Advertisement
E-Paper

ছাড়া পেয়েই মৃত্যু, অভিযোগ গাফিলতির

নার্সিংহোম থেকে ছাড়া পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এক রোগীর মৃত্যুতে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ ঘিরে উত্তেজনা ছড়াল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ নভেম্বর ২০১৮ ০১:৫১
বিক্ষোভ: নার্সিংহোমে দীপক রজকের (ইনসেটে) পরিজনেরা। শনিবার, হাজরায়। ছবি: সুদীপ ঘোষ

বিক্ষোভ: নার্সিংহোমে দীপক রজকের (ইনসেটে) পরিজনেরা। শনিবার, হাজরায়। ছবি: সুদীপ ঘোষ

নার্সিংহোম থেকে ছাড়া পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এক রোগীর মৃত্যুতে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ ঘিরে উত্তেজনা ছড়াল। শনিবার ঘটনাটি ঘটেছে হাজরার একটি নার্সিংহোমে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে টালিগঞ্জ ও ভবানীপুর থানা থেকে বিশাল পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে যায়। এই ঘটনায় রোগীর পরিবারের তরফে এক চিকিৎসক এবং নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

পুলিশ সূত্রের খবর, হাজরা রোডের বাসিন্দা, কলকাতা পুরসভার ঠিকাকর্মী দীপক রজক (৪৮) গত ৮ নভেম্বর প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোডে পুরসভার বরো অফিসে পানীয় জল ভেবে একটি বোতল থেকে মশা মারার তেল মেশানো ওষুধ খেয়ে ফেলেন। পুলিশ জানিয়েছে, সঙ্গে সঙ্গে বমি করে ফেলেন দীপক। তাঁর পরিজনেরা জানান, এর পরে অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে প্রথমে এম আর বাঙুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই রাতেই তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় হাজরা মোড়ের কাছে ওই নার্সিংহোমে। যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার পরে এ দিন সকালে তাঁকে নার্সিংহোম থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু বাড়িতে গিয়ে তিনি ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন বলে পরিবার সূত্রে খবর।

পরিবারের অভিযোগ, এ দিনই ঘণ্টাখানেক পরে ফের দীপকবাবুকে একই নার্সিংহোমে ভর্তি করাতে গেলে নার্সিংহোমের তরফে অগ্রিম পনেরো হাজার টাকা দাবি করা হয়। দীপকবাবুর ভাগ্নে রাহুল রজকের অভিযোগ, ‘‘মুমূর্ষু মামা তখন নার্সিংহোমের বাইরে ট্যাক্সিতে পড়ে রয়েছেন। নার্সিংহোমের রিসেপশনে কর্মরতা এক মহিলা আমাদের কাছে অগ্রিম পনেরো হাজার টাকা দাবি করেন।’’ তিনি জানান, ওই কর্মীকে বারবার বোঝানোর চেষ্টা হয়, রোগীকে কিছু ক্ষণ আগেই ওই নার্সিংহোম থেকে ছাড়া হয়েছে। বাড়িতে গিয়ে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়ায় তাঁকে ফেরত আনা হয়েছে। তাঁর অভিযোগ, প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে কর্মীদের সঙ্গে তুমুল বচসার পরে যখন তাঁর মামাকে নার্সিংহোমে ঢোকানোর ব্যবস্থা হল, তখন সব শেষ।

ওই নার্সিংহোমের কাছেই দীপকবাবুর বা়ড়ি। নার্সিংহোম সূত্রের খবর, তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়েই পরিবারের সদস্যেরা নার্সিংহোমের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। মৃতের দাদা বাবলু রজকের অভিযোগ, ‘‘টানা দশ দিন চিকিৎসার পরে ভাইকে নার্সিংহোম থেকে সুস্থ বলে ছে়ড়ে দেওয়া হল। অথচ এক ঘণ্টার মধ্যেই ফের ভাই অসুস্থ হয়ে পড়ল। এখান থেকেই পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে, চিকিৎসার যথেষ্ট গাফিলতি রয়েছে। সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নিক, এটাই চাই।’’

পরিবার জানায়, গত ৮ নভেম্বর থেকে দীপকবাবু ওই নার্সিংহোমে চিকিৎসক তপনকুমার রায়ের অধীনে ভর্তি ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ নিয়ে তপনবাবু বলেন, ‘‘পাকস্থলীতে বিষক্রিয়া হওয়ায় ওই রোগী আমার অধীনে ভর্তি হয়েছিলেন। সব পরীক্ষা করে ওঁকে শনিবার সকালে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। এর পরে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হওয়ায় ফের অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। হৃৎযন্ত্র বিকল হয়ে ওঁর মৃত্যু হয়েছে বলেই প্রাথমিক অনুমান। হৃৎযন্ত্র বিকল যে কোনও সময়েই হতে পারে।’’ মৃতের এক পরিজনের পাল্টা অভিযোগ, যাবতীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তপনবাবু ও হার্টের এক চিকিৎসক শুক্রবার রোগীকে ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন। আগে ওঁর হৃৎযন্ত্রের রোগই ছিল না। হঠাৎ নার্সিংহোম থেকে ছে়ড়ে দেওয়ার এক ঘণ্টার মধ্যেই তিনি কী ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়লেন, প্রশ্ন পরিজনেদের।

দ্বিতীয় বার দীপকবাবুকে ভর্তি করানোর সময়ে নার্সিংহোমের তরফে অগ্রিম পনেরো হাজার টাকা দাবির প্রসঙ্গে বারবার ফোন করা হলেও নার্সিংহোম কর্তৃপক্ষ কোনও কথা বলতে চাননি। তপনবাবু অবশ্য বলেন, ‘‘চিকিৎসার আগেই টাকা চাওয়া ঠিক হয়নি। এ রকম ঘটনা সত্যিই দুঃখের।’’

Death Hospital Negligence
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy