রবীন্দ্র সরোবর থেকে সিঙ্গালিলা জাতীয় উদ্যান, পূর্বস্থলী থেকে চিন্তামণি কর পাখিরালয়, সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ অরণ্য— নববর্ষে রাজ্যের আনাচকানাচে পাখিদের খোঁজে চোখ রাখছেন পাখি দেখিয়েরা। বাড়ির আশপাশের গাছগাছালিতে কোনও পাখি বাসা বাঁধল কি না, নজর থাকছে সে দিকেও। বাংলা নতুন বছর উপলক্ষে এ বারও শনিবার ও আজ, রবিবার পয়লা বৈশাখে পাখিসুমারির আয়োজন করেছেন এ রাজ্যের পাখিপ্রেমীরা। তাতে অংশ নিয়েছেন পাখিপ্রেমী সংগঠনের সদস্য থেকে সাধারণ মানুষের অনেকেই।
সাধারণত, ফেব্রুয়ারিতে আন্তর্জাতিক ‘গ্রেট ব্যাকইয়ার্ড বার্ড কাউন্ট’-এ অংশ নেন এ রাজ্যের পাখিপ্রেমীরা। এ বছর সেখানে ৫৩৮টি প্রজাতিকে চিহ্নিত করে দেশের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। এ ছাড়া বিহু, পোঙ্গল-সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষে বিভিন্ন রাজ্যে পক্ষীগণনার রেওয়াজ আছে। তাই গত বছর থেকে এ রাজ্যেও নববর্ষে পাখিসুমারিতে উদ্যোগী হয় পাখি দেখিয়েদের সংগঠন ‘বার্ড ওয়াচার্স সোসাইটি’। এই উদ্যোগের মূল হোতা, ওই সংগঠনের সেক্রেটারি সুজন চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘ফেব্রুয়ারিতে এ দেশে বসন্তকাল। সে সময়ের গণনায় শীতের পরিযায়ী পাখিদের সঙ্গে স্থানীয় পাখিদের দেখাও মেলে। নববর্ষে গরমের সময়ে পাখিসুমারি করলে পরিযায়ীদের মধ্যে কারা এখনও রয়ে গিয়েছে, সেটা জানা সম্ভব। স্থানীয় পাখিদের কে কোথায় বাসা বাঁধছে, সেই তথ্যও মিলবে। কোন জায়গাটিকে পাখি তার প্রজননক্ষেত্র ও বাসস্থান হিসাবে পছন্দ করছে, সেটাও প্রতি বছরের পাখিসুমারি থেকে জানা যাবে।’’
পরিসংখ্যান বলছে, গত নববর্ষের সুমারিতে দু’দিনে অংশ নেন ১৭৬ জন। রাজ্যের ২০টি জেলা (আলিপুরদুয়ার, উত্তর দিনাজপুর, পুরুলিয়া ও পূর্ব মেদিনীপুর বাদে) থেকে ৫৪৪ প্রজাতির পাখি দেখে ‘ই-বার্ড’ অ্যাপে নথিভুক্ত করা হয়েছিল। সে বারেই সান্দাকফু থেকে অনতিদূরে, কালিপোখরির কাছে কাইয়াকাটা গ্রামে পাখিপ্রেমীদের ফ্রেমে ধরা পড়েছিল ময়ূর! যা বিশ্ব উষ্ণায়নের ফল বলেই মনে করছেন পাখিপ্রেমীরা। এ বার যাতে রাজ্যের প্রতিটি জেলা থেকেই পাখিদের খবরাখবর মেলে, সেই চেষ্টা করেছেন আয়োজকেরা। তাঁদের সঙ্গে যোগ্য সঙ্গত করছে ‘বার্ড কাউন্ট ইন্ডিয়া’ ও ‘ই-বার্ড’।
কী ভাবে হচ্ছে গণনা? পাখি দেখিয়ে সংগঠনটির সদস্য, চিকিৎসক কণাদ বৈদ্য জানাচ্ছেন, যে কোনও জায়গা থেকে অন্তত ১৫ মিনিট ধরে পাখি দেখে ‘চেকলিস্ট’ জমা দিতে হচ্ছে ‘ই-বার্ড’ অ্যাপে। কোন পাখি প্রজননের জন্য বাসা বাঁধছে, বা বাসায় বসে সে কী করছে— সেই তথ্যও নথিভুক্ত করতে হচ্ছে। কণাদের কথায়, ‘‘পাখি পরিবেশের সূচক। তাই বাসা তৈরিতে পাখিরা কোন জায়গা (হ্যাবিট্যাট) বেশি পছন্দ করছে, তা ওদের থেকেই অনেকটা জানা যাবে। পরবর্তীকালে কোনও ‘হ্যাবিট্যাট’ নষ্ট হয়ে গেলে সেটাও এই তথ্য দিয়েই বোঝা যাবে। ভবিষ্যতে সংরক্ষণের প্রশ্নে অথবা আইনি বিষয়ে এই সংক্রান্ত তথ্য অনেকটাই কাজে লাগবে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)