E-Paper

পিছনে ট্রেন, রেল সেতু থেকে নীচে পড়ে মৃত্যু

প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, রেললাইন ধরে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি ফেরার পথে ট্রেন এসে যাওয়ায় দিশাহারা হয়ে রেল সেতুর উপর থেকে সুষমা ঝাঁপ দেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০২৫ ০৯:১৬
অব্যাহত: উল্টোডাঙা স্টেশনের কাছে রেল সেতু থেকে পড়ে মৃত্যুর পরেও ঝুঁকি নিয়ে রেললাইন পারাপার চলছেই। শুক্রবার।

অব্যাহত: উল্টোডাঙা স্টেশনের কাছে রেল সেতু থেকে পড়ে মৃত্যুর পরেও ঝুঁকি নিয়ে রেললাইন পারাপার চলছেই। শুক্রবার। ছবি: স্নেহাশিস ভট্টাচার্য।

সময় বাঁচাতে এক ঘণ্টার পথ ১৫ মিনিটে পেরোতে গিয়েই ঘটল বিপত্তি। রেল সেতুর উপর থেকে নীচে পড়ে মারা গেলেন বধূ। শুক্রবার সকাল ৭টা নাগাদ লেক টাউন থানা এলাকার পালপাড়ায় ওই দুর্ঘটনা ঘটে। পুলিশ জানায়, মৃতার নাম সুষমা প্রসাদ (৪০)। তিনি দক্ষিণদাঁড়ি এলাকার ঋষি অরবিন্দ কলোনির বাসিন্দা। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, রেললাইন ধরে হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি ফেরার পথে ট্রেন এসে যাওয়ায় দিশাহারা হয়ে রেল সেতুর উপর থেকে সুষমা ঝাঁপ দেন। এর জেরে রাস্তার উপরে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয় বলে প্রাথমিক ভাবে জেনেছে পুলিশ। দেহটি উদ্ধার করে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্তের জন্য পাঠায় পুলিশ।

স্থানীয়েরা জানান, সুষমা আদতে উত্তর ২৪ পরগনার টাকির বাসিন্দা। স্বামী রাকেশ প্রসাদের সঙ্গে তিনি সেখান থেকেই বাড়ি ফিরছিলেন এ দিন। ট্রেনে চেপে এসে উল্টোডাঙা স্টেশনে নেমেছিলেন তাঁরা। তার পরে রেললাইনের উপর দিয়েই ৫ নম্বর রেল সেতু ধরে দক্ষিণদাঁড়ির দিকে হেঁটে যাচ্ছিলেন ওই দম্পতি। সাধারণত ওই পথে অসংখ্য স্থানীয় মানুষ হেঁটে যাতায়াত করেন। তবে এ দিন সুষমাদের হেঁটে যাওয়ার সময়ে পিছন দিক থেকে একটি ট্রেন চলে আসে। ট্রেনটি আচমকা হুইসল দিলে সুষমা ও রাকেশ ভয় পেয়ে রেল সেতুর উপর দিয়ে যাওয়া লাইনটি লাফ দিয়ে পেরিয়ে সরে যেতে চান। কিন্তু সেখানে ফাঁক থাকায় সুষমা গলে নীচে পড়ে যান। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, উপর থেকে পড়ার সময়ে সুষমা কোনও কিছুর সঙ্গে ধাক্কা খেয়েছিলেন। তার জেরে রাস্তায় উপরে ছিটকে পড়ে তাঁর মৃত্যু হয়। রাকেশ লাইনের পাশে জড়ো হয়ে থাকা পাথরের উপরে পড়ে জখম হন। রাকেশ পেশায় রাজমিস্ত্রি। ব্যাঙ্কের কাজ থাকায় শ্বশুরবাড়ি থেকে এ দিন স্ত্রীকে নিয়ে ফিরছিলেন। ওই দম্পতির একটি দশ বছরের মেয়ে রয়েছে।

স্থানীয় পুরপ্রতিনিধি তথা দক্ষিণ দমদম পুরসভার চেয়ারম্যান পারিষদ পার্থ বর্মা জানান, ওই এলাকায় এমন বিপজ্জনক ভাবে লাইন পারাপার করা নিয়ে বহু বার লোকজনকে সতর্ক করা হয়েছে, কিন্তু লাভ হয়নি। স্থানীয়েরা জানান, উল্টোডাঙা স্টেশন থেকে নেমে অটো বা অন্য যানবাহনে চেপে এলাকায় পৌঁছতে ঘণ্টাখানেক সময় লাগে। তার বদলে লাইন ধরে হেঁটে গেলে ১০ থেকে ১৫ মিনিটেই গন্তব্যে পৌঁছনো যায়। তাই দিনের বিভিন্ন সময়ে অনেকেই উল্টোডাঙা স্টেশনে ট্রেন ধরতে বা ট্রেন থেকে নেমে ওই পথ ধরে যাতায়াত করেন।

রাকেশের ভাইপো রোহিত প্রসাদ বলেন, ‘‘কাকার ব্যাঙ্কের কাজ ছিল। উল্টোডাঙায় নেমে কাকিমাকে নিয়ে ফিরছিলেন। ওই পথেই সবাই যাতায়াত করি। ট্রেনটি অন্য লাইনে পিছন দিক এসে হর্ন দিয়েছিল। কাকিমা ভেবেছিলেন বোধ হয় ওঁদের লাইনে ট্রেন এসে গিয়েছে। ভয়ে লাফ দিয়ে সরতে গিয়ে সেতুর ফাঁক গলে নীচে পড়ে যান।’’

পূর্ব রেল জানাচ্ছে, লাইন ধরে হাঁটার প্রবণতা ঠেকাতে অনেক জায়গাতেই রেললাইনে প্রবেশের মুখে ব্যারিকেড বসানোর কাজ করা হয়। এ দিনের দুর্ঘটনাস্থলেও তেমন ব্যারিকেড রয়েছে। কিন্তু তার মধ্যের ফাঁকা অংশ দিয়েই লোকজন রেললাইনে ওঠেন বলে অভিযোগ। পূর্ব রেল সূত্রের খবর, শিয়ালদহ থেকে দমদম স্টেশন পর্যন্ত পথে ঘন ঘন ট্রেন চলাচল করে। তাই ওই পথে লাইন ধরে হাঁটা বিপজ্জনক বলেই জানান রেল আধিকারিকেরা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

rail bridge Accidental Death

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy