স্কুটারে কৈলাস মোহতা। নিজস্ব চিত্র।
স্কুটারই তাঁর সর্ব ক্ষণের সঙ্গী। একটি চার চাকার গাড়িও রয়েছে তাঁর। ভিন্ রাজ্যে গেলে ওই গাড়িতেই বেরিয়ে পড়েন ব্যবসায়ী কৈলাস মোহতা। বড়বাজারে তাঁর যন্ত্রাংশের দোকান। ওই স্কুটারে করে হাজরা থেকে তিনি প্রতি দিন কর্মস্থলে যাতায়াত করেন। একই সঙ্গে ব্যবসার জন্যে এ দিক ও দিকে যাওয়া-আসা তো লেগেই থাকে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বেরলেও কখনই হর্ন বাজান না তিনি!
শব্দদৈত্যকে জব্দ করতে গত ৩০ বছর ধরে এ ভাবেই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন কৈলাস। সমাজের সব স্তরের মানুষকে সচেতন করতে তিনি স্কুটারের হ্যান্ডলে প্ল্যাকার্ড লাগিয়ে যাতায়াত করেন। শুধু তাই নয়, তাঁর পোশাকে শব্দ দূষণ নিয়ে নানা বিষয়ে লেখা রয়েছে।
কৈলাসের এই উদ্যোগ কলকাতা পুলিশেরও চোখ এড়ায়নি। সম্প্রতি তাঁকে সঙ্গে নিয়ে শব্দ দূষণের বিরুদ্ধে উদ্যোগী হয়েছে ট্রাফিক পুলিশ। অযথা হর্ন বাজালে জরিমানাও করা হচ্ছে বাইক এবং গাড়ি চালকের।
আরও পড়ুন: উর্দি পরে মমতাকে পা ছুঁয়ে প্রণাম, বিতর্কে আইজি রাজীব মিশ্র
কেন প্রায় তিন দশক ধরে কৈলাস এমন কাজ করছেন? ওই ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে পাশ করার পর তিনি আমেরিকা গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি উপলব্ধি করেন, গাড়িচালকেরা অযথা হর্ন বাজান না। আশির দশকে আমেরিকায় বছর দেড়েক থাকার পর এমনই অভিজ্ঞতা নিয়ে কলকাতায় ফিরে কৈলাসও ঠিক করেন, গাড়ি বা বাইক চালালে তিনিও কোনও দিন আর হর্ন বাজাবেন না। কৈলাসের কথায়, “আমার প্রথম ড্রাইভিং লাইসেন্স সেই ১৯৮৮ সালে। আমেরিকা থেকে ফেরার পর ১৯৮৪ সালে আমি ঠিক করি আর হর্ন বাজাব না। বিদেশে গিয়ে দেখেছি, সেখানে খুব দরকার না পড়লে গাড়িচালকেরা হর্ন বাজান না। কিন্ত এখানে এমন পথ সংস্কৃতি নেই। আমার শহরে দিন দিন শব্দ দূষণ বাড়ছে। চেষ্টা করছে সহ নাগরিকদের এ বিষয়ে সচেতন করা।”
ইতিমধ্যেই কৈলাসকে কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের তরফে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। গত সোমবারে ‘পথ নিরাপত্তা সপ্তাহ’-এর আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন কলকাতার পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা। দুর্ঘটনা রুখতে বিভিন্ন বিষয়ে যেমন নজর রয়েছে পুলিশের, তেমনই শব্দ দূর্ষণ রুখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্তারা। ইতিমধ্যে কলকাতার ৭০০টি জায়গাকে নো হর্ন জোন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
শব্দ দূষণ রুখতে উদ্যোগী ট্রাফিক পুলিশ। নিজস্ব চিত্র।
এ প্রসঙ্গে পরিবেশকর্মী নব দত্ত বলেন, “গাড়ি-বাইকের সংখ্যা বেড়েছে। এখন কলকাতায় শব্দের মাত্রা বেশি। পুলিশ সম্প্রতি উদ্যোগী হয়েছে ঠিকই, কিন্তু কতটা কার্যকর করতে পারবে যা ভবিষ্যতে বোঝা যাবে। আমরা দীর্ঘ দিন ধরেই শব্দ দূষণের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। শহরবাসীকেও এ বিষয়ে সচেতন করে চলেছি।”
আরও পড়ুন: আদালত ডেকে পাঠাল অক্ষয় খন্নাকে, প্রশ্নের মুখে ‘সেকশন ৩৭৫’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy