তু শুধু অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বিস্ফোরণ ঘটাতে পারে না। আবার ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পক্ষ থেকে এ দিন নবান্নে যে প্রাথমিক রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে, তাতে বলা হয়েছে, বোমাতে ডিটোনেটর বা ব্যাটারির ছেঁড়া তার মেলেনি। তদন্তকারীদের একাংশের বক্তব্য, বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থলে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন নেতা-মন্ত্রীরা। তার পরে জল ঢেলে জায়গাটা ধুয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে অন্য কী রাসায়নিক ছিল, তা বোঝা সম্ভব নয়। এখন ফরেন্সিকের রিপোর্টই ভরসা।
সিআইডি সূত্রে বলা হচ্ছে, এই সকেট বোমাটি আর পাঁচটি সকেট বোমার মতো নয়। লম্বায় আট ইঞ্চি, চার ইঞ্চি ব্যাসবিশিষ্ট সোজা একটি ধাতব নলের মধ্যে আরেকটি নল ছিল। তার ভিতরে বিস্ফোরক ছিল। ধাতব নলটির এক দিক ঝালাই করে বন্ধ করা ছিল। অন্য দিক তুলনায় আলগা। বিস্ফোরণের সময় সকেটের ভিতরে যে প্রবল চাপ তৈরি হয়েছিল, তার জেরে ওই আলগা অংশটি প্রবল বেগে বাইরে বেরিয়ে আসে এবং একাধিক লোকের শরীর ফালা ফালা করে দেয়।
নবান্নের একাংশের দাবি, সকেট বোমা লাল়গড়ে মাওবাদীরা ব্যবহার করত। তবে ‘এল’ আকৃতির সেই বোমায় ডিটোনেটরও থাকত। বাংলাদেশের জামাতুল মুজাহিদিন (জেএমবি) সকেট বোমা বিস্ফোরণে সিদ্ধহস্ত। গোয়েন্দাদের বক্তব্য, সকেট বোমার আঁতুড়ঘর মুর্শিদাবাদ, বীরভূম। ওই দুই জেলায় জেএমবি, আনসারুল্লা বাংলা টিমের ঘাঁটির সন্ধান মিলেছে। দমদমের মতো মিশ্র জনবহুল এলাকাতেও কোনও জঙ্গি সংগঠন লুকোনো ঘাঁটি বা ‘স্লিপার সেল’ তৈরি করছে কি না, সেটাও খতিয়ে দেখার। তবে এই বিস্ফোরণের পিছনে নাশকতার উদ্দেশ্য ছিল না বলেই মনে করছেন তদন্তকারীদের একাংশ। তাঁদের মতে, নাশকতা করতে হলে কাজিপাড়ায় বিস্ফোরণ ঘটানো হত না। জমিয়ে রাখা বিস্ফোরক পড়ে গিয়ে বা গরম হয়ে গিয়ে ফেটে গিয়েছে বলেই ওই গোয়েন্দাদের অভিমত। এক তদন্তকারী বলেন, ‘‘দমদম এবং লাগোয়া অর্জুনপুর, হাতিয়াড়া, কৈখালি এলাকায় বেশ কিছু দুষ্কৃতী দল রয়েছে। তাদের সম্পর্কেও তথ্য জোগাড় করতে বলা হয়েছে।’’
আবার সন্দেহের ঊর্ধ্বে রাখা হচ্ছে না ফল বিক্রেতা অজিত হালদার-সহ কোনও আহতকেই। কারণ, তাঁরাই কেউ বোমাটি নিয়ে যাচ্ছিলেন কি না, সেটা স্পষ্ট নয়। আবার ফলের দোকানের পিছনে বোমাটি লুকিয়ে রাখা হয়েছিল কি না, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অজিতের বোন যমুনা মণ্ডল প্রাথমিক ভাবে যে বিবৃতি দিয়েছেন, তার ভিত্তিতে তাঁকে ফের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। কথা বলা হবে অন্য আহতদের সঙ্গেও।
তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে এই ঘটনা কি না, তা নিয়েও জল্পনা চলেছে দিনভর। যদিও সেই সম্ভাবনা খারিজ করে দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান পাচু রায় বলেন, ‘‘নিজেদের মধ্যে গোলমালের জেরে কেউ আমাকে মারতে চাইলে তো একটা গুলি করলেই হত।’’ শাসক দলের অস্বস্তি এড়াতেই কি তড়িঘড়ি ঘটনাস্থল ধুয়ে ফেলা হয়? চেয়ারম্যানের জবাব, ‘‘পুলিশের কর্তারা চেয়েছিলেন বলেই পুরসভা সাফ করেছে। আমি তো আর পুলিশের চেয়ে বেশি বুঝি না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy