গোটা রাজ্যে চোখের চিকিৎসার প্রধানতম এবং একমাত্র রেফারাল কেন্দ্র ‘রিজিয়োনাল ইনস্টিটিউট অব অপথ্যালমোলজি’-তে (আরআইও) প্রায় দেড় মাসেরও বেশি সময় ধরে শুধুমাত্র জরুরি অস্ত্রোপচার এবং কিছু কর্নিয়া প্রতিস্থাপন ছাড়া কার্যত আর কোনও অস্ত্রোপচারই হয়নি! কারণ, কোনও বিকল্প ব্যবস্থা না রেখেই সেখানকার প্রধান অপারেশন থিয়েটার (ও টি) দীর্ঘ সময় বন্ধ রেখে সংস্কারের কাজ হচ্ছিল বলে অভিযোগ।
গত জুন মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে অগস্ট মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত এই দুরবস্থা চলেছে। মাত্র সপ্তাহখানেক হল প্রধান অপারেশন থিয়েটার চালু হয়েছে এবং জমে থাকা পাহাড়প্রমাণ অস্ত্রোপচার সামলাতে এখন কূলকিনারা পাচ্ছেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে ছানি, গ্লকোমা, চোখের টিউমার, রেটিনা, চোখের তারার অস্ত্রোপচার প্রভৃতি রয়েছে।
অভিযোগ, দেড় মাসেরও বেশি সময় যে প্রধান অপারেশন থিয়েটার বন্ধ থাকবে, সেই খবর দূর-দূরান্তের রোগীদের কাছে পৌঁছয়নি। ফলে হাজার হাজার রোগী প্রতিদিন নির্ধারিত অস্ত্রোপচারের জন্য আরআইও-তে এসে দিশাহারা হয়েছেন। অনেককে আরআইও থেকে এসএসকেএম বা নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজে রেফার করে দেওয়া হয়েছে। সেই হাসপাতালগুলি এই অতিরিক্ত রোগীর চাপে হিমশিম খেয়েছে। রোগীরা অনেক ক্ষেত্রে অন্য হাসপাতালে গিয়েও শয্যা এবং অস্ত্রোপচারের দিন পাননি। ফলে জরুরি অস্ত্রোপচার পিছিয়েছে। অনেকে বেসরকারি জায়গায় অস্ত্রোপচার করাতে বাধ্য হয়েছেন বলেও অভিযোগ।
আরআইও-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে প্রধান ও টি-তে মাসে ১৮০০-১৯০০টি এবং এপ্রিল মাসে ১২০৯টি অস্ত্রোপচার হয়েছে। সেখানে প্রধান ও টি বন্ধ হওয়ার পরে, জুন মাসে মাত্র ৫৬৯টি এবং জুলাই মাসে ১২টি অস্ত্রোপচার হয়েছে।
ও টি সংস্কারের জন্য ২০২৩ সালে ৫৮ লক্ষ টাকা অনুমোদন করেছিল স্বাস্থ্য দফতর। আরআইও-র প্রাক্তন অধিকর্তা অসীমকুমার ঘোষের দাবি, বিকল্প ও টি-র ব্যবস্থা করা যাচ্ছিল না বলে তাঁর সময়ে চারতলায় প্রধান ও টি-র সংস্কার তিনি শুরু করেননি। কারণ, চারতলায় আরও একটি ও টি প্রায় ১০ বছর ধরে বন্ধ। তা হলে বিকল্প ব্যবস্থা না করে নতুন অধিকর্তা কেন দেড় মাস ধরে অস্ত্রোপচার বন্ধ রেখে ও টি সংস্কার করালেন? সেই কাজে এত সময়ই বা লাগল কেন?
বর্তমান অধিকর্তা সুব্রত দত্তের কথায়, ‘‘এত পুরনো হাসপাতাল ভবন, এত দিন পরে সংস্কার হচ্ছে, ফলে কাজ অনেক বেড়ে গিয়েছিল। সময় বেশি লেগেছে। নার্সদেরও অনেক রকম দাবিদাওয়া ছিল। সেগুলি সব মানতে গিয়ে সময় বেশি লেগেছে। তবে ও টি চালু হতেই আমরা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সংখ্যায় বেশি অস্ত্রোপচার করে অবস্থা সামলানোর চেষ্টা করছি।’’
আরআইও-র চিকিৎসকদের একাংশের যদিও অভিযোগ, অবস্থা মোটেই সামলানো যাচ্ছে না। প্রতিদিন তাঁদের রোগীদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে। তাঁরা আরও জানান, হাসপাতালে দরিদ্র রোগীদের সুবিধার্থে তিনটি অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং দামি ইনজেকশন ‘লোকাল পারচেজ়’ করে দেওয়া হত। এর মধ্যে একটির দাম ৪০ হাজার টাকা। সেটি গত বছর দেওয়া হয়েছিল ৪৫ জনকে। দ্বিতীয় ইনজেকশনের দাম ৩০ হাজার। এটি গত বছর ১২০ জনকে দেওয়া হয়। তৃতীয় ইনজেকশনের দাম ৫২ হাজার টাকা। এটি গত বছর ১০০ জনকে দেওয়া হয়েছিল। রেটিনা রিসেপটারে অবাঞ্ছিত শিরা যাতে তৈরি না হয় এবং রক্তক্ষরণ যাতে না হয়, মূলত সেই জন্য ওই ইনজেকশনগুলি দেওয়া হয়। কিন্তু চলতি বছর থেকে সেই লোকাল পারচেজ় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ। ফলে, যাঁরা ইনজেকশনগুলি নিখরচায় পেতেন, সেই দরিদ্র রোগীরা আতান্তরে পড়েছেন। এ ব্যাপারে অধিকর্তা সুব্রত দত্ত অবশ্য দাবি করেছেন, ‘‘সবই দেওয়া চলছে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)