পুজোর চার দিন শহরের বাইরে কাটাবেন। কিন্তু মণ্ডপ ভ্রমণের স্বাদ বাদ থাকলে কি চলে! তাই তৃতীয়ার দিন সপরিবার প্রতিমা দর্শনে বেরিয়ে পড়েছেন ফুলবাগানের চন্দন ঘোষ। চন্দনবাবুর কথায়, ‘‘কলকাতার পুজো বাদ দেওয়া যায় না। তাই গোয়া যাওয়ার আগেই সপরিবার বেরিয়ে পড়েছি।’’
মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকেই রাসবিহারী মোড়ের কাছে একটি পুজোয় সামনে লম্বা লাইন পড়ে গিয়েছে। ভিড় দেখে খুশি পুজো উদ্যোক্তারা। এক কর্মকর্তার কথায়, ‘‘তৃতীয়ায় এই ভিড় দেখে ভাল লাগছে। আশা রাখছি এ বছরের পুজো হিট হবে।’’
পঞ্জিকা বলছে অপেক্ষা করতে হবে এখনও দু’দিন। কিন্তু তার আগেই সেজে উঠেছে কলকাতার একাধিক মণ্ডপ। মহালয়ের পরেই শহরের কয়েকটি বড় পুজোর উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার থেকেই শহরের বেশ কয়েকটি পুজোর মণ্ডপ খুলে দেওয়া হয়েছে দর্শনার্থীদের জন্য। তাই তৃতীয়ার সন্ধ্যাতেই শহরের বড় বড় কিছু মণ্ডপে ভিড় ছিল বেশ ভালই। তবে তৃতীয়ার দিন ঠাকুর দেখতে শহরবাসী ভিড় করলেও যানজটের যন্ত্রণা থেকে রেহাই পাননি তাঁরা। এর সঙ্গে অনিয়মিত মেট্রো চলাচল সেই ভোগান্তিকে আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে বলে সাধারণ মানুষের অভিযোগ।
মহালয়ার আগে থেকেই মহানগরের রাস্তায় শুরু হয়েছে যানজট। প্রতি দিন গড়িয়াহাট, ভবানীপুর, বড়বাজার, পার্ক সার্কাস, ধর্মতলা, শোভাবাজার, কলেজ স্ট্রিটে সামান্য রাস্তা পেরোতেও নির্দিষ্ট সময়ের দ্বিগুণ-তিনগুণ বেশি সময় লাগছে। এ বার তার সঙ্গে শুরু হয়েছে মা উড়ালপুল এবং এজেসি বসু রোডের উড়ালপুলের যান যন্ত্রণা। ওই দুই উড়ালপুলে উঠলে কখন গাড়ি নামবে, ঠিক থাকছে না। যেমন মঙ্গলবার বেলার দিকে পার্ক সার্কাসের দিক থেকে ওই উড়ালপুলে উঠেছিলেন নিতাই মণ্ডল। যখন উড়ালপুল থেকে ডিএল খান রোডের সংযোগস্থলে নামলেন ততক্ষণে ঘড়ির কাটা প্রায় ৪০ মিনিট পার করে দিয়েছে।
মহানগরের রাস্তা আটকে পুজো বা পুজোর ভিড় নতুন নয়। প্রতি বছরই তা হয়। কিন্তু মহালয়ার আগে থেকেই এরকম যানজটের শিকার কেন হতে হচ্ছে মহানগরবাসীকে?
লালবাজারের একাংশ জানাচ্ছে, এ বার মহালয়া পেরোনোর পরে রাস্তায় ব্যারিকেড পড়ে গিয়েছে। তার উপরে নিত্য দিন বিভিন্ন রাস্তায় স্থানীয় সমস্যা তৈরি হচ্ছে। এর জেরেই যানজটে নাকাল হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। পুলিশকর্তাদের দাবি, মঙ্গলবার বিকেলের দিকে এজেসি বসু রোড উড়ালপুলে একটি জেসিবি গাড়ি খারাপ হয়ে যায়। যার জেরে এক সময় বন্ধ করে দিতে হয় ওই উড়ালপুলের যান চলাচল। এ ছাড়া মঙ্গলবার বিভিন্ন জায়গাতে পুজোর ভিড় এবং কুমোরটুলি থেকে শহরের বিভিন্ন মণ্ডপে প্রতিমার যাত্রা— এই দুয়ের জেরে যানজট আরও বেড়েছে।
উৎসবের মরসুমকে পুলিশ দায়ী করলেও সাধারণ মানুষের অভিজ্ঞতা অন্যরকম। এ দিন শহরের রাস্তায় ঘুরে দেখা গিয়েছে পুজোর ভিড় শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই রাস্তায় যানজটের কবলে পড়তে হয়েছে অফিস যাত্রীদের। ফলে তৃতীয়ার সকাল থেকেই শহরের বিভিন্ন রাস্তায় যানবাহনের গতি ছিল শম্বুক। অবস্থা এমন হয় যে হাজরা মোড় থেকে এক্সাইড মোড়, মাত্র দু’কিলোমিটারের রাস্তা যেতে এ দিন সকালে সময় লেগেছে প্রায় চল্লিশ মিনিটের বেশি। একই অবস্থা ছিল এজেসি বসু রোডের ওপর এবং নিচের দুই রাস্তাতেই। কলকাতা ট্রাফিক পুলিশের এক কর্তা জানিয়েছেন, এ দিন এক সময় এজেসি বসু রোডের পশ্চিমমুখী রাস্তায় দাড়িয়ে থাকা গাড়ির শেষ মাথা পৌঁছে গিয়েছিল মিন্টো পার্কের কাছাকাছি। ওই সময় একই অবস্থা ছিল এজেসি বসু রোড উড়ালপুলেরও। আর এর ধাক্কায় সকালের দিকে পুরো থমকে যায় হরিশ মুখার্জী রোড, ডিএল খান রোডে এবং জওহরলাল নেহরু রোডের একাংশের যান চলাচল। এক সময় দেখা যায় জওহরলাল নেহরু রোডের দক্ষিণমুখী গাড়ির সারি দাঁড়িয়ে রয়েছে পার্ক স্ট্রিট উড়ালপুলে উপরে।
দক্ষিণের মতো একই অবস্থা হয়েছিল উত্তর এবং মধ্য কলকাতায়। লালবাজার সূত্রের খবর, দুপুরের পর থেকে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউ, কলেজ স্ট্রিট, বিধান সরণি, মহাত্মা গাঁধী রোড, শিয়ালদহে যানজট হয়। ভোগান্তি বাড়ে নিত্যযাত্রীদের।
লালবাজার সূত্রের খবর, পুজো দেখার পাশাপাশি এ দিন সন্ধ্যাতেও হাতিবাগান, নিউ মার্কেট, গড়িয়াহাটের মতো বাজার এলাকায় প্রচুর লোক জড়ো হয়েছিল। তার জেরেও যানবাহনের গতি ঢিমে হয়ে গিয়েছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy