Advertisement
E-Paper

সিঁড়ির কাছে স্ত্রীর দেহ, খাটের পাশ থেকে খুন কি দেখেছিলেন অশীতিপর বৃদ্ধ? আতঙ্ক কাটছে না, কী ঘটেছিল নিউ গড়িয়ায়

নিউ গড়িয়া কো-অপারেটিভের ছোট্ট ছিমছাম দোতলা বাড়িতে থাকতেন বৃদ্ধ দম্পতি। এক জন অশীতিপর। অন্য জন আশি ছুঁইছুঁই। তাঁদের হোম ডেলিভারির খাবার টেবিলেই পড়ে আছে। রাতে কি খাননি?

আনন্দবাজার ডট কম সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০২৫ ১৬:৩৬
Old man is traumatized after wife’s death in New Garia

নিউ গড়িয়ার বাড়ি থেকে বৃদ্ধার হাত-পা বাঁধা দেহ উদ্ধার, পাশে পড়েছিলেন অশীতিপর স্বামী। গ্রাফিক: আনন্দবাজার ডট কম।

এক জন অশীতিপর। অন্য জন আশি ছুঁইছুঁই। নিজেরা রান্না করে খেতে পারতেন না। হোম ডেলিভারি থেকে প্রতি দিন আসত খাবার। বৃহস্পতিবারও এসেছিল। রাতের সেই খাবার শুক্রবার সকাল পর্যন্ত টেবিলেই পড়ে ছিল। নিউ গড়িয়ার পঞ্চসায়রে এস৩২ কুলু ভিলার বাসিন্দা ওই দম্পতি খাবার ছুঁতে পারেননি। সকালে রক্তাক্ত অবস্থায় সিঁড়ির কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বৃদ্ধার দেহ। বৃদ্ধকে পাওয়া গিয়েছে পাশের ঘরে খাটের কাছ থেকে। পাশে পড়েছিল বালিশ। বৃদ্ধার হাত এবং পা ছিল বাঁধা। স্ত্রী বিজয়ার মৃত্যু কি চোখের সামনে দেখেছেন প্রশান্ত দাস? উত্তর মেলেনি। বৃদ্ধ এখনও ভয়ে এবং ঘটনার আকস্মিকতায় থমকে আছেন। তাঁর সঙ্গে ভাল করে কথা বলতে পারেনি পুলিশও।

নিউ গড়িয়া কো-অপারেটিভের ছোট্ট ছিমছাম দোতলা বাড়িটিতে একাই থাকতেন বৃদ্ধ দম্পতি। তাঁদের কন্যা জার্মানিতে, সপরিবার পুত্র থাকেন মুম্বইয়ে। বাবা-মায়ের দেখাশোনার জন্য পরিচারিকা এবং আয়া নিযুক্ত করেছিলেন তাঁরা। বাড়িতে সর্ব ক্ষণ ছিল সিসিটিভির নজরদারি। প্রধান ফটকের উপরেই একটি সিসি ক্যামেরা বসানো ছিল। তা সত্ত্বেও ঘটে গিয়েছে বিপর্যয়। সিসিটিভির তার কেটে দেওয়া হয়েছে। বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে বাড়ির বিদ্যুৎ পরিষেবা।

পুলিশ সূত্রে খবর, শুক্রবার সকালে পরিচারিকা এসে ডাকাডাকি করে দম্পতির সাড়া পাননি। পরে পুলিশ গিয়ে বৃদ্ধার দেহ উদ্ধার করে। তিনি সিঁড়ির কাছে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে ছিলেন। তাঁর মাথায় এবং মুখে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। বৃদ্ধকে উদ্ধার করে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আপাতত কাছাকাছি এক আত্মীয়ের বাড়িতে রয়েছেন তিনি।

ঘটনার অভিঘাতে বৃদ্ধ এতটাই আতঙ্কিত এবং হতভম্ব যে, ভাল করে কথা বলতে পারছেন না। তাঁর স্যালাইন চলছে। সকালে পুলিশ আসার পর বৃদ্ধকে কোলে তুলে অন্যত্র নিয়ে যেতে হয়েছে। নিজে হেঁটে যাওয়ার ক্ষমতাও ছিল না তাঁর। স্থানীয় সূত্রে খবর, স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই অসুস্থ ছিলেন। কিছু দিন আগে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল তাঁদের। আগে টুকটাক বাড়ির বাইরে বেরোতেন। কিন্তু সম্প্রতি হাসপাতাল থেকে ফেরার পর তা-ও প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এই অসহায়তার সুযোগই নিয়েছে দুষ্কৃতীরা, মত এলাকার বাসিন্দাদের।

ঠিক কখন এই ঘটনা ঘটেছে? খাবার পড়ে থাকতে দেখে তদন্তকারীদের অনুমান, রাতেই যা হওয়ার হয়েছে। তবে কখন দুষ্কৃতী বাড়িতে ঢুকেছিল, কত ক্ষণ ছিল, এখনও স্পষ্ট নয়। দম্পতির পুত্র এবং কন্যাকে খবর দেওয়া হয়েছে। আপাতত প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বলছেন তদন্তকারীরা।

বৃদ্ধার গায়ে যা গয়না ছিল, সেগুলি পাওয়া যায়নি। পুলিশ সূত্রে খবর, বাড়ির পিছন দিকের দরজাটি খোলা ছিল। আলমারিও খোলা অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। কী কী খোয়া গিয়েছে, এখনও তার হিসাব নেই। প্রাথমিক ভাবে তদন্তকারীদের অনুমান, সম্পত্তির লোভেই এই খুন। জানা গিয়েছে, বৃদ্ধ দম্পতির পরিচর্যার জন্য সদ্য এক আয়াকে নিযুক্ত করা হয়েছিল। তাঁর সঙ্গেও কথা বলার চেষ্টা করছে পুলিশ।

সিসিটিভির তার কী ভাবে কাটা হল? পুলিশকে তা ভাবাচ্ছে। আগে থেকেই কি সিসিটিভি বিকল ছিল? যদি তার কাটতেই হয়, তবে বাড়ির ভিতর থেকে তা করতে হবে। তবে কি আগেই বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়েছিল ঘাতক? বাইরে থেকে কি সিসিটিভি বন্ধ করা সম্ভব? খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বৃদ্ধের বয়ান নথিভুক্ত করা গেলে অনেক রহস্যের জট খুলতে পারে। খুনের ঘটনার সাক্ষী তিনি ছিলেন কি না, তাঁর সঙ্গে কী কী ঘটেছিল, বৃদ্ধ তার বর্ণনা দিতে পারলে পুলিশের কাজ সহজ হবে। আপাতত পঞ্চসায়র থানার পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। সকালেই ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন কলকাতা পুলিশের ডিসি (পূর্ব)। ছিলেন কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের আধিকারিকেরা। আঙুলের ছাপ বিশেষজ্ঞ, চিত্রগ্রাহক এবং হোমিসাইড বিভাগের আধিকারিকেরাও ঘটনাস্থল থেকে তথ্য সংগ্রহ করেছেন।

Murder Case Kolkata Crime panchasayar Old Couple
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy