Advertisement
E-Paper

এক জনকে ধরিয়ে দিল কাঁথাই, ধন্দ খুনিকে নিয়ে

যে কাঁথায় মুড়ে পার্ক স্ট্রিটের ফুটপাথে ফেলে দেওয়া হয়েছিল তরুণীর মৃতদেহ, তারই সূত্রে সোমবার গ্রেফতার করা হলো লাগোয়া হোটেলটির ম্যানেজারকে। তথ্যপ্রমাণ লোপাট এবং পুলিশকে ভুল পথে চালিত করার অভিযোগে সৌমেন মিত্র নামে ওই ব্যক্তিকে ধরা হলেও খুনি কে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০১৬ ০১:১২
সেই দেহ। — নিজস্ব চিত্র

সেই দেহ। — নিজস্ব চিত্র

যে কাঁথায় মুড়ে পার্ক স্ট্রিটের ফুটপাথে ফেলে দেওয়া হয়েছিল তরুণীর মৃতদেহ, তারই সূত্রে সোমবার গ্রেফতার করা হলো লাগোয়া হোটেলটির ম্যানেজারকে। তথ্যপ্রমাণ লোপাট এবং পুলিশকে ভুল পথে চালিত করার অভিযোগে সৌমেন মিত্র নামে ওই ব্যক্তিকে ধরা হলেও খুনি কে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। পুলিশ জানায়, ঘটনার পরপরই সৌমেন-সহ হোটেলের কর্মীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। তখনই তাদের কথায় অনেক অসঙ্গতি মিলেছিল। সৌমেনের পাশাপাশি ওই হোটেলের এক কর্মী সাবিনা বিবি এবং শেখ রিজওয়ান নামে আর এক ব্যক্তিকে আটক করেছে পুলিশ।

শনিবার আলিমুদ্দিন স্ট্রিট এবং রিপন স্ট্রিটের মোড়ে একটি ফুটপাথে সোমা দাস নামে ওই তরুণীর দেহ মেলে। পুলিশ জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার থেকে নিখোঁজ ছিলেন বড়তলার ইমাম বক্স লেনের বাসিন্দা সোমা। রবিবার খবরের কাগজে ছবি দেখে দেহটি শনাক্ত করেন তাঁর পালক মা। ময়না-তদন্তে জানা যায়, মারধর করে ও গলা টিপে ওই তরুণীকে খুন করা হয়েছিল। মৃতার দেহ যে কাঁথায় মোড়া ছিল, তা দেখেই সন্দেহ হয়েছিল পুলিশের। রবিবার ঘটনাস্থল লাগোয়া হোটেলটিতে তল্লাশি চালিয়ে স্টোররুমে একই ধরনের অনেকগুলি কাঁথা দেখতে পায় পুলিশ। সেখানেই হোটেলের ম্যানেজার সৌমেন এবং কিছু কর্মচারীকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেন তদন্তকারীরা। বিকেলে ফের লালবাজারে এনে তাঁদের আরও এক দফা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

পুলিশের সন্দেহের তালিকায় ওই হোটেলের নাম উঠে এল কেন?

পুলিশ সূত্রের খবর, পালক মা-কে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গিয়েছে, ওই তরুণী সম্প্রতি যৌনকর্মীর পেশায় যুক্ত হয়েছিলেন। প্রতিবেশীরাও জানান, মাঝেমধ্যেই এক যুবকের সঙ্গে মধ্য কলকাতার একটি হোটেলে যেতেন সোমা। এই তথ্য পাওয়ার পরেই আরও দৃঢ় হয় পুলিশের অনুমান। তবে এখনও পর্যন্ত খুনের কারণ বা পদ্ধতি স্পষ্ট হয়নি পুলিশের কাছে।

পুলিশ জানিয়েছে, জেরায় সৌমেন জানায়, গত শুক্রবার ওই তরুণী এবং এক যুবক হোটেল আসেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা নাগাদ যুবক বেরিয়ে হোটেলের কর্মচারীদের বলেন, তরুণী আত্মহত্যা করেছেন, তিনি ডাক্তার ডাকতে যাচ্ছেন। তিনি আর ফেরেননি। সৌমেনই ঘরের দরজা খুলে ওই তরুণীর ঝুলন্ত দেহ নামিয়ে আনেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন। তার পরে কাঁথা মুড়ে তিনি দেহটি ফেলে দেন।

পুলিশের প্রশ্ন, ওই যুবক ফিরছেন না দেখে বা তরুণীকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখে কেন প্রথমেই পুলিশকে খবর দেননি সৌমেন? এর সদুত্তর মেলেনি ওই ম্যানেজারের কাছে। প্রশ্ন উঠেছে, যে শাড়ি বা ওড়না গলায় দিয়ে তরুণী আত্মহত্যা করেছেন বলে সৌমেনের দাবি, সেই শাড়ি বা ওড়নাই বা কোথায়? তারও উত্তর দিতে পারেননি ওই ব্যক্তি।

সৌমেন জানিয়েছিলেন, তাঁদের হোটেলে দশটিরও বেশি সিসিটিভি রয়েছে। কিন্তু সিসিটিভিগুলি অকেজো থাকায় তাতে কিছুই রেকর্ড হয়নি। পুলিশ সিসিটিভিগুলি পরীক্ষা করে দেখে, সবক’টিই সচল রয়েছে। কিন্তু হোটেল কর্তৃপক্ষ ব্যবহার করতেন না, ফলে বন্ধই পড়ে ছিল। তাই সৌমেনের বিরুদ্ধে শুধু যে মৃতদেহ এবং তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগই শুধু নয়, অভিযোগ উঠেছে গাফিলতিরও। তাঁর বয়ানেই একাধিক অসঙ্গতির জেরেই সৌমেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

তবে পুলিশ আরও জানায়, সৌমেনের বয়ান অনুযায়ী একা ওই তরুণীর দেহ নামিয়ে আনা বা কাঁথায় মুড়ে বাইরে এনে ফেলে দেওয়া সম্ভব নয়। এ কাজে তাঁকে সাহায্য করার অভিযোগেই সাবিনা বিবি নামে ওই কর্মীকে আটক করা হয়েছে। খোঁজ চলছে তরুণীর পলাতক সঙ্গীরও। রাতে আটক হওয়া অন্য ব্যক্তি শেখ রিজওয়ানই সেই সঙ্গী বলে প্রাথমিক ভাবে সন্দেহ পুলিশের।

পুলিশ জেনেছে, সঙ্গী যুবকের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল সোমার। বিয়ে নিয়ে মনোমালিন্যের জেরে সে-ই সোমাকে খুন করেছে বলে পুলিশের অনুমান।

mystery death
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy