Advertisement
E-Paper

আশ্বাসই সার, এখনও অকেজো হাসপাতাল

আগেও কয়েকটি হাসপাতালের উন্নয়ন প্রসঙ্গে বেশ কিছু ঘোষণা করেছিল স্বাস্থ্য দফতর ও পুরসভা। সেই সব প্রস্তাব এখন কী অবস্থায়?

জয়তী রাহা

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৭ ১৫:০০

এসএসকেএম হাসপাতালের বর্ধিত অংশ হতে চলেছে কলকাতা পুলিশ হাসপাতাল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সেই প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আগেও কয়েকটি হাসপাতালের উন্নয়ন প্রসঙ্গে বেশ কিছু ঘোষণা করেছিল স্বাস্থ্য দফতর ও পুরসভা। সেই সব প্রস্তাব এখন কী অবস্থায়?

ইন্দিরা মাতৃসদন

সাত বছর আগে ঘোষণা হয়েছিল আর জি কর-এর দ্বিতীয় ক্যাম্পাস হবে এটি। প্রবেশ পথের বিশাল ফলকে জ্বলজ্বল করছে সে কথা। সরকার বদলাল। নিত্য নতুন প্রস্তাব এসেছে পরবর্তী সরকারের তরফেও। কিন্তু ইন্দিরা মাতৃ ও শিশু কল্যাণ হাসপাতালের অদৃশ্য তালা আজও খুলল না। কর্তৃপক্ষের দাবি, ‘‘কখনও স্ত্রী রোগ বিভাগ হওয়ার প্রস্তাব এসেছে, কখনও বা আবার বার্ন ইউনিট হওয়ার কথা উঠেছে। সম্প্রতি শোনা যাচ্ছে ইনফার্টিলিটি ইউনিট হওয়ার কথা। প্রতি বারই শুনি প্রস্তাবে সিলমোহর পড়বে দ্রুত। কিন্তু সব প্রস্তাবই শেষে হিমঘরে ঢুকে যায়।’’

সাতের দশকের শেষে এখানে পরিষেবা শুরু হয়। আর জি করের সঙ্গে যুক্ত করার কথা ঘোষণার পরে অস্ত্রোপচারের টেবিল ও সরঞ্জাম কেনাও হয়। দুর্ভাগ্যবশত তার মোড়ক খোলা হয়নি। ২০১০ থেকে ইন্ডোরে রোগী ভর্তি বন্ধ। দিনে খুব বেশি চার জন রোগী আউটডোরে আসেন। রয়েছেন মাত্র এক জন ডাক্তার। জঙ্গল, আবর্জনায় ভরেছে হাসপাতাল চত্বর।

চম্পামণি মেটারনিটি হোম

কলকাতা পুরসভার ক্রিস্টোফার রোডে অবস্থিত এই পুর মাতৃসদনটি নিয়েও বড় স্বপ্ন দেখিয়েছিল পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর। মেয়র পারিষদ (স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ ঘোষণা করেছিলেন, হাসপাতালে আসা সঙ্কটজনক রোগীকে নিকটবর্তী নীলরতন এবং ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হবে। ধীরে ধীরে সিজারও চালু হবে হাসপাতালে বলে জানিয়েছিলেন পুর কর্তৃপক্ষ। এর পরেই কেনা হয়ে গিয়েছিল মূল্যবান যন্ত্রপাতি। অভিযোগ, সে সব কাজে লাগানোর কোনও উদ্যোগ নেই কর্তৃপক্ষের। পরিষেবার উন্নতি বলতে, এনআরএস এবং ন্যাশনালে নিয়মিত ‘রেফার’ করা হয় রোগী। দীর্ঘ দিন ধরে এলাকায় কাজ করা একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পরিসংখ্যান বলছে, পুরসভার ৫৭ এবং ৫৮ নম্বর ওয়ার্ডের নিকটবর্তী এই হাসপাতালে আসা গরিব প্রসূতির সংখ্যা কিন্তু যথেষ্ট। অথচ কুড়িটি শয্যা ও একটি মাতৃযান নিয়ে নাকানি চোবানি খাচ্ছে বিশাল এলাকা জুড়ে থাকা দোতলা হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবা।

খিদিরপুর মাতৃসদন

খাতায়-কলমে ৭০টি শয্যা। সাধারণ প্রসবের পরিকাঠামো নিয়ে দোতলা মাতৃসদনের একতলা ইন্ডোর হিসেবে ব্যবহার হয়। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে এসএসকেএমের প্রসূতি বিভাগের সঙ্গে এই মাতৃসদনের গাঁটছড়া বাঁধার কথা ঘোষণা হয়েছিল বছর তিনেক আগে। কথা ছিল, কিছু দিনের মধ্যেই এসএসকেএমের প্রসূতি বিভাগ থেকে চিকিৎসক ও নার্স নিয়মিত যাবেন সেখানে। তাঁরা বহির্বিভাগে রোগী দেখবেন এবং অস্ত্রোপচারও করবেন। পুরসভার স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, এর পরেই রাজ্য সরকার প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা দেয় মাতৃসদনকে। অস্ত্রোপচার, আল্ট্রা সোনোগ্রাফি এবং এক্স রে-এর যন্ত্রপাতি কিনে ওটি-র পরিকাঠামো তৈরি করা হয়। অভিযোগ, গাঁটছড়া রয়েছে খাতায়-কলমে। কোনও কিছুই হয়নি। প্রথম দিকে ডাক্তার, নার্স নিয়মিত আসতেন। সে সব এখন বন্ধ। পুরসভার স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিকের সাফাই, ‘‘মাসে একটা করে হলেও অস্ত্রোপচার হয়। তিন-চার মাস ধরে তা বন্ধ আছে। আউটডোরের বাড়িটি ভেঙে আটতলা হচ্ছে। সব কাজ শেষ হলে প্রসূতি চিকিৎসায় এসএসকেএমের দ্বিতীয় হোম হবে এটি।’’

নর্থ মেটারনিটি হোম

দর্জিপাড়ার এই মাতৃসদনে শুধু সাধারণ প্রসবই হয়। এক সময়ে শোনা গিয়েছিল আরজি করের সঙ্গে যুক্ত হবে এটি। এর পরেই যন্ত্র-সহ অস্ত্রোপচারের পরিকাঠামো নিয়ে সেজে তৈরি মাতৃসদন। কিন্তু উন্নত পরিষেবা আজও অমিল।

কলকাতা পুরসভার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক মনিরুল ইসলাম মোল্লা বলেন, ‘‘নর্থ মেটারনিটিকে আরজি করের সঙ্গে যোগ করা হবে না। ওখানে এবং গার্ডেনরিচের পুর মাতৃসদন দু’টিতেই প্রায় বছর খানেক ধরে অস্ত্রোপচারের পরিকাঠামো তৈরি হয়ে রয়েছে। কাজ করেছে কলকাতা পুরসভাই। কিন্তু অ্যানাস্থেটিস্টের অভাবেই ওটি শুরু করা যাচ্ছে না। চেষ্টা করা হচ্ছে কেস প্রতি অ্যানাস্থেটিস্ট আনাতে।’’ চম্পামণি মাতৃসদন নিয়ে আরও একটি নতুন প্রকল্পের কথা শোনালেন তিনি। তাঁর দাবি, ‘‘জাতীয় স্বাস্থ্য মিশন প্রকল্পে ১০০ শয্যার একটি আধুনিক হাসপাতাল করা হবে ওখানে। প্রাথমিক ভাবে পাঁচ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে।’’ খিদিরপুর মাতৃসদন প্রসঙ্গে তিনি জানান, কাজ তো চলছে। তার জন্যেই পরিষেবা কিছুটা বিঘ্নিত হচ্ছে।

State Hospitals Hospitals Mamata Banerjee মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy