Advertisement
২০ মে ২০২৪

ছেলেদের মারেননি নীল, দাবি ঘিরে সংশয়ে পুলিশ

একটি বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক এবং প্রচুর টাকা দেনা। পাম অ্যাভিনিউয়ে যমজ ভাই ও মায়ের খুনের পিছনে কারণ কি এর কোনও একটি? নাকি দু’টিই? আপাতত সেটাই খুঁজছে পুলিশ।

ফনসেকা দম্পতি।

ফনসেকা দম্পতি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৬ ০০:৪৭
Share: Save:

একটি বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক এবং প্রচুর টাকা দেনা। পাম অ্যাভিনিউয়ে যমজ ভাই ও মায়ের খুনের পিছনে কারণ কি এর কোনও একটি? নাকি দু’টিই? আপাতত সেটাই খুঁজছে পুলিশ। তবে গৃহকর্তা নীল ফনসেকাই তাঁর যমজ দুই ছেলে ও স্ত্রীকে খুনের পরে ছুরি দিয়ে নিজের গলা, বুক ও হাতে আঘাত করে জখম হয়েছেন, সে ব্যাপারে মোটামুটি নিশ্চিত তারা।

ভোর সাড়ে চারটেয় নীল শৌচাগারে যাওয়ার জন্য ওঠেন। অন্য ঘরে তাঁর মা শার্লি ও মেয়ে সামান্থা গল্প করছিলেন। তাঁদের ঘুমোতে যেতে বলেন নীল। এর চার ঘণ্টা বাদেই ওই ফ্ল্যাটে নীলের স্ত্রী জেসিকা এবং দুই যমজ ছেলে জোশুয়া ও ড্যারেনের রক্তাক্ত দেহ মেলে, মুমূর্ষু অবস্থায় পাওয়া যায় নীলকে।

গোয়েন্দাদের মতে, ছক কষেই স্ত্রী ও ছেলেদের খুন করেন নীল। খুনের আগে ঘর থেকে বেরিয়ে তিনি নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন, তাঁর মা ও মেয়ে যাতে ঘুমিয়ে পড়েন। ময়না তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টেও গোয়েন্দারা জেনেছেন, তিনটি খুনই হয়েছে ভোর পাঁচটা থেকে সকাল আটটার মধ্যে। মেয়ের সঙ্গে কথা বলে নীল ঘরে ফেরার পরে। এক গোয়েন্দা অফিসারের কথায়, ‘‘পরিকল্পনা ছিলই। তবে সেই সঙ্গে কিছু একটা হয়েছিল। যাতে নীল সিদ্ধান্ত নেন, সবাইকে শেষ করবেন। তা কী, জানতে হবে।’’

গোয়েন্দারা জানাচ্ছেন, ঘুমন্ত দুই ছেলের মাথায় ডাম্বেল দিয়ে মেরে ও ছুরি দিয়ে গলা কেটে খুন করেন নীল। তবে এক তদন্তকারীর বক্তব্য, ‘‘জেসিকা ঘুমের মধ্যে খুন হননি। তাঁর সঙ্গে নীলের ঝগড়া বা ধস্তাধস্তিও হয় বলে মনে হচ্ছে। তাতে নীল আহত হননি। জেসিকাকে তিনি খুন করেন শুধু ডাম্বেল দিয়ে মাথায় মেরে।’’

মধ্যবয়স্ক ওই ব্যক্তি গলায় ক্ষত নিয়ে ব্রড স্ট্রিটের এক নার্সিংহোমে ভর্তি। কথা বলার অবস্থা নেই। এক পুলি‌শকর্তা বলেন, ‘‘লিখিত ভাবে নীলের দাবি, তাঁর স্ত্রীই দুই ছেলেকে খুন করেন। তার আগে জেসিকা আক্রোশবশত তাঁর উপরেও ঝাঁপিয়ে পড়েন। দুই ছেলেকে খুন হতে দেখে নীল স্ত্রীকে আঘাত করেন। লুটিয়ে পড়েন জেসিকা। কিছু পরে সম্বিৎ ফিরতে নীল বুঝতে পারেন তাঁর ভুল হয়েছে। তিনি তখন নিজেকে শেষ করে দিতে চান।’’ তবে ওই অফিসারের বক্তব্য, ‘‘নীল ঠিক তথ্য দেননি। তিন জনকেই তিনি খুন করেছেন।’’

পুলিশের দাবি, তিন জনকে খুনের পরে নিজের শরীরের তিন জায়গায় ছুরি দিয়ে আঘাত করেন নীল। এক অফিসার বলেন, ‘‘নিজে কেউ ছুরির ক্ষত করলে যে দিক থেকে ছুরি টানা হয়েছে, সেখানে আঘাত গভীরতর আর যেখানে তা শেষ হচ্ছে, সেই জায়গার জখম কম গভীর থাকবে। নীলের গলার ক্ষত সে রকম।’’

পুলিশ জানাচ্ছে, লিখিত বয়ানে নীল তাঁর একটি বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের কথা জানিয়েছেন। তবে তাঁর দাবি, তিন বছর আগে তা শেষ হয়ে যায়। তার রেশ ধরে এখনও স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর লড়াই চলছিল বলে কবুল করেছেন নীল। লিখিত বয়ানে নীল আরও জানান, দু’দিন মোবাইল বন্ধ রাখার পরে শনিবার ভোরে তিনি দেখছিলেন মিস্ড কল ও মেসেজ কী কী এসেছে। তখন তাঁর স্ত্রী ওই পুরনো সম্পর্ক নিয়ে সন্দেহ করে তাঁর উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন।

কিন্তু নীল মেয়েকে মারলেন না কেন? ওই অফিসারের যুক্তি, ‘‘মেয়ে বাইরে থাকেন। তাই নীল তাঁকে এর মধ্যে টানেননি। বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক নিয়ে গণ্ডগোল ছিল স্ত্রী ও দুই ছেলের সঙ্গে।’’ প্রতিবেশীরা জানান, প্রায়ই স্ত্রী ও দুই ছেলের সঙ্গে নীলের ঝগড়া হতো। তখন জোরে গান চলত বাড়িতে। নীলের মোবাইলের কল রেকর্ড ঘেঁটে সে বিষয়ে বিশদে জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।

আবার পুলিশের এক সূত্রের খবর, ২০ লক্ষ টাকা দেনার বোঝা নীলের মাথায়। ন’মাস ধরে ফ্ল্যাটের ভাড়া, মাসিক প্রায় ২০ হাজার টাকা। বাড়ির মালিক রবি শেঠ ও পড়শিরা জানান, পেশায় ইন্টিরিয়র ডেকরেটর নীল ও তাঁর পরিবার প্রায়ই শহরের বিভিন্ন অভিজাত ক্লাবে ও বাড়িতেও পার্টি দিতেন। কিন্তু তলায় তলায় ঘুণ ধরেছিল ব্যবসায়। তিনটি গাড়ি থাকলেও গত মাস ছয়েক দু’টি গাড়ি পড়ে ছিল গ্যারাজেই।

নার্সিংহোমে নীল ফনসেকার কেবিনের বাইরে এখন ঠায় দাঁড়িয়ে তিন পুলিশকর্মী। অচেতন নীলের হাত দু’টিও বাঁধা বিছানার সঙ্গে। কিন্তু কেন? হাসপাতালের এক কর্মী বলেন, ‘‘ও যতই গল্প বানাক, আসলে ধরা পড়ে গিয়েছে। যদি ফের আত্মহত্যার চেষ্টা করে, তাই হাত বেঁধে রেখেছে পুলিশ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

palm avenue murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE