Advertisement
E-Paper

বেঞ্চ থেকে শয্যা, চিকিৎসা তিমিরেই

এক হাসপাতালের আউটডোরের অদূরের বেঞ্চ থেকে অন্য এক হাসপাতালের শয্যা। আপাত ভাবে প্রতাপ বিশ্বাসের জীবনে বদল হয়েছে এটুকুই। অভিযোগ, এর বাইরে প্রায় পঙ্গু প্রতাপ চিকিৎসার ছিটেফোঁটাও পাচ্ছেন না।

নীলোৎপল বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৮ ০২:৩৮
শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালের শয্যায় প্রতাপ। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালের শয্যায় প্রতাপ। বৃহস্পতিবার। নিজস্ব চিত্র

এক হাসপাতালের আউটডোরের অদূরের বেঞ্চ থেকে অন্য এক হাসপাতালের শয্যা। আপাত ভাবে প্রতাপ বিশ্বাসের জীবনে বদল হয়েছে এটুকুই। অভিযোগ, এর বাইরে প্রায় পঙ্গু প্রতাপ চিকিৎসার ছিটেফোঁটাও পাচ্ছেন না। অন্য দিকে, ছেলের চিকিৎসার জন্য টাকার জোগাড় করতে যাওয়া বাবা এখনও জানতে পারেননি তাঁর ছেলের এই ঠাঁই-বদল। বাবার সঙ্গে কোনও রকম যোগাযোগও করতে পারছেন না প্রতাপ। হাসপাতালে যাঁকেই সামনে পাচ্ছেন, তাঁর কাছেই এই যুবকের আর্তি, ‘‘যে ভাবেই হোক আমার বাড়িতে একটা খবর দেবেন?’’

হাসপাতাল সূত্রের খবর, প্রতাপের দু’টো পা-ই অসাড় হয়ে গিয়েছে। আগে এক বার অস্ত্রোপচার হয়েছে। এখন টানা ফিজিওথেরাপি প্রয়োজন। ২০১৭-র অক্টোবর থেকে ২০১৮-র জুন। চিকিৎসার সুযোগ পেতে প্রতি সপ্তাহে ডায়মন্ড হারবারের রামকান্ত বিশ্বাসকে এত বার বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস-এ (বিআইএন) ছুটতে হয়েছে যে, ছেলে প্রতাপকে হাসপাতালের আউটডোরের অদূরে একটি বেঞ্চে বসিয়ে রেখেই তিনি গ্রামে ফিরে গিয়েছেন। হাসপাতালই ঘরবাড়ি হয়ে উঠেছিল বছর ছাব্বিশের ওই যুবকের। গত রবিবার বিষয়টি সামনে আসায় তড়িঘড়ি ‘তৎপর’ হয়ে ওঠেন বিআইএন কর্তৃপক্ষ। সেই তৎপরতা এমনই যে হাসপাতালেরই এক কর্মী মারফত প্রতাপকে ভর্তি করে দেওয়া হয় শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে। যদিও তাতে প্রতাপের সমস্যা মেটেনি। বরং কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে। এই রোগীকে নিয়ে তাঁরা কী করবেন, তা-ই বুঝতে পারছেন না শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, প্রতাপের যে চিকিৎসা প্রয়োজন, তা ওখানে হয় না। রোগীকে ‘রিলিজ’ করে দিতে চান তাঁরা। কিন্তু, প্রতাপ যাবেন কোথায়? তাঁকে যে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে তা জানানো হয়নি প্রতাপের বাড়িতে। প্রতাপকে যিনি ভর্তি করিয়েছেন তাঁর সঙ্গেও যোগাযোগের উপায় নেই। কারণ, তিনি নিজেকে বিআইএন হাসপাতালের কর্মী হিসেবে দাবি করেছিলেন। ভর্তির টিকিটে তাঁর দেওয়া নম্বর আদতে বিআইএন হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টারের ঘরের ফোন নম্বর।

শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালের জে়ডি ব্লকের ৪৪ নম্বর শয্যায় ভর্তি রয়েছেন প্রতাপ। এ দিন তাঁর দাবি, রবিবার সকালে বিআইএন-এর দুই চিকিৎসক তাঁর কাছে জানতে চান, কী হয়েছে, কোথা থেকে এসেছেন, কতদিন ধরে আছেন হাসপাতালের বাইরে ইত্যাদি। বেলা ১০টা নাগাদ হাসপাতালেরই একটি অ্যাম্বুল্যান্সে শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে। প্রতাপ বলেন, ‘‘ওঁদের বললাম, বাবা কিছুই জানে না। খুঁজবে। ওঁরা বললেন, বাবাকে পরে জানানো হবে। আগে ভর্তি করাতে হবে। তার পর থেকে আমাকে এখানেই ফেলে রেখেছে।’’ প্রতাপের দাবি, ‘‘চিকিৎসক রোজ দেখে বলছেন, এখানে রেখে কিছু হবে না। আমার যা হয়েছে, এখানে তার চিকিৎসা হয় না।’’

৬ জুন আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতাপের সংবাদ।

তিনি জানান, গ্রামে ফেরার আগে তাঁকে নিজের মোবাইল দিয়ে গিয়েছিলেন বাবা রামকান্ত। কিন্তু বাবার কাছে কোনও ফোন না থাকায় যোগাযোগ করতে পারছেন না। বললেন, ‘‘প্রতিবেশীদের কয়েক জনকে ফোন করলাম। তারা এখন ফোন পেলেই বিরক্ত হয়। চিকিৎসার টাকা চেয়ে আগে বহুবার ফোন করেছি তো, তাই কেউ কথা বলতে চায় না।’’

শম্ভুনাথ পণ্ডিত হাসপাতালে প্রতাপ যে চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে ভর্তি তিনি বলেন, ‘‘ওই রোগীর শরীরের নীচের অংশ অসাড় হয়ে গিয়েছে। ফিজিওথেরাপি এবং নার্ভের চিকিৎসা প্রয়োজন। বিআইএন-এই দেখাতে হবে। এখানে কেন পাঠিয়েছে বুঝলাম না।’’

বিআইএন-এর দায়িত্বপ্রাপ্ত এসএসকেএম হাসপাতালের অধিকর্তা অজয়কুমার রায়ের যুক্তি, ‘‘মানবিক কারণেই এটা করা হয়েছে। চিকিৎসা না হোক, অন্তত ভর্তি থাকুক। তাতে কিছুটা সুস্থ হবে।’’

বিআইএন এবং শম্ভুনাথ দুই হাসপাতালের চিকিৎসকেরাই অবশ্য অধিকর্তার এই বক্তব্যে হতবাক। তাঁদের প্রশ্ন, যে ধরনের চিকিৎসা প্রয়োজন তার কোনও রকম ব্যবস্থা না করে স্রেফ বিতর্ক এড়াতে রোগীকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় এ ভাবে স্থানান্তরিত করে সরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার কোন দিকটা তুলে ধরতে চাইছেন তিনি? অজয়বাবুর কাছে এর কোনও উত্তর পাওয়া যায়নি।

Treatment Health Bangur Institute of Neurosciences Sambhunath Pandit Hospital Pratap Biswas প্রতাপ বিশ্বাস
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy