Advertisement
E-Paper

আধ ঘণ্টায় হাওয়া ফলক

সোনালি রঙের বাংলা ও রোমান হরফে লেখা সেই ফলকটি দ্বিতীয় বার মেয়র পদে বসে তৈরি করিয়েছিলেন শোভন। বলতেন, ‘‘কলকাতার মেয়র বলে কথা! দেশ-বিদেশের অনেকেই দেখা করতে আসেন। অফিসটা তো কর্পোরেট করতে হবে।’’

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৩ নভেম্বর ২০১৮ ০১:৪০
অপসারণ: কলকাতা পুরসভায় মেয়রের ঘরের সামনে থেকে সরানো হচ্ছেৈ শোভন চট্টোপাধ্যায়ের নামের ফলক। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

অপসারণ: কলকাতা পুরসভায় মেয়রের ঘরের সামনে থেকে সরানো হচ্ছেৈ শোভন চট্টোপাধ্যায়ের নামের ফলক। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

বৃহস্পতিবার বিকেলে পরবর্তী মেয়রের নাম তখনও ঘোষণা হয়নি। তার আগেই কলকাতা পুরসভার সদর দফতরে ছেনি-হাতুড়ির ঘা পড়ল মেয়রের ঘরের বাইরে, ‘শোভন চট্টোপাধ্যায়’ লেখা নামের ফলকে। সোনালি রঙের বাংলা ও রোমান হরফে লেখা সেই ফলকটি দ্বিতীয় বার মেয়র পদে বসে তৈরি করিয়েছিলেন শোভন। বলতেন, ‘‘কলকাতার মেয়র বলে কথা! দেশ-বিদেশের অনেকেই দেখা করতে আসেন। অফিসটা তো কর্পোরেট করতে হবে।’’ মাত্র আধ ঘণ্টায় খুলে ফেলা হল সব কিছু! এবং তা হল নবান্নের নির্দেশেই।

এ দিন সকালে কিন্তু অন্য চেহারা ছিল পুরভবনের। মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে জানিয়েছিলেন, শোভনকে মেয়র পদ ছাড়তে বলা হয়েছে। যা শুনে পুরকর্তারা ধরেই নিয়েছিলেন, বুধবার ছুটির দিন হলেও শোভনবাবু পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেবেন। সেই মতো ছুটির দিনেও পুর কমিশনার-সহ পদস্থ অফিসারেরা হাজির ছিলেন পুরভবনে। মেয়র ইস্তফা দিতে পারেন ভেবে দলের নির্দেশে পুরসভায় প্রায় চার ঘণ্টা অপেক্ষা করেন চেয়ারপার্সন মালা রায়। কিন্তু জমা পড়েনি মেয়রের ইস্তফা।

দলের তরফে ঠিক করা হয়েছিল, ইস্তফা না দিলে মেয়রের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হবে। তা করতে গেলে আইন কী রয়েছে, তা-ও জানতে চাওয়া হয় পুর প্রশাসনের কাছে। বৃহস্পতিবার তড়িঘড়ি বৈঠক ডাকা হয় পুরসভার পরবর্তী দলনেতা নির্বাচন করার জন্য। যদিও তত ক্ষণে শাসক এবং বিরোধী দলের অনেক কাউন্সিলরই জেনে গিয়েছেন, পরবর্তী মেয়র হচ্ছেন ফিরহাদ হাকিম।

এ দিন তাই সকাল থেকেই টান টান উত্তেজনা ছিল পুর মহলে। সকলের একটাই প্রশ্ন, শোভন কখন ইস্তফা দেবেন? না কি নতুন কোনও ‘অঘটন’ ঘটবে? সকাল দশটায় অফিস খোলার পরে সময় যত গড়িয়েছে, ততই পারদ চড়েছে উত্তেজনার। কর্মীরা কাজ ছেড়ে ভিড় করেছেন মেয়রের ঘরের সামনে করিডরে। আর বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের জনা পঞ্চাশ প্রতিনিধি পুরভবন জুড়ে কার্যত দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। বেলা সাড়ে ১১টার পরে মালাদেবীও পুরভবনে চলে আসেন। পুর কমিশনার খলিল আহমেদ ও পুরসভার সচিব হরিহরপ্রসাদ মণ্ডলকে ডেকে পাঠান তিনি। পুরসভা সূত্রের খবর, শোভন পদত্যাগপত্র না দিলে কী করণীয়, তা নিয়ে আলোচনা করেন অফিসারদের সঙ্গে। সেই মতো অফিসারেরা কাগজপত্র তৈরির কাজও শুরু করতে থাকেন। এর মধ্যেই খবর আসে, শোভন ইস্তফাপত্র পাঠাচ্ছেন রক্ষীর হাতে। তবে নিজে আসছেন না।

আবার হুড়োহুড়ি। কোন নিরাপত্তারক্ষী ওই চিঠি নিয়ে আসছেন, তা দেখতে উপরে, নীচে তখন অজস্র চোখ। দুপুর সওয়া একটার পরে পুরভবনের পিছন দিক থেকে ঢুকে ওই নিরাপত্তারক্ষী মালাদেবীর হাতে খামে ভরা সেই চিঠি দিয়ে যান। ওই নিরাপত্তারক্ষীর ছবি তোলার জন্য প্রায় মারামারি শুরু হয়ে যায় আলোকচিত্রীদের মধ্যে। কিন্তু চিঠিটি কাউকে দেখাতে চাননি চেয়ারপার্সন। শুধু বলে দেন, ‘‘শোভনবাবুর ইস্তফাপত্র আমার কাছে জমা পড়েছে।’’ ফের এক বার ডাক পড়ে পুর কমিশনার-সহ অফিসারদের। তার পরেই তিনি জানিয়ে দেন, মেয়র ইস্তফা দেওয়ায় ডেপুটি মেয়র-সহ সমস্ত মেয়র পারিষদ পদ নিষ্ক্রিয় হয়ে গেল। পরবর্তী মেয়র দায়িত্ব নেওয়ার আগে পর্যন্ত মেয়র পরিষদের কোনও অস্তিত্ব থাকবে না। সে সময়ে দেবাশিস কুমার, অতীন ঘোষ, অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়ের মতো একাধিক মেয়র পারিষদ নিজের ঘরেই ছিলেন। তবে কেউ কোনও কাগজে সই করতে চাননি।

KMC Mayor Sovan Chatterjee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy