Advertisement
E-Paper

অসুস্থ পোষ্যের চিকিৎসায় নতুন উদ্যোগ শহরে

শুধু গরমের সময়েই নয়, সারা বছর ওদের চিকিৎসায় অন্য মেট্রো শহরের তুলনায় কলকাতা যে বেশ কিছুটা পিছিয়ে, তা মানছেন শহরের পশু চিকিৎসকদের একাংশ।

জয়তী রাহা

শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৯ ০২:০৯
পোষ্যদের জন্য নয়া অপারেশন থিয়েটার। সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ে। নিজস্ব চিত্র

পোষ্যদের জন্য নয়া অপারেশন থিয়েটার। সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ে। নিজস্ব চিত্র

জ্বালাপোড়া গরম কমার নামগন্ধ নেই। তীব্র তাপের মোকাবিলায় চিকিৎসকেরা বিভিন্ন দাওয়াই দিচ্ছেন। অথচ অনেকের বাড়িতেই যে পোষ্যেরা থাকে, তাদের কষ্ট নিয়ে মাথা ঘামান ক’জন? গরমে অসুস্থ হলে তাদের পরিচর্যার জন্য শহরে কী ব্যবস্থা আছে?

উত্তর জানা নেই অনেক পোষ্যের মালিকেরই। সদ্য একটি বাচ্চা ল্যাব্রাডর ঘরে এনেছেন কর্পোরেট সংস্থায় কর্মরত এক তরুণী। গরমে পোষ্যের কষ্ট দেখে বেজায় ঘাবড়েছেন তিনি। শুধু পোষ্যের জন্যেই ঘরে এসি চলছে একটানা। এর জেরে যে বিরূপ হতে পারেন লক্ষ্মী ও বিশ্বকর্মা দুই-ই, তা জেনেও নিরুপায় তিনি। তাঁর মতো অবস্থা অনেকেরই। তাঁদের প্রশ্ন, “ওরা অসুস্থ হলে যাব কোথায়?”

শুধু গরমের সময়েই নয়, সারা বছর ওদের চিকিৎসায় অন্য মেট্রো শহরের তুলনায় কলকাতা যে বেশ কিছুটা পিছিয়ে, তা মানছেন শহরের পশু চিকিৎসকদের একাংশ। চিকিৎসক সুবীর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বেলগাছিয়া পশু হাসপাতাল, বেসরকারি কয়েকটি ক্লিনিক ছাড়া পোষ্যদের জন্য হাসপাতালের পরিকাঠামো এ শহরে প্রায় নেই। এই অবস্থার পরিবর্তন জরুরি।’’ তবে সাদার্ন অ্যাভিনিউ এবং সল্টলেকে সম্প্রতি শুরু হওয়া একটি ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট ও চিকিৎসাকেন্দ্র অবশ্য ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, সেই খরা কাটানোর একটা সূচনা হয়েছে। ওই দু’জায়গায় আছে পোষ্যদের জন্য ভেন্টিলেশন যন্ত্রও।

পোষ্যদের ভেন্টিলেশন যে জরুরি, মানছেন লেক মার্কেটের কাছে ৩৬ বছরের পুরনো পশুদের একটি ক্লিনিকের কর্ণধার। ক্লিনিকের তরফে রানা গঙ্গোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘এটি ব্রহ্মাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে হতে পারে। অস্ত্রোপচারের পরে বা অ্যানাস্থেশিয়ার কারণে অনেক সময়েই রোগীর সেই ‘সাপোর্ট সিস্টেম’ দরকার হয়।’’

সাদার্ন অ্যাভিনিউয়ের অনিল রায় রোডের ওই সংস্থার এক অধিকর্তা শুভায়ন গঙ্গোপাধ্যায় জানান, ন’টি বেড়াল এবং ১৬টি ছোট-বড় কুকুরকে রেখে চিকিৎসা করানোর ব্যবস্থা থাকছে সেখানে। সকাল ১০টা থেকে ১২ ঘণ্টা বহির্বিভাগ, পরবর্তী ১২ ঘণ্টা জরুরি বিভাগ খোলা থাকবে। একটি অপারেশন থিয়েটার, ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিট এবং ভেন্টিলেশন যন্ত্র থাকছে। পোষ্যদের উপযুক্ত এক্স-রে মেশিন, প্যাথোলজিক্যাল ল্যাবরেটরিও আছে সেখানে। শুভায়নবাবু বলছেন, “এখানে কুকুর, বেড়াল, খরগোশ, গিনিপিগ, পাখির চিকিৎসা হবে। ২৪ ঘণ্টার পরিষেবা চালু হয়েছে। আগামী মাস থেকেই শুরু হচ্ছে বাকি পরিষেবা।” সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, মর্গ এবং ময়না-তদন্তের ব্যবস্থা থাকছে না। তবে চিকিৎসার পাশাপাশি ডে-কেয়ারের ব্যবস্থা থাকছে।

সম্প্রতি সল্টলেকের ন’নম্বর ট্যাঙ্কের কাছে প্রশাসনিক ভবনের বিপরীতে শুরু হয়েছে পোষ্যদের জন্য বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থা। সংস্থার তরফে পশুপ্রেমিক অরিজিৎ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘সকাল ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত চিকিৎসা মিলবে। এক সঙ্গে দু’টি পোষ্যকে রেখে চিকিৎসা করা যাবে। থাকছে ওটি, ভেন্টিলেশন, প্যাথোলজি, এক্স-রে প্রভৃতির ব্যবস্থা। এমনকি অ্যাম্বুল্যান্সও থাকবে সেখানে। আগামী মাস থেকে শুরু হচ্ছে অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা।

হাসপাতালে রেখে পোষ্যের চিকিৎসা করানোর পরিকাঠামো এ শহরে প্রায় নেই বলে মেনে নিচ্ছেন ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অব অ্যানিমেল অ্যান্ড ফিশারিজ সায়েন্সেসের উপাচার্য পূর্ণেন্দু বিশ্বাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন বেলগাছিয়ায় রয়েছে একটি পশু হাসপাতাল। পূর্ণেন্দুবাবু বলেন, “পোষ্যদের অস্ত্রোপচার, ডায়ালিসিস, এন্ডোস্কোপি, এক্স-রে হয়। লোকের অভাব থাকায় রেখে চিকিৎসা করানো সম্ভব নয়। বাড়তে থাকা পোষ্যের সংখ্যা বিচার করলে শহরে পরিষেবা আরও বাড়াতে হবে।”

অভিমানী পোষ্যেরা মালিককে খোঁজে। তাই ওদের অন্যত্র রেখে চিকিৎসার পক্ষপাতী নন অনেকে। যদিও ব্যস্ততার যুগে হাসপাতালে রেখেই পোষ্যের চিকিৎসা করানোর পরিকাঠামো খুঁজছে ছোট পরিবারগুলি।

Animal Health Animal Hospital
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy