ভোট গোনা তো অনেক দূর। পারলে এখনই যেন বিজয়োৎসব সেরে ফেলেন শক্তি রায়চৌধুরী। বারুইপুরে বিদায়ী তৃণমূল পুর-বোর্ডের চেয়ারম্যান।
লাগাতার ২০ বছর বামফ্রন্টের হাতছাড়া বারুইপুর পুরসভা। প্রথম দু’দফায় বারুইপুর পুরসভা কংগ্রেসের দখলে ছিল। তারপর দু’ফায় তৃণমূলের দখলে। বাম জমানার সেই দুই বোর্ডেও চেয়ারম্যান ছিলেন শক্তিবাবুই। বিদায়ী বোর্ডের চেয়ারম্যানের কথায়, ‘‘পাঁচ বছরে বিরোধীদের এক ইঞ্চি খেলার জায়গা দিইনি। পুরসভা পরিচালনা নিয়ে আমার বিরুদ্ধে একটি স্মারকলিপিও জমা দিতে পারেনি বিরোধীরা।’’ সিপিএমকে মাথা তোলার কোনও সুযোগই তিনি দেননি বলে দাবি তাঁর।
মোট ১৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে তিনটি সিপিএমের দখলে। তবে গত বিধানসভা ভোটের ফলাফলের নিরিখে তৃণমূলের ভোট ৩ শতাংশ কমেছে লোকসভা নির্বাচনে। শহর এলাকায় তৃণমূলের ভোট কমার পরেও আসন দখলের সমীকরণে বিরোধী বামফ্রন্টের অবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি। ২০১১-র বিধানসভা ও ২০১৪-র লোকসভা ভোটের ফলাফলের নিরিখে ৩টি আসনই রয়েছে।
শুধু সিপিএম নয়। গত লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রবল হাওয়া থাকা সত্ত্বেও পুর-এলাকায় পদ্মফুলের হদিস খুঁজতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ বার ১৭টি আসনেই প্রার্থী দিয়েছে বিজেপি। দক্ষিণ ২৪ পরগনা বিজেপি জেলা সম্পাদক (পূর্ব) দেবতোষ আচার্য বলেন, ‘‘আমাদের ফল ভাল হবে। তলে তলে প্রতিষ্ঠান-বিরোধী ভোট জমা হয়েছে। তা বিজেপির ঝুলিতেই আসবে। ঘাসফুল ছেড়ে পদ্মফুলের দিকে ঝুঁকছে মানুষ।’’
রাজ্যে ক্ষমতায় থাকাকালীনও বারুইপুর পুরসভায় তৃণমূলের গড়ে দাঁত ফোটাতে পারেনি বামফ্রন্ট। তবে ১৩, ১৪ ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ড বরাবরই দখলে রেখেছে সিপিএম। গত লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে ফলাফলের পরে এক ইঞ্চিও এগোতে পারেনি বামফ্রন্ট। ওই তিনটি আসনই দখলে রয়েছে। তবে এ বার আসন বাড়বে বলে দাবি সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অলোক ভট্টাচার্যের। তিনি বলেন, ‘‘তিনটি থেকে আসন বেড়ে পাঁচটি হবেই।’’ অলোকবাবুর কথায়, ‘‘পানীয় জল সরবরাহ থেকে নিকাশি— অধিকাংশ ওয়ার্ডেই সমস্যা রয়েছে। একটা প্রতিষ্ঠান বিরোধী হওয়া উঠেছে। রাজ্যে পালাবদলের পরে নানা এলাকায় তৃণমূলের দৌরাত্ম্যে মানুষ অতিষ্ঠ। সেই কারণেই মানুষ চুপচাপ রয়েছে। ইভিএমে সব জবাব মিলবে। বহু মানুষ প্রকাশ্যে না এলেও ফোনে যোগাযোগ রাখছেন। পরিবর্তনের একটা হাওয়া রয়েছে।’’
সবক’টি ওয়ার্ডে নিজস্ব ভোটব্যাঙ্ক থাকা সত্ত্বেও কংগ্রেস কোনও ওয়ার্ডেই এগিয়ে নেই। প্রায় অস্তিত্বহীন বলা চলে। তবে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দলীয় প্রার্থী মৌমিতা চক্রবর্তীকে নিয়ে আশাবাদী জেলা কংগ্রেসের নেতারা। গৃহবধূ মৌমিতার শ্বশুর শিবনারায়ণ চক্রবর্তী পূজারী। পাড়ায় পাড়ায় সব বাড়িতেই তাঁর যাওয়া-আসা রয়েছে। সেই জনসংযোগকেই হাতিয়ার করে ভোটযুদ্ধে নেমেছেন বৌমা মৌমিতা। পড়ে পাওয়া চোদ্দো আনা ওই একটি আসনের আশায় কংগ্রেস নেতারা।