Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Metro Rail

Metro Rail: নন এসি রেকের শেষ দৌড়ের উচ্ছ্বাসে প্রথম দিনের ছায়া

রেলপ্রেমী, সংবাদমাধ্যমের কর্মী, যাত্রীদের ছবি তোলার আগ্রহ মনে করিয়ে দিচ্ছিল প্রথম দৌড়ের স্মৃতি।

স্মৃতি: শেষ বার নন এসি রেকে চাপার অভিজ্ঞতা ক্যামেরাবন্দি করছেন যাত্রীরা। রবিবার।

স্মৃতি: শেষ বার নন এসি রেকে চাপার অভিজ্ঞতা ক্যামেরাবন্দি করছেন যাত্রীরা। রবিবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২১ ০৭:৪৯
Share: Save:

রবিবাসরীয় সন্ধ্যায় সমাপতনের মালায় গাঁথা থাকল নন এসি মেট্রোর বিদায়বেলা। ৩৭ বছর আগে কলকাতার প্রথম মেট্রো এসপ্লানেড থেকে ছেড়েছিল নির্ধারিত সময়ের থেকে ঠিক ৬ মিনিট দেরিতে। ভিড়ের চাপে সকাল সাড়ে ৮টার বদলে ট্রেনের চাকা গড়িয়েছিল ৮টা ৩৬ মিনিটে। রবিবার শেষ বারের মতো নন এসি রেক ছাড়ার নির্ধারিত সময় বিকেল সাড়ে ৫টা হলেও তা ছাড়ল ৫টা ৩৬ মিনিটে। কর্ণাটকের নিউ গভর্নমেন্ট ইলেকট্রিক ফ্যাক্টরি (এনজিইএফ) সংস্থার সহযোগিতায় নির্মিত যে রেক প্রথম দিন ছুটেছিল, সেই একই সংস্থার তৈরি নন এসি রেক ছুটল এ দিনও।

সাড়ে তিন দশক ধরে ভিড়, বিলম্ব, যান্ত্রিক গোলযোগ থেকে নানা ওঠাপড়া নন এসি রেকের সঙ্গী হয়ে থেকেছে। তবুও অল্প রক্ষণাবেক্ষণেই ফের ছোটার জন্য তৈরি থেকেছে রেকগুলি। এ দিন সেই সব কথাই উঠে এল মেট্রোর প্রাক্তন ও বর্তমান কর্মী এবং আধিকারিকদের কথায়। তখন সারা দেশে প্রযুক্তিবিদদের রেল চালানোর অভিজ্ঞতা থাকলেও মাটির নীচে রেল চালানোর অভিজ্ঞতা ছিল না। মেট্রোর ধরাবাঁধা সহজলভ্য প্রযুক্তিও ছিল না। ফলে বাধার পাহাড় অতিক্রম করতে সময় লেগেছে। সুড়ঙ্গ নির্মাণ থেকে ট্রেন চালানো— কিছুই নির্বিঘ্নে হয়নি। কাজ শুরু হওয়ার প্রায় ১১ বছর পর এসপ্লানেড থেকে ভবানীপুরে ছুটেছিল মেট্রো। কিন্তু দমদম থেকে টালিগঞ্জ পর্যন্ত মেট্রো ছুটতে কাজ শুরুর পরে লেগেছে পাক্কা ২৩ বছর।

দীর্ঘ মহড়ার শেষে মেট্রো যখন পরিষেবা শুরু করার প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখনই ১৯৮৪ সালের জুন মাসে বৃষ্টিতে এসপ্লানেড থেকে ময়দান পর্যন্ত সুড়ঙ্গ জলে ডুবে গিয়েছিল। তার আগে রাঁচীর ভারত হেভি ইলেকট্রিক্যালসের সহযোগিতায় চেন্নাইয়ের ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি থেকে আসা চার কোচের দু’টি রেক নিয়ে মহড়া দৌড় চলছিল। জলে ডুবে যায় জোড়া রেকও। প্রায় ২৬ দিন ধরে পাম্প চালিয়ে জল বার করা হয়। রেক দু’টিকে পার্ক স্ট্রিটে সুড়ঙ্গের স্ল্যাব সরিয়ে ক্রেন দিয়ে বাইরে আনা হয়। তার বদলে এনজিইএফ-এর রেক নামিয়ে ফের মহড়া শুরু হয়। কয়েক মাস পরে চালু হয় মেট্রো। মেট্রোর চালকদের প্রশিক্ষণের জন্য পাঠানো হয়েছিল সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মস্কোয়। প্রায় চার মাসের প্রশিক্ষণ নিয়ে আসেন তাঁরা।

পরে উত্তরে দমদম থেকে নোয়াপাড়া এবং দক্ষিণে টালিগঞ্জ থেকে নিউ গড়িয়া পর্যন্ত সম্প্রসারণের পরে মেট্রোর যাত্রী বাড়তে থাকে পাল্লা দিয়ে। দিনে ৩০০টি ট্রেন চালাতে গিয়ে বাড়তি পথে বেশি যাত্রী নিয়ে ছোটার ভার নিতে হয় নন এসি রেককেই। তবু এসি রেকের তুলনায় জটিলতা কম হওয়ায় পুজো, বড়দিন, বইমেলা, ব্রিগেড সমাবেশের মতো অতিব্যস্ত দিনে নির্দ্বিধায় নন এসি রেকের উপরে ভরসা করেছেন আধিকারিকেরা। মাঝে খোলনলচে বদলে সারাতে হলেও প্রায় সব ক’টি নন এসি রেকই নির্ধারিত আয়ুর থেকে বেশি পরিষেবা দিয়েছে।

এ দিন এই সব কথা উঠে আসে কলকাতা মেট্রোর দীর্ঘ দিনের চিফ ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার অনুপকুমার কুণ্ডুর কথায়। ইতিহাস ছুঁয়ে গিয়েছেন প্রথম মেট্রোর দুই চালক সঞ্জয় শীল, তপন নাথ, সেই সময়ের ময়দান এবং এসপ্লানেড স্টেশনের দুই স্টেশন মাস্টার বিমলেন্দু রায় এবং এ কে শতপথীও। হাজির ছিলেন প্রথম মেট্রোর তিন যাত্রীও।

এ দিন রেকগুলি সাজিয়ে দিয়েছিলেন রেলপ্রেমী সংগঠনের সদস্যেরা। মহানায়ক উত্তমকুমার স্টেশন ছেড়ে নোয়াপাড়া ইয়ার্ড পর্যন্ত শেষ দৌড়কে সবুজ পতাকা দেখান মেট্রো রেলের জেনারেল ম্যানেজার মনোজ জোশী-সহ অন্য আধিকারিকেরা। রেলপ্রেমী, সংবাদমাধ্যমের কর্মী, যাত্রীদের ছবি তোলার আগ্রহ মনে করিয়ে দিচ্ছিল প্রথম দৌড়ের স্মৃতি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Metro Rail
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE