Advertisement
E-Paper

সিন্ডিকেট নেই, কোর্টে দাবি রাজ্যের

রাজারহাট-নিউ টাউন এলাকায় নির্মাণকাজে সিন্ডিকেটের দাদাগিরি নিয়ে ভূরি ভূরি অভিযোগ রয়েছে। সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে বহু নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। একই রাজনৈতিক দলের দুই গোষ্ঠীর গুলির লড়াইয়ে উত্তপ্ত হয়েছে রাজারহাট-নিউ টাউন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০১৫ ০০:২৩

রাজারহাট-নিউ টাউন এলাকায় নির্মাণকাজে সিন্ডিকেটের দাদাগিরি নিয়ে ভূরি ভূরি অভিযোগ রয়েছে। সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে বহু নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে গিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। একই রাজনৈতিক দলের দুই গোষ্ঠীর গুলির লড়াইয়ে উত্তপ্ত হয়েছে রাজারহাট-নিউ টাউন। গোলমাল ও খুনোখুনি থামাতে রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতাকে প্রশাসনের একাংশের সাহায্য নিয়ে মধ্যস্থতাও করতে হয়েছে। পরিস্থিতি শান্ত করতে বহু ক্ষেত্রে এলাকা ভাগ করে দিয়েছেন স্থানীয় নেতৃত্ব। এমন পরিস্থিতিতে কলকাতা হাইকোর্টে শুক্রবার হলফনামা পেশ করে রাজ্য সরকার দাবি করল, রাজারহাট-নিউ টাউন এলাকায় সরকার অনুমোদিত কোনও সিন্ডিকেটই চলে না!

একটি আবাসন প্রকল্পের শ’দু’য়েক গ্রাহক অগ্রিম টাকা জমা দিয়েও ফ্ল্যাট না পেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন। এ দিন সেই মামলার শুনানিতে রাজ্য সরকার ওই হলফনামা দেয়। এই মামলায় এর আগে একটি নির্মাণ সংস্থা আদালতে জানিয়েছিল, নিউ টাউন এলাকায় সিন্ডিকেট-রাজের জন্য আবাসন প্রকল্পের কাজ বন্ধ করে দিতে হয়েছে।

সে কথা শুনে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবকে হলফনামা দিতে বলেছিলেন হাইকোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। এ দিন রাজ্য সরকার হলফনামা দিয়ে ওই কথা জানানোর পরে বিচারপতি নির্দেশ দেন, ভবিষ্যতে ওই এলাকায় কোনও সিন্ডিকেটের অস্তিত্ব জানতে পারলে বিধাননগর কমিশনারেটকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে তাঁর নির্দেশ, বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার বিশেষ দল তৈরি করবেন। সেই দলের কাজ হবে রাজারহাট-নিউ টাউন সহ বিধাননগর ওই কমিশনারেট এলাকায় সিন্ডিকেট-রাজ চলছে কি না, তা দেখতে আচমকা পরিদর্শন করা।

নিউ টাউন এলাকায় পশ্চিমবঙ্গ হাউজিং বোর্ডের সঙ্গে যৌথ ভাবে আবাসন প্রকল্প গড়ার চুক্তি করেছে একটি বেসরকারি নির্মাণ সংস্থা। তারা সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে গ্রাহকদের ফ্ল্যাট বুকিং করতে বলে। অনেক গ্রাহকই জানিয়েছেন, ফ্ল্যাট কেনার জন্য তাঁরা অগ্রিম টাকা দিয়েছিলেন।

গ্রাহকদের পক্ষের আইনজীবী অনুজ সিংহ এ দিন জানান, টাকা জমা দেওয়ার পরে গ্রাহকেরা জানতে পারেন, রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাঙ্কের কাছে জমি বন্ধক রেখে আবাসন প্রকল্প গড়ার জন্য টাকা ধার নিয়েছে ওই নির্মাণ সংস্থা। কিন্তু সময় মতো ধার শোধ করতে না পারায় ওই ব্যাঙ্ক জমির দখল নিতে চলেছে। এই পরিস্থিতিতে গত বছর হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন ফ্ল্যাটের গ্রাহকেরা।

অনুজবাবু আরও জানান, গত বছরের নভেম্বরে বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদালতে হাজির হয়ে নির্মাণ সংস্থাটি জানায়, রাজারহাট-নিউ টাউনে সিন্ডিকেট-রাজের দৌরাত্ম্যে তারা কাজ শুরু করতে পারছে না।

তবে সংস্থা আদালতে জানিয়েছিল, তারা ব্যাঙ্কের দেনা নিয়মিত ভাবে শোধ করবে এবং ওই আবাসনের কাজও শীঘ্রই শুরু করতে চায়। তার প্রেক্ষিতে বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায় স্বরাষ্ট্রসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়কে সিন্ডিকেট নিয়ে হলফনামা দাখিল করতে নির্দেশ দেন।

অনুজবাবু জানিয়েছেন, এ দিন রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্রসচিবের হলফনামাটি আদালতে পেশ করা হয়। হলফনামার বক্তব্য পড়ে ওই নির্দেশ দেন বিচারপতি বন্দ্যোপাধ্যায়। আদালতের এ দিনের নির্দেশ বিধাননগরের পুলিশ কমিশনার জাভেদ শামিমের কাছে অবিলম্বে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। আগামী শুক্রবার, ২০ মার্চ এই মামলার পরবর্তী শুনানি।

এ দিকে, সরকার হাইকোর্টে হলফনামা দিলেও রাজারহাট-গোপালপুর পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান তাপস চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সরকার অনুমোদিত সিন্ডিকেট হয়তো নেই, তবে তৃণমূল সরকারের ছত্রচ্ছায়ায় সিন্ডিকেট-রাজ সমানে চলছে। এমনকী, তৃণমূলের দুই নেতার মধ্যেই রয়েছে সিন্ডিকেটের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। সেই নিয়ে মারপিটও হয়েছে। বহু জায়গায় কাজ থেমে গিয়েছে।”

বিজেপি নেতা তথাগত রায় বলেন, “রাজনৈতিক ন্যাকামির একটা সীমা থাকা উচিত। সিন্ডিকেট কখনও সরকার অনুমোদিত হয়? রাজারহাট-নিউ টাউনে সব সিন্ডিকেটেরই শেষ কথা তৃণমূল। তৃণমূল না করলে ওখানে কেউ সিন্ডিকেট চালাতে পারবে না। আর সেটা নিয়েই যত গোলমাল, অশান্তি। ওখানে তৃণমূলের সিন্ডিকেটের দু’টো দল আছে তা আমরা সবাই জানি।”

এলাকার তৃণমূল বিধায়ক সব্যসাচী দত্ত বলেন, “যাঁরা রাজারহাট-নিউ টাউনে ইট-বালির ব্যবসা করেন, তাঁরা ব্যক্তিগত ভাবে কেউ কোনও দলের সমর্থক হতেই পারেন। কিন্তু রাজনৈতিক ভাবে তৃণমূল পরিচালিত সিন্ডিকেটের গ্রহণযোগ্যতা নেই। যেমন ফ্যান্সি মার্কেটে যারা বিদেশি জিনিস বিক্রি করেন, তাঁরা কোনও না কোনও রাজনৈতিক দলের সমর্থক। কিন্তু সরকার তো লাইসেন্স ছাড়া বিদেশি জিনিস বিক্রির অনুমতি দেয়নি।”

new town-rajarhat syndicate
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy