প্রায় আড়াই কোটি টাকার সাইবার প্রতারণার মামলায় আরও এক জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। শুক্রবার ঝাড়খণ্ডের সরাইঢেলা থেকে তাকে গ্রেফতার করেন রাজ্য পুলিশের সাইবার অপরাধ শাখার গোয়েন্দারা। পুলিশ জানিয়েছে, ধৃতের নাম শিবু কুমার। বাড়ি সরাইঢেলাতেই। এ নিয়ে এই মামলায় মোট ১০ জনকে গ্রেফতার করলেন গোয়েন্দারা। ধৃত শিবুকে শনিবার বিধাননগর আদালতে তোলা হলে বিচারক ১০ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেন।
সম্প্রতি এই মামলায় বিধাননগর আদালতে জালিয়াতি, প্রতারণা-সহ তথ্যপ্রযুক্তি আইনের একাধিক ধারায় ন’জন অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেন তদন্তকারীরা। যাদের মধ্যে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের পাঁচ জন আধিকারিকও রয়েছে। বর্তমানে ধৃত ন’জনই জেল হেফাজতে।
গত অগস্ট মাসে রাজ্য পুলিশের সাইবার অপরাধ শাখার তদন্তকারীরা জানতে পারেন, একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের মোটা অঙ্কের আমানত, জীবন বিমা বা অন্য বিমা পলিসির টোপ দিয়ে প্রায় ২ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকার প্রতারণা করেছে একটি চক্র। ঘটনার তদন্তে নেমে গোয়েন্দারা জানতে পারেন, ওই বেসরকারি ব্যাঙ্কেরই কয়েক জন আধিকারিক ওই চক্রের সঙ্গে জড়িত। সেই সূত্র ধরে সাইবার অপরাধ শাখা ওই ব্যাঙ্কের হাজারিবাগ শাখার কাস্টমার রিলেশন অফিসার যশবন্ত প্রসাদ, জামতাড়া শাখার কাস্টমার রিলেশন অফিসার শুভম কুমার, সরাইঢেলা শাখার সেলস ম্যানেজার সৌরভকুমার সিংহ, মেটিয়াবুরুজ শাখার সেলস ম্যানেজার আসাদ রাজা এবং মেটিয়াবুরুজ শাখার কাস্টমার রিলেশ অফিসার ইয়াসির আরাফতকে গ্রেফতার করেন। তাদের বিরুদ্ধে এনসিআরপি পোর্টালে ৮০টির মতো প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে। ধৃতদের জেরা করে পুলিশ পরে আরও চার জনকে গ্রেফতার করে, যারা ওই চক্রের সঙ্গে যুক্ত। এদের মধ্যে দু’জনের অ্যাকাউন্টে প্রতারণার টাকা ঢুকেছিল।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, শুক্রবার বাড়ি থেকে গ্রেফতার হওয়ার সময়েশিবু ফোনে নিজেকে ব্যাঙ্ককর্মী বলে পরিচয় দিয়ে এক গ্রাহকের টাকা লুট করার চেষ্টা করছিল। মূলত নিজেকে ব্যাঙ্ককর্মী বলে পরিচয় দিয়ে কেওয়াইসি আপডেট করানোর নামে এই প্রতারণা চালাত ধৃত যুবক। এক তদন্তকারী জানান, ধৃত ব্যাঙ্কেরআধিকারিকেরা নিজেদের ক্ষমতাবলে ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের বিস্তারিত তথ্য জেনে নিত। এর পরে তা দিয়ে দিত শিবুর মতো টেলিকলারদের। গ্রাহকের বিস্তারিত তথ্য থাকার ফলে শিবু গ্রাহককে ফোন করে তাঁর বিস্তারিত তথ্য জানিয়ে বিশ্বাস অর্জন করত। আর সেই সুযোগে গ্রাহকের অ্যাকাউন্টের দখল নিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিত।
এই ঘটনায় আর কেউ রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে গোয়েন্দারা জানিয়েছেন। তবে ব্যাঙ্কের আরও কয়েক জন ওই চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে তদন্তে উঠে এসেছে। তাদের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহের কাজ চলছে বলে সূত্রের খবর।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)