এক দিনের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও সার্ভে পার্কে এটিএম প্রতারণার ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারল না পুলিশ। খোয়া যাওয়া টাকাও রবিবার রাত পর্যন্ত ফেরত পাননি প্রতারিতেরা। প্রাথমিক ভাবে পুলিশ সূত্রের খবর, সিসি ক্যামেরার থেকে পাওয়া এক ব্যক্তির ছবি ধরে আপাতত তল্লাশি চলছে। সে একা বা তার দলবল এই প্রতারণা-চক্রে যুক্ত থাকতে পারে বলে তদন্তকারীদের ধারণা। যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের শাখা সংলগ্ন এটিএমে এই ঘটনা ঘটেছে, সেখানে আজ, সোমবার ব্যাঙ্কের শীর্ষ কর্তারা পরিদর্শনে যেতে পারেন। সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্কের তরফেও ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
কিশোর ভারতী ক্রীড়াঙ্গনের ঠিক উল্টো দিকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের একটি এটিএমে গিয়ে একাধিক ব্যক্তি প্রতারণার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে শনিবার।
প্রতারিতেরা সার্ভে পার্ক থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তাঁদের দাবি, এটিএমে কার্ড ঢুকিয়ে টাকা তুলতে গেলে সেই কার্ড আটকে গিয়েছে। কী করবেন বুঝতে না পেরে এটিএম যন্ত্রের গায়ে লাগানো একটি হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করে তাঁরা কথা বলেন। ফোনে তাঁদের একটি
কোড বসাতে বলা হয় যন্ত্রে। এর পরে এটিএম কার্ডের পিন দিতে বলা হয়। সেই নম্বর দিয়ে কয়েক বার বাতিল (ক্যানসেল) বোতাম চাপতে বলা হয়। এর পরে ফিরে আসার নির্দেশ দিয়ে জানানো হয়, পরদিন ব্যাঙ্কের শাখায় গিয়ে আটকে যাওয়া কার্ডটি সংগ্রহ করে নিতে।
অভিযোগকারীদের দাবি, সেই মতো তাঁরা এটিএম থেকে বেরিয়ে বাড়ির পথ ধরতেই একাধিক মেসেজে টাকা কেটে নেওয়ার বার্তা আসতে থাকে। কারও এক লক্ষ ৩০ হাজার, কারও ৩৫ হাজার টাকা খোয়া যায়। খাস কলকাতায় এটিএম থেকেই এমন বিপদে পড়ার ঘটনায় নানা মহলে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। অনেকেরই দাবি, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের এটিএমেই এমন ঘটলে তাঁদের কষ্টার্জিত অর্থের নিরাপত্তা কী?
তদন্তে নেমে পুলিশ প্রথমে ওই এটিএমটি বন্ধ করিয়ে দেয়। সার্ভে পার্ক থানার পাশাপাশি
তদন্তে নামে লালবাজারের ব্যাঙ্ক প্রতারণা দমন শাখা। সূত্রের খবর, একটি সিসি ক্যামেরার ফুটেজে মুখ ঢাকা অবস্থায় এটিএমে এক জনকে ঢুকতে দেখা গিয়েছে। পুলিশের ধারণা, ওই ব্যক্তিই হেল্পলাইন নম্বরটি পাল্টে প্রতারকের ফোন নম্বর বসিয়ে দিয়েছে। এমনকি, যন্ত্রে কারচুপি করে কার্ড ঢোকালেই যাতে সেটি আটকে যায়, সেই ব্যবস্থা করেছে। সমস্যায়
পড়ে যে কারও হেল্পলাইন নম্বরের দিকে যাতে প্রথম চোখ যায়, এমন ভাবে যন্ত্রের গায়ে নম্বর লিখে কাগজ সাঁটা হয়েছে বলে পুলিশের দাবি। কিন্তু ওই ব্যক্তি কে, রাত পর্যন্ত তা জানা যায়নি। এটিএম থেকে বেরিয়ে সে কোন দিকে গিয়েছিল, তা বুঝতে একাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখছেন তদন্তকারীরা। পাশাপাশি, শহরের অন্য কোনও এটিএমে এমন জালিয়াতি হয়েছে কিনা, সেই খোঁজ নিচ্ছে পুলিশ। সমস্ত ব্যাঙ্কের শাখায় সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছে।
এরই মধ্যে পুলিশের দ্বারস্থ হয়ে এক ব্যক্তি আবার সার্ভে পার্কের এটিএমেই কোনও মতে রক্ষা পাওয়ার কথা জানিয়েছেন। ঘটনার দিন ভুল করে যন্ত্রে নিজের অন্য এটিএম কার্ড ঢুকিয়ে ফেলেন তিনি। আটকে যাওয়ায় ওই নম্বরে ফোনও করেন। ফোনের ব্যক্তি পিন দিতে বলেন। একটি কার্ড ভিতরে ঢোকানো, কিন্তু অন্য কার্ডের পিন দিতে থাকেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি। এর ফলে শেষ পর্যন্ত আর টাকা কেটে নিতে পারেনি প্রতারক। ওই ব্যক্তি এ দিন বলেন, ‘‘ওই ভুলটা করেছিলাম বলেই বেঁচে গিয়েছি। না হলে হয়তো সব টাকা কেটে নিত।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)