Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
গড়িয়াহাটে দুর্ঘটনা

‘শেষ বয়সে জীবনে কালো দাগ লাগল’

প্রায়শ্চিত্ত করতে চান তিনি। তাই ঢাকুরিয়ার এক হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে অনুশোচনায় দগ্ধ হচ্ছেন ৭৭ বছরের বিজয়প্রসাদ বসু। শুক্রবার ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, ‘‘পুলিশ আমায় জেলে পুরলেও আমার দুঃখ নেই।’’

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৬ ০২:২৫
Share: Save:

প্রায়শ্চিত্ত করতে চান তিনি। তাই ঢাকুরিয়ার এক হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে অনুশোচনায় দগ্ধ হচ্ছেন ৭৭ বছরের বিজয়প্রসাদ বসু। শুক্রবার ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, ‘‘পুলিশ আমায় জেলে পুরলেও আমার দুঃখ নেই।’’

শুক্রবারেই বিজয়বাবুকে জানানো হয়েছে ঘটনার কথা। বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার গড়িয়াহাটের কাছে তিনি যে গাড়ি চালাচ্ছিলেন, তার ধাক্কায় মারা গিয়েছেন সন্ধ্যা সরকার নামে ৭৮ বছরের এক বৃদ্ধা। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে গাড়ি চালাচ্ছেন বিজয়বাবু। কিন্তু জীবনের সায়াহ্নে এসে তাঁর গাড়ি যে কারও প্রাণ কেড়ে নেবে, তা মেনে নিতে পারছেন না তিনি। ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি বলেছেন, ‘‘শেষ বয়সে এসে আমার জীবনে একটা কালো দাগ লেগে গেল। আমার গাড়ির বিমা করানো আছে। মৃতার পরিবার হয়তো ক্ষতিপূরণ পাবে। কিন্তু টাকা দিয়ে কি আর জীবনের মূল্য চোকানো যায়!’’

পুলিশ সূত্রের খবর, বিজয়বাবুর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির একটি ধারায় মামলা শুরু হয়েছে। এক জনের অবহেলার কারণে অন্য এক জনের মৃত্যু হলে এই ধারা দেওয়া হয়। সুস্থ হওয়ার পরে আইনের স্বাভাবিক নিয়ম মেনেই গ্রেফতার করা হতে পারে বিজয়বাবুকে। তবে এই ধারাটি জামিনযোগ্য। সে ক্ষেত্রে তাঁকে হাজতবাস করতে হবে না বলেই জানাচ্ছে পুলিশের একাধিক সূত্র।

বৃহস্পতিবারের ঘটনায় বিজয়বাবু নিজেও আহত হয়েছেন। তাঁর মাথায় চোট লেগেছে। আঘাত যত না শরীরের, তার চেয়েও বেশি মনের। বিজয়বাবুর ছেলে শান্তনু বসুর কথায়, ‘‘ঘটনার পর থেকে বাবা অদ্ভুত আচরণ করছেন। আমাকে দু’-এক বার চিনতেও পারেনি।’’

পুলিশ জানিয়েছে, সন্ধ্যাদেবী দুই আত্মীয়কে নিয়ে গড়িয়াহাটের একটি শপিং মলের এক বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রে চোখ দেখাতে যাচ্ছিলেন। জানা গিয়েছে, বিজয়বাবুও তাঁর স্ত্রীর চোখ দেখাতে একই চিকিৎসাকেন্দ্রে যাচ্ছিলেন। গাড়িতে বিজয়বাবুর পাশেই বসেছিলেন তাঁর ৭৫ বছরের স্ত্রী নীহারদেবী। পুরো ঘটনার কথা এখন আর বিস্তারিত মনে করতে পারছেন না বিজয়বাবু। চিকিৎসকদের তিনি জানিয়েছেন, শপিং মলে ঢোকার মুখে রাস্তা উঁচু হয়ে গিয়েছে। ঢোকার আগে গাড়ি দাঁড় করান তিনি। লোকজন আছে কি না, তা দেখে নিয়ে ফের গাড়ি চালাতে শুরু করেন। আচমকা সন্ধ্যাদেবীরা গাড়ির সামনে চলে আসেন। হাসপাতালের এক কর্তা বলেন, ‘‘এক জনকে ধাক্কা মারা পর্যন্ত মনে করতে পারছেন তিনি। তার পরে আর কোনও ঘটনা ওঁর মনে নেই।’’ তিন জনকে ধাক্কা মেরে গাড়িটি শপিং মলের দেওয়ালে জোরে ধাক্কা মেরে দাঁড়িয়ে যায়।

ঘটনার পর থেকে কার্যত কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছেন নীহারদেবীও। শান্তনুবাবু বলেন, ‘‘এর আগে মায়ের এক বার সেরিব্রাল অ্যাটাক হয়েছিল। সেই সময়ে মায়ের আচরণ যে রকম ছিল, দুর্ঘটনার প্রসঙ্গ উঠলেই মা সেই রকম আচরণ করছেন। বাবার পাশে বসে মা পুরো ঘটনাটি দেখেছেন। মানসিক ভাবে মা-ও কম বিপর্যস্ত নন।’’ দুর্ঘটনায় আহত হন সন্ধ্যাদেবীর ভাসুরের ছেলে গোরাচাঁদ সরকার এবং তাঁর স্ত্রী কৃষ্ণা সরকার। তাঁরাও ঢাকুরিয়ার ওই হাসপাতালে ভর্তি। গোরাচাঁদবাবু রয়েছেন ভেন্টিলেশনে। অবস্থা আশঙ্কাজনক। কৃষ্ণাদেবীর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

repentant old man accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE