কথায় আছে, কারও পৌষ মাস তো কারও সর্বনাশ! এ যেন ঠিক তা-ই। শুক্রবার কলকাতা হাই কোর্ট পুজো মণ্ডপ দর্শকশূন্য রাখার রায় দিতেই মুখ ভার হয়েছে শহরের পুজো উদ্যোক্তাদের। আর ঠিক তখনই ভ্রমণপ্রেমীদের বাইরে যাওয়ার আগ্রহ বাড়ায় হাসি চওড়া হয়েছে পর্যটন ব্যবসায়ীদের। ট্রেনের টিকিট জোগাড় করে দেওয়া থেকে হোটেলের ঘর বুকিং— কাতর আবেদন সামলাতে এক প্রকার নাজেহাল অবস্থা তাঁদের।
প্রাক্-করোনা সময়ের মতো মাস তিনেক আগে থেকে পালে সে ভাবে হাওয়া না লাগলেও করোনা সংক্রমণ খানিকটা নিম্নমুখী হতেই পর্যটন শিল্পে উৎসাহের মৃদু হাওয়া বইতে শুরু করেছিল। পুজোর মুখে সংক্রমণ যত কমেছে, ততই বেড়েছে সেই হাওয়ার গতি। এর মধ্যেই শুক্রবার কলকাতা হাই কোর্ট গত বছরের মতো পুজোয় মণ্ডপ দর্শনার্থীশূন্য রাখার নিদান দিয়েছে। ফলে, এই বছরও পুজো দেখার আনন্দ মাটি হওয়া এক প্রকার নিশ্চিত বুঝে ঘরে বসে ছুটি নষ্ট করতে চাইছেন না অনেকেই। বরং লম্বা ছুটিকে কাজে লাগিয়ে রাজ্য অথবা রাজ্যের বাইরে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন শহরবাসীর একাংশ।
এ শহরের পর্যটন ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, শুক্রবারের পরে সেই ঝোঁক কয়েক গুণ বেড়ে গিয়েছে। তবে রাজ্যের মধ্যেই ঘুরতে যাওয়ার প্রবণতা সব থেকে বেশি। অনেকেই উত্তরবঙ্গের দার্জিলিং, ডুয়ার্সের পাশাপাশি শান্তিনিকেতন, পুরুলিয়া, দিঘায় পুজোর ক’দিন কাটাতে চাইছেন। দক্ষিণ কলকাতার একটি ভ্রমণ সংস্থার কর্ণধার সুমনা মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘পুজোয় বেড়াতে যাওয়ার চাহিদা কিছু দিন আগে থেকেই মোটামুটি শুরু হয়েছিল। অনেকে ট্রেনের টিকিট কাটা থেকে শুরু করে হোটেলও বুক করে রেখেছিলেন। কিন্তু পুজোয় মণ্ডপে ঢুকে প্রতিমা দর্শন এ বছরও বন্ধ রাখার নির্দেশ আসার পরে আরও অনেকে শহরে না থেকে বেড়িয়ে আসার পরিকল্পনা করে ফেলেছেন। ঘন ঘন ফোন আসছে।’’ কার্যত একই বক্তব্য শহরের ছোট-বড় সব ভ্রমণ সংস্থারই।
তবে পুজোর মাত্র দশ দিন আগে ট্রেনের টিকিট আর মিলবে কি না, তা নিয়েও আশঙ্কা থাকছে। সে ক্ষেত্রে অনেকে গাড়ি ভাড়া করে কাছেপিঠে কোথাও ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা সেরে ফেলেছেন। হঠাৎ চাহিদা বাড়ায় গাড়ির ভাড়া বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ভ্রমণ ব্যবসায়ে জড়িতেরা। শনিবার উত্তর কলকাতার একটি ভ্রমণ সংস্থায় এসেছিলেন শ্যামবাজারের বাসিন্দা নীলিমেশ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘‘এ বছর গোটা পুজোর ছুটিতে কলকাতার বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল না। কিন্তু হাই কোর্টের রায়ে তো আর পুজোর ক’দিন ঠাকুর দেখার কোনও উপায় থাকছে না। তাই উত্তরবঙ্গে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলাম। কিন্তু ট্রেনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না! টিকিট না পেলে বাধ্য হয়েই গাড়ি ভাড়া করে কাছেপিঠে কোথাও যেতে হবে।’’
যদিও ‘ট্র্যাভেল এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল’ (ট্যাব)-এর প্রেসিডেন্ট কৌশিক কর বললেন, ‘‘গত বছর তো পুজোয় কোনও চাহিদাই ছিল না। এ বছর করোনার প্রকোপ তুলনামূলক ভাবে কম থাকায় এবং বড় অংশের মানুষ প্রতিষেধক নিয়ে নেওয়ায় বেড়াতে যাওয়ার প্রবণতা বেড়েছিল। অনেকেই আবার আগে থেকে হোটেল বুকিং না করলেও ট্রেনের টিকিট কেটে রেখেছিলেন। ভেবেছিলেন, করোনার প্রকোপ বাড়লে টিকিট বাতিল করে দেবেন। কিন্তু সংক্রমণ তেমন না বাড়ায় যাত্রা বাতিলের আশঙ্কা যেমন কমল, তেমনই হাই কোর্টের রায়ের পরে বেড়াতে যাওয়ার চাহিদাও বেড়েছে বেশ কিছুটা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy