Advertisement
E-Paper

‘ভুল’ করে শ্বাসনালীতে রাইল্‌স টিউব, শিশুমৃত্যুতে কমিশনে পরিবার  

অভিযোগকারী দম্পতি, প্রদীপ্তকুমার গঙ্গোপাধ্যায় এবং সঙ্গীতা গঙ্গোপাধ্যায়ের ছেলে পর্ণশুভ্রের বয়স ছিল ৬ বছর ৯ মাস।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:৩৯
পর্ণশুভ্র গঙ্গোপাধ্যায়

পর্ণশুভ্র গঙ্গোপাধ্যায়

চিকিৎসায় গাফিলতিতেই আড়াই বছরের শিশু ঐত্রী দে-র মৃত্যু হয়েছিল জানিয়ে গত ৩০ জুন মুকুন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালকে ১০ লক্ষ টাকা জরিমানা করেছিল স্বাস্থ্য কমিশন। তার আড়াই মাসের মাথায় ফের ওই হাসপাতালের বিরুদ্ধেই স্বাস্থ্য কমিশনের দ্বারস্থ হলেন এক বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর বাবা-মা। দম্পতির অভিযোগ, চিকিৎসায় গাফিলতির কারণেই মারা গিয়েছে তাঁদের ছ’বছরের সন্তান।

ওই দম্পতির দাবি, ‘‘ঘুমনোর সময়ে শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল ছেলের। তাড়াহুড়ো করে সেই চিকিৎসা করতে গিয়ে খাদ্যনালীর বদলে শ্বাসনালীতে রাইল্‌স টিউব ঢুকিয়ে দিয়েছে হাসপাতাল।’’ এমনকি, চিকিৎসা সংক্রান্ত নথিও দেওয়া হয়নি বলে তাঁদের অভিযোগ। আমরি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, কোভিড পরিস্থিতির কারণে চিকিৎসা সংক্রান্ত নথি দিতে দেরি হচ্ছে। তবে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তাঁরা।

অভিযোগকারী দম্পতি, প্রদীপ্তকুমার গঙ্গোপাধ্যায় এবং সঙ্গীতা গঙ্গোপাধ্যায়ের ছেলে পর্ণশুভ্রের বয়স ছিল ৬ বছর ৯ মাস। জন্ম থেকেই সে ডাউন সিন্ড্রোমে ভুগছিল। জুলাইয়ে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। পারিবারিক চিকিৎসক জানান, হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে নেবুলাইজার দিতে হবে। সঙ্গীতার দাবি, গত ৭ জুলাই রাতে জরুরি বিভাগে ছেলেকে দেখিয়ে নেবুলাইজ করার ব্যবস্থা হয়। তাতে ওকে কিছুটা স্বাভাবিক মনে হয়েছিল। কিন্তু হাসপাতাল পর্ণশুভ্রকে ভর্তি করাতে চাপ দিতে শুরু করে। সঙ্গীতার কথায়, ‘‘প্রথমেই ছেলেকে পিকু (পেডিয়াট্রিক ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটে)-তে ভর্তি করাতে চাইছিলেন চিকিৎসকেরা। সে কারণে আমাদের জন্য আলাদা ঘরেরও ব্যবস্থা করা হয়।’’

প্রদীপ্তবাবু জানিয়েছেন, ৮ জুলাই ভোরে ভর্তির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই চিকিৎসকেরা পর্ণশুভ্রকে পিকু-তে নিয়ে যান। তখনই তার নাকে রাইল্‌স টিউব লাগানো হয়। কিছু ক্ষণ পরেই তাকে পাঠানো হয় ভেন্টিলেশনে। সঙ্গীতা বলেন, ‘‘যে বাচ্চা কয়েক ঘণ্টা আগেও নিজে হাতে খেয়েছে, তাকে কেন ওই টিউব লাগানো হল জানি না। ছেলের কী হয়েছে, এক বারও বলা হয়নি। পরের দিন বলা হয়, এক জন ইএনটি চিকিৎসককে ডেকে ল্যারিঙ্গোস্কোপি করানো হবে। ১১ তারিখ ওই চিকিৎসক জানান, পর্ণশুভ্রর গ্ল্যান্ড ফুলেছে। অস্ত্রোপচার করলেই ঠিক হয়ে যাবে।’’ কিন্তু ১২ জুলাই সকালে সঙ্গীতাদের জানানো হয়, পর্ণশুভ্র মারা গিয়েছে।

প্রদীপ্তবাবু বলেন, ‘‘ডেথ সার্টিফিকেটে মৃত্যুর চারটি কারণ লেখা হয়েছে। আদতে কী হয়েছিল, আজও জানি না।’’ অভিযোগকারী পরিবারের আইনজীবী সিদ্ধার্থ গোস্বামী বলেন, ‘‘চিকিৎসা সংক্রান্ত নথি পাওয়া রোগীর পরিবারের অধিকার। একটি নালী ইসোফেগাস দিয়ে পাকস্থলীতে খাদ্য যায়, আর ট্র্যাকিয়া দিয়ে শ্বাসনালীতে অক্সিজেন ঢোকে। আমাদের ধারণা, ট্র্যাকিয়ায় রাইল্‌স টিউব ঢোকানো হয়েছিল। পরে ল্যারিঙ্গোস্কোপি করে সেই ভুল মেটানো যায় কি না, দেখার চেষ্টা হয়েছে।’’

অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরি হাসপাতালের চিকিৎসক সৌমেন মেউর বলেন, ‘‘বাচ্চাটার শ্বাসনালীতে সমস্যা থাকায় শোয়ার সময়ে তা বন্ধ হয়ে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাচ্ছিল। সঙ্গে বুকে সংক্রমণ ছিল। সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় মৃত্যু হয়।’’ কিন্তু সঙ্গীতাদের প্রশ্ন, এত জটিল একটি চিকিৎসায় এমন তাড়াহুড়ো করা হল কেন? সৌমেনবাবু বলেন, ‘‘এই ধরনের সমস্যা দ্রুত মেটানো ভাল।’’ আমরি হাসপাতাল গোষ্ঠীর সিইও রূপক বড়ুয়া বলেন, ‘‘স্বাস্থ্য কমিশনে উত্তর দেওয়া হবে। ওই পরিবারের হাতেও চিকিৎসা সংক্রান্ত সব নথি তুলে দেওয়া হবে।’’

Death Health Commission
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy