Advertisement
E-Paper

রোগী নেই ৩ দিন, জানেই না মেডিক্যাল

সরকারি হাসপাতালের ওয়ার্ডে রোগী ও চিকিৎসা কর্মীদের বাইরেও রোজ বহু মানুষের যাতায়াত। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের নিরাপত্তার স্বার্থে এর আগে বহুবার উঠেছে নির্দিষ্ট কোনও পোশাক দেওয়ার কথা।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ অগস্ট ২০১৭ ০১:২৯
ছেলের ছবি নিয়ে শাহজামন মোল্লা। নিজস্ব চিত্র

ছেলের ছবি নিয়ে শাহজামন মোল্লা। নিজস্ব চিত্র

হাসপাতালের বেড থেকে রোগী উধাও গত তিন দিন। অথচ কর্তৃপক্ষের দাবি, তাঁরা কিছুই জানেন না। হাসপাতালকে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে দেখে শেষে রোগীর বাড়ির লোকেরাই থানায় অভিযোগ জানান। এখনও পর্যন্ত ওই রোগীর খোঁজ মেলেনি। তবে তড়িঘড়ি হাসপাতালের তরফে রোগীদের পোশাক দেওয়া শুরু হয়েছে।

সরকারি হাসপাতালের ওয়ার্ডে রোগী ও চিকিৎসা কর্মীদের বাইরেও রোজ বহু মানুষের যাতায়াত। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের নিরাপত্তার স্বার্থে এর আগে বহুবার উঠেছে নির্দিষ্ট কোনও পোশাক দেওয়ার কথা। কিন্তু বারবার নানা অসুবিধে দেখিয়ে সে প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্তারা। সরকারি হাসপাতাল থেকে পরপর শিশু চুরি হওয়ার পরেও এমনই অজুহাত মিলেছিল। রোগীদের নিরাপত্তায় ‘কড়া’ ব্যবস্থা করা হয়েছে বলেই দায় সেরেছিলেন স্বাস্থ্য কর্তারা। কিন্তু সেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা যে যথেষ্ট নয়, তা ফের প্রমাণিত হল কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের মানসিক রোগ বিভাগ থেকে এক রোগী উধাও হওয়ার ঘটনায়।

বৃহস্পতিবার মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা শাহজামন মোল্লা জানিয়েছেন, গত ১১ তারিখ তাঁর ছেলে রফসান মোল্লাকে মানসিক রোগ বিভাগে ভর্তি করা হয়। বছর উনিশের ওই যুবকের চিকিৎসা শুরু করেন মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকেরা। ছেলের সঙ্গে তিনিও হাসপাতালে থাকতেন।
হঠাৎই মঙ্গলবার বিকেল তিনটে নাগাদ তিনি খেয়াল করেন, নিজের শয্যায় নেই রফসান।

পরিবারের অভিযোগ, নিখোঁজ রোগীকে খুঁজতে কোনও সহযোগিতাই করছেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শাহজামনের বক্তব্য, দ্রুত বিভাগের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা নিরাপত্তাকর্মীদের বিষয়টি জানিয়েছিলেন তিনি।
কিন্তু তাঁরা দাবি করেন, কোনও রোগীকে বাইরে যেতে দেখেননি। দিশেহারা বাবাকে পরামর্শ দেন, হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়িতে কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে। প্রৌঢ় ছুটে গিয়েছিলেন পুলিশ ফাঁড়িতে। বিষয়টি শুনে সিসিটিভি ফুটেজ দেখায় পুলিশ। ফুটেজে দেখাও যায় রফসানকে। তিনি পুলিশকর্মীদের জানান, টি-শার্ট ও প্যান্ট পরা যে যুবক বিভাগ থেকে বেরিয়ে হাসপাতালের এক নম্বর গেট দিয়ে বেরিয়ে গেলেন, তিনিই তাঁর ছেলে। কিন্তু লাভ হয়নি তাতেও। এ দিন শাহজামান জানান, ‘‘সিসিটিভি ফুটেজে ছেলেকে দেখিয়ে দেওয়ার পরে পুলিশকর্মীরা বলেছিলেন, গেটের বাইরে সিসিটিভি নেই। তাই ছেলে কোথায় গিয়েছে, বলা যাবে না। উল্টে আমাকেই আশপাশের এলাকা খুঁজে দেখতে বলেছিলেন তাঁরা।’’

আরও পড়ুন:‘জমি আপনার, কিন্তু বাড়ি করব আমরা’

মুর্শিদাবাদবাসী ওই প্রৌঢ় শহরের পথঘাট বিশেষ চেনেন না। তবু ছেলের খোঁজে ছুটে বেড়ান এ দিক- সে দিক। ঘণ্টা খানেক পরে আকুল বাবা ফের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হন। অভিযোগ, সব শুনেও কোনও পদক্ষেপ করেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তিনি বলেন, ‘‘বারবার অভিযোগ নিতে অনুরোধ করায় বিভাগের এক নার্স বলেন, নিজের ছেলের দিকে নজর রাখতে না পারলে তার দায়িত্ব কেউ নেবে না।’’

এ দিন রফসানের দাদা হুমায়ুন কবীর জানান, দিনভর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে পুলিশে অভিযোগ দায়ের করার জন্য অনুরোধ করে ফল হয়নি। শুধু আশ্বাস এসেছে, হারিয়ে যাওয়া মানসিক রোগী নিজেই ফিরে আসবেন। এর পরে বুধবার বিকেলে বৌবাজার থানায় অভিযোগ দায়ের করে রফসানের পরিবার।

এ সবের মধ্যেই ওই বিভাগের অন্যান্য রোগীর পরিজনেদের থেকে খবর মেলে, এ দিন সকাল থেকে বিভাগের রোগীদের নির্দিষ্ট পোশাক দেওয়া শুরু হয়েছে। সব মিলিয়ে এই ঘটনায় ফের প্রশ্ন উঠছে সরকারি হাসপাতালের দায়বদ্ধতা নিয়ে।

কয়েক মাস আগে সরকারি হাসপাতাল থেকে শিশু চুরির ঘটনার পরে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিলেন, প্রতিটি বিভাগে কড়া নজরদারি রয়েছে। সর্বক্ষণ বিভাগের বাইরে দু’জন প্রশিক্ষিত নিরাপত্তাকর্মী থাকছেন। ভিজিটিং কার্ড ছাড়া কেউ বিভাগে ঢুকতে কিংবা বেরোতে পারেন না।

কিন্তু বাস্তবটা যে তা নয়, ফের তার প্রমাণ মিলল। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, ভিজিটিং আওয়ার্সের আগে বিভাগ থেকে এক জন মানসিক ভারসাম্যহীন রোগী সকলের চোখের সামনে দিয়ে বেরিয়ে গেলেন, কর্তব্যরত নিরাপত্তারক্ষীদের কেন তা চোখে পড়ল না? রোগীর পরিবার নিখোঁজের বিষয়টি বারবার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানোর পরেও কেন পুলিশে যোগাযোগ করলেন না কর্তৃপক্ষ?

হাসপাতালের সুপার শিখা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাফাই, ‘‘কোনও অভিযোগ পাইনি। লিখিত অভিযোগ পেলে নিশ্চই খতিয়ে দেখা হবে বিষয়টি।’’

তিন দিন ধরে রোগী উধাও, অথচ তাঁকে জানানোই হয়নি বিভাগ থেকে? তা হলে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মীদের বিরুদ্ধেই বা তিনি কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন?

শিখাদেবীর উত্তর, ‘‘কোনও রোগী নিখোঁজ হলে সেই বিভাগের তরফে কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই জানানো উচিত। এ ক্ষেত্রে কেন জানানো হল না, খতিয়ে দেখব। কেউ দোষী হলে অবশ্যই শাস্তি দেওয়া হবে।’’

Bizzare Medical Missing
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy