Advertisement
E-Paper

বৃষ্টি হলেও ঠাকুর দেখবই, বুঝিয়ে দিল ষষ্ঠীর শহর

সকালের বৃষ্টি যেন উৎসাহের আগুনে ঘি ফেলে দিল! মহাষষ্ঠীর সন্ধ্যায় উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিমে কার্যত থমকে গেল মহানগরী। বোধনের সন্ধ্যাতেই জমে গেল ‘উৎসব কাপ’।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৬ ০১:৩৭
উত্তর কলকাতার শ্রেষ্ঠ পুজো কাশী বোস লেন

উত্তর কলকাতার শ্রেষ্ঠ পুজো কাশী বোস লেন

সকালের বৃষ্টি যেন উৎসাহের আগুনে ঘি ফেলে দিল!

মহাষষ্ঠীর সন্ধ্যায় উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিমে কার্যত থমকে গেল মহানগরী। বোধনের সন্ধ্যাতেই জমে গেল ‘উৎসব কাপ’।

মেঘলা আকাশ, সঙ্গে বৃষ্টি দেখে বোধনের সকালে পুজোকর্তারা চিন্তায় পড়ে যান। কলকাতায় জল না জমলেও ব্যারাকপুরের মতো শহরতলির কিছু এলাকায় মণ্ডপ চত্বরে কাদা ঢাকতে বালি ফেলতে হয়। দুপুরের পরে বৃষ্টি আর হয়নি। ভ্যাপসা গরমকে উড়িয়ে বেরিয়ে পড়েছিল জনতা।

বিকেল হতে জনস্রোত জনজোয়ারের চেহারা নিল। সন্ধ্যায় পুজো কমিটির ব্যাজ পরা স্বেচ্ছাসেবকেরা পুলিশের সঙ্গে রাস্তায় নেমেও গতি দিতে পারেননি যানবাহনকে। লালবাজারের এক প্রবীণ পুলিশকর্তা প্রায় আর্তনাদের সুরে বলছিলেন, চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ দিয়ে শোভাবাজারের দিকে গাড়ি প্রায় এগোচ্ছেই না! অরবিন্দ সরণি বন্ধ। রাসবিহারী মোড় থেকে গড়িয়াহাট— রাস্তায় আটকে গিয়েছে গাড়ি। চেতলাতেও একই হাল। জেমস লঙ সরণিও তথৈবচ। পুলিশের এক কর্তার অবশ্য দাবি, “ষষ্ঠীর সন্ধ্যা থেকেই ভিড় ও যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে। পুজোয় মানুষ নিশ্চিন্তেই ঘুরতে পারবেন।”

ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় উত্তর থেকে দক্ষিণ, বেলেঘাটা থেকে বেহালা— আছড়ে পড়েছে জনস্রোত। মণ্ডপের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভিড় জমানোর চেষ্টা জুড়েছে মেট্রোও। অনেক মণ্ডপেই দড়ি ফেলে, গেট কমিয়ে লাইন বাড়ানোর চেষ্টা করেন উদ্যোক্তারা। এ দিন সকাল থেকে বিভিন্ন মেট্রো স্টেশনেও একই ছবি। বেলা ১টায় দমদম স্টেশনে কয়েকশো লোকের লাইন। কিন্তু কাউন্টারের অর্ধেক বন্ধ! সরু রাস্তায় ঠেলাঠেলি। এক বৃদ্ধ বললেন, ‘‘এখানে বিপদ ঘটলে রেল বা মেট্রো কেউ দায়িত্ব নেবে?’’ সদুত্তর মেলেনি।

এ বার পুজোয় বাংলার সঙ্গে মিশে গিয়েছে বিদেশও। সুরুচিতে রয়েছেন লন্ডনের ক্যামডেনের পুজো কমিটির প্রতিনিধিরা। প়ঞ্চমীর রাতে আইসিসিআর এবং ‘ইউথ গিল্ড অব গোর্কি সদন’ যৌথ ভাবে বিভিন্ন দূতাবাসের কর্তাদের নিয়ে পুজো দেখাতে বেরিয়েছিল। শহরের পুজো দেখে তাজ্জব নেপাল, রাশিয়া, আমেরিকার কূটনীতিকেরা।

বিকেল থেকে সব স্টেশনেই ভিড় উগরে দিয়েছে মেট্রো। শোভাবাজারে নামা জনস্রোতের একাংশ সোজা চলে গিয়েছে কুমোরটুলি পার্ক, শোভাবাজার বেনিয়াটোলা, ১৯ পল্লি, আহিরীটোলা যুববৃন্দ, আহিরীটোলা সর্বজনীনের দিকে। আহিরীটোলা সর্বজনীনে শিল্পীদের ‘লাইভ শো’ দেখে মুগ্ধ লোকজন। কালীঘাট, রবীন্দ্র সরোবর মেট্রো স্টেশন থেকে ভিড় চলে গিয়েছে এক দিকে গড়িয়াহাট, চেতলা, নিউ আলিপুরের দিকে। বিকেলেই বাদামতলা আষাঢ় সঙ্ঘ, ৬৬ পল্লির কাছে লাইন জমেছে। সেই ভিড় চেতলা অগ্রণী হয়ে চলে গিয়েছে নিউ আলিপুর সুরুচি সঙ্ঘের ‘ভুটান’-এ। যোধপুর পার্ক, ৯৫ পল্লি, পল্লিমঙ্গল থেকে ভিড় বেরিয়ে বাবুবাগান, বান্ধব সম্মিলনী হয়ে হিন্দুস্থান পার্ক, একডালিয়ায় চলে এসেছে। হিন্দুস্থান পার্কে ঠাকুমার পিছুটানে আটকা পড়েছেন লোকে, তারিফ করেছেন বান্ধব সম্মিলনীর মণ্ডপে বেত, বাঁশ দিয়ে পাখি, মাছের শিল্পেরও। প্রতিবারের মতো এ বার পাল্লা দিয়ে ভিড় টানছে শিবমন্দির, বেঙ্গল ইউনাইটেডের পুজোও।

মেট্রো ধরে কেউ গিয়েছেন কুঁদঘাটের দিকে। সেখান থেকে হরিদেবপুরের পুজো দেখে ভিড় ছুটেছে বেহালার দিকে। বেহালা-বড়িশা চত্বরে পুরনো পুজোগুলির এ বার ২৯ পল্লি, নতুন সঙ্ঘ, বেহালা ফ্রেন্ডসের মণ্ডপও তাক লাগিয়েছে। পূর্ব কলকাতার বেলেঘাটাও এ বার জোর টক্করে। ৩৩ পল্লির ‘ট্যাক্সি’, নবমিলনের ভাঁড় দিয়ে সাজানো মণ্ডপ লোকজনকে অবাক করেছে। কাঁকুড়গাছি মিতালির উপাসনা গৃহ দেখতে লাইন দিয়েছেন লোকজন, স্বপ্নার বাগানে সাইকেলের পার্টসে সাজানো মণ্ডপের সঙ্গে ভিড় জমছে ফ্রি ওয়াই-ফাইয়ের টানেও।

মেন লাইনে দুপুরে অবরোধের জেরে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়েছিল। বিকেল থেকেই বনগাঁ, মেন লাইনে ট্রেন ঢুকে শিয়ালদহে ভিড় উগরে দিয়েছে। সেখান থেকে একটি ভিড় চলে গিয়েছে সন্তোষ মিত্র স্কোয়ার, কলেজ স্কোয়ার হয়ে মহম্মদ আলি পার্কের দিকে। পুলিশের হিসেবে, সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় মহম্মদ আলি পার্কের কাছে হাজার পাঁচেক লোক! নজর কাড়ছে সুকিয়া স্ট্রিটের বৃন্দাবন মাতৃমন্দির, মানিকতলার লালাবাগান নবাঙ্কুরের মতো চেনা পুজোগুলিও।

শিয়ালদহের বদলে ভিড়ের বড় অংশ নেমেছে বিধাননগর স্টেশনেও। তেলেঙ্গাবাগান, করবাগান দেখে পায়ে পায়ে হাতিবাগানে। সিকদারবাগানে নতুন শিল্পী সুজিত লালের কাজ এ বার লোকের তারিফ কুড়িয়েছে। পুজোকর্তা গৌরীশঙ্কর রায়চৌধুরী বলছিলেন, ‘‘আনকোরা প্লেয়ারও যে কম নয়, বুঝিয়ে দিলাম আমরা।’’ কাশী বোস লেনের ‘শিল্প ও পরিবেশ’ থিমে সন্ধ্যা থেকেই উপচে পড়া ভিড়। নাকাল হয়েছেন পুজো কমিটির সদস্যেরা।

বোধন-সন্ধ্যায় প্রতি বছরের মতোই ভিড়ের ব়ড় অংশ বাগবাজার সর্বজনীনে গিয়েছে। আরতি দেখে, পেন্নাম ঠুকে শোভাবাজার রাজবাড়ি, দাঁ বাড়ি, হাটখোলার দত্তবাড়ির মতো উত্তরের সাবেক বাড়িগুলিতেও উঁকি দিয়েছেন। শহরতলির বিভিন্ন পারিবারিক পুজোতেও এ দিন জমে উঠেছে উৎসব। রীতি মেনে কোথাও বোধন, কোথাও অধিবাস শুরু হয়েছে। মহেশতলার রায়চৌধুরী বাড়িতে সন্ধ্যা থেকেই আত্মীয়-পরিজনদের ভি়়ড়।

দক্ষিণে ভবানীপুরের চক্রবেড়িয়া দেখে ভিড়ের ঢল নেমেছে অবসরের ‘পরীর দেশে’। সেখান থেকে ম্যাডক্স স্কোয়ার গিয়েছেন কেউ, কেউ হাজরা পার্কে পুর-কর্মচারীদের ‘কুলিদের থিম’ দেখে চলে গিয়েছেন কালীঘাট মিলন সঙ্ঘের গৃহিণী দুর্গা দেখতে। টালিগঞ্জ মেট্রো স্টেশনের ভিড়ের বড় অংশ টেনে নিয়েছে রানিকুঠির নেতাজি জাতীয় সেবাদল, নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘ। গড়িয়া মিতালি সঙ্ঘের নবদুর্গা এ বারই পুরোপুরি সাবেক পুজোর মোড়ক ছেড়ে কিছুটা বেরিয়ে এসেছে। নবীন শিল্পী বাপাই সেনের আলোর বিবর্তনের মণ্ডপ লোকের প্রশংসা কুড়িয়েছে, জমেছে ভিড়ও। পুজোর দর্শকদের গন্তব্য ছিল যাদবপুর-সন্তোষপুরের ক্লাবগুলিও। গড়িয়াহাট থেকে যাদবপুর হয়ে সুকান্ত সেতু পেরিয়ে গাড়ির লাইন চলে গিয়েছে সন্তোষপুর ত্রিকোণ পার্ক, অ্যাভিনিউ সাউথে। অ্যাভিনিউ সাউথে থিম শহরের ‘পুজো পাগল’ কর্তারাই!

আজ সপ্তমী। উৎসব কাপের কোয়ার্টার ফাইনাল। ভিড় টেনে কে এগোয়, কে পিছোয়, সেটাই দেখার।

Durga puja Climate Pandal
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy