Advertisement
E-Paper

পাচারের পথে উদ্ধার উল্লুক, পাখি

বাসন্তী হাইওয়েতে কয়েক জন গাড়ি আটকাতেই ঘাবড়ে গিয়েছিলেন চালক ও পাশে বসা আরোহী। সেই গাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়ে তাজ্জব হয়ে গেলেন গোয়েন্দারা! তাঁরা দেখলেন, ভিতরে ৪২টি বিদেশি ‘প্যারাকিট’ ও ‘কনিওর’ (টিয়া প্রজাতির পাখি)-এর পাশাপাশি দু’টি উল্লুক এবং দু’টি ভাম! খাঁচার ভিতরে জড়োসড়ো হয়ে বসে রয়েছে প্রাণীগুলি।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ জুন ২০১৮ ০১:৫৩
উদ্ধার হওয়া দু’টি উল্লুক। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

উদ্ধার হওয়া দু’টি উল্লুক। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

বাসন্তী হাইওয়েতে কয়েক জন গাড়ি আটকাতেই ঘাবড়ে গিয়েছিলেন চালক ও পাশে বসা আরোহী। সেই গাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়ে তাজ্জব হয়ে গেলেন গোয়েন্দারা! তাঁরা দেখলেন, ভিতরে ৪২টি বিদেশি ‘প্যারাকিট’ ও ‘কনিওর’ (টিয়া প্রজাতির পাখি)-এর পাশাপাশি দু’টি উল্লুক এবং দু’টি ভাম! খাঁচার ভিতরে জড়োসড়ো হয়ে বসে রয়েছে প্রাণীগুলি।

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, বাংলাদেশ থেকে পশুপাখি এ দেশে ঢোকার খবর পেয়েছিল ‘ডিরেক্টরেট অব রেভিনিউ ইন্টেলিজেন্স’ (ডিআরআই)। কোন গাড়িতে আসবে, সে খবরও মিলেছিল। সেই মতো বৃহস্পতিবার সকালে ভোজেরহাটের কাছে ওই নম্বরের গাড়িকে আটকানো হয়। দেখা যায়, পাচারের উদ্দেশ্যে নিয়ে আসা প্রাণীগুলি বসে আছে। ওই ঘটনায় বন্যপ্রাণী পাচারের অভিযোগে দু’জনকে ধরা হয়েছে। ধৃতদের নাম সইদুল গাজি ও সুজাউদ্দিন গাজি। এরা মূলত ‘ক্যারিয়ার’। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে গাড়িটিও।

গোয়েন্দা সূত্রের খবর, বাংলাদেশ থেকে গত মঙ্গলবার বসিরহাট সীমান্ত পেরিয়ে প্রাণীগুলিকে এ দেশে আনা হয়েছিল বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে। এ দিন সকালে ডিআরআই গোয়েন্দারা খবর পান, সাড়ে সাতটা নাগাদ বসিরহাট থেকে পশুপাখি নিয়ে গাড়ি রওনা দিয়েছে কলকাতার দিকে। গাড়ি আটকে দেখা যায়, ভিতরে বসানো একটি বড় খাঁচার ভিতরে দু’টি ভাগ। একটিতে ঘেঁষাঘেঁষি করে বসে রয়েছে দু’টি উল্লুক এবং অন্যটিতে দু’টি ভাম। সেগুলিকে উদ্ধার করে প্রথমে নিজেদের অফিসে নিয়ে যায় ডিআরআই। সেখানে তাদের জল ও ফল খাওয়ানো হয়। পরে তাদের আলিপুর চিড়িয়াখানার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

এ দিন ওই প্রাণীগুলিকে উদ্ধারের পরেই কেন্দ্রীয় বন মন্ত্রকের অধীন ‘ওয়াইল্ডলাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল ব্যুরো’ (ডব্লিউসিসিবি)-র সঙ্গে যোগাযোগ করে ডিআরআই। ব্যুরোর অফিসারেরা গিয়ে প্রাণীগুলির চিহ্নিতকরণ ও নথি তৈরিতে সাহায্য করেন। ডব্লিউসিসিবি-র অফিসারেরা জানাচ্ছেন, ভারতীয় বন্যপ্রাণ আইনের প্রথম তফশিলভুক্ত উল্লুক ‘বিপন্ন’ গোত্রের প্রাণী। উদ্ধার হওয়া পাখিগুলি রোসেল্লা, কনিওর ও গ্রাস প্যারাকিট। এই কনিওর মূলত আমেরিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া যায় বলে ডিআরআই জানিয়েছে। এই পাখিগুলির প্রচুর দাম।

ডব্লিউসিসিবি সূত্রের খবর, এ দেশে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জঙ্গলে উল্লুকের (হুলক গিবন) বাস। বাংলাদেশে এবং চিনের একাংশেও উল্লুকের দেখা মেলে। বন্যপ্রাণ আইনে বাঘের আর উল্লুকের সমান মর্যাদা। আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘আইইউসিএন’-এর লাল তালিকাভুক্ত এই প্রাণী পাচারের দায়ে তিন থেকে সাত বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। এই উল্লুকগুলিকে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জঙ্গল না বাংলাদেশ, কোথা থেকে ধরা হয়েছে, তা রাত পর্যন্ত স্পষ্ট হয়নি।

বছর কয়েক আগে বাগুইআটির এক পাখি ব্যবসায়ীর বাড়িতে হানা দিয়েছিল ডব্লিউসিসিবি এবং ডিআরআই-এর যৌথ দল। উদ্ধার করা হয়েছিল তিনটি শিম্পাঞ্জি এবং পাঁচটি মারমোসেট (ছোট বাঁদর জাতীয় প্রাণী)-সহ কিছু বিদেশি পাখি। সেই শিম্পাঞ্জি ছানা এবং মারমোসেটগুলি বর্তমানে আলিপুর চিড়িয়াখানাতেই রয়েছে। সেগুলিও বাংলাদেশ থেকে সীমান্ত পেরিয়ে ঢুকেছিল বলে জানিয়েছিলেন তদন্তকারীরা।

গোয়েন্দাদের প্রাথমিক ধারণা, উল্লুক, ভাম ও পাখিগুলিকে কোনও বিত্তশালীর ব্যক্তিগত চিড়িয়াখানার জন্য নিয়ে আসা হচ্ছিল। সাধারণত দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতে এই ধরনের চিড়িয়াখানার চল রয়েছে। যারা এই পশুপাখি নিয়ে ধরা পড়েছে, তারা গোটা চক্রের খুব ক্ষুদ্র একটি অংশ। চার-পাঁচটি স্তর পেরিয়ে তবে গন্তব্যে পৌঁছয় এই ধরনের চোরাই পশুপাখি। যাঁরা এই ধরনের চিড়িয়াখানা চালান, তাঁরা প্রভাবশালীও বটে। এই ধরনের উল্লুক বা বিদেশি পাখির নির্দিষ্ট কোনও দামও হয় না বলেই গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে। ধনী ব্যক্তিদের মর্জির উপরেই সেই দাম নির্ভর করে।

Wildlife Trafficking Recovery Parakeets Conures Civets Apes Illegal Trafficking Hoolock gibbon
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy