Advertisement
E-Paper

মিলছে না ওষুধ, সঙ্কটে বহু রোগী

জিএসটি-র প্রভাব নয়, শুধুমাত্র সরকার টাকা দিচ্ছে না বলে রাজ্যে চোখের একমাত্র সরকারি ‘রেফারাল’ হাসপাতাল ‘রিজিওন্যাল ইনস্টিটিউট অব অপথ্যালমোলজি’ (আরআইও)-তে গত প্রায় দেড় মাস ধরে একটি বিশেষ ইঞ্জেকশন কেনা হচ্ছে না। ডায়াবেটিস বা অন্য অনেক কারণে রেটিনা শুকিয়ে গেলে বা রেটিনার সঙ্গে মস্তিষ্কের সংযোগকারী ধমনী শুকিয়ে গেলে এই ইঞ্জেকশন দরকার হয়।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৭ ০২:৫৫
প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

বিশেষ একটি ইঞ্জেকশন বাজার থেকে উধাও! তাই অন্ধ হতে বসেছেন চোখের অসুখে ভোগা পাঁচশোরও বেশি অসহায় রোগী। আবার নির্দিষ্ট একটি ওষুধের অভাবে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় তামা জমে মৃত্যুর মুখে চলে যাচ্ছেন ‘উইলসন’ রোগে ভোগা বহু মানুষ।

জিএসটি-র প্রভাব নয়, শুধুমাত্র সরকার টাকা দিচ্ছে না বলে রাজ্যে চোখের একমাত্র সরকারি ‘রেফারাল’ হাসপাতাল ‘রিজিওন্যাল ইনস্টিটিউট অব অপথ্যালমোলজি’ (আরআইও)-তে গত প্রায় দেড় মাস ধরে একটি বিশেষ ইঞ্জেকশন কেনা হচ্ছে না। ডায়াবেটিস বা অন্য অনেক কারণে রেটিনা শুকিয়ে গেলে বা রেটিনার সঙ্গে মস্তিষ্কের সংযোগকারী ধমনী শুকিয়ে গেলে এই ইঞ্জেকশন দরকার হয়। এক জন রোগীর ন্যূনতম তিনটি ইঞ্জেকশন লাগে। অনেককে আবার কয়েক বছর ধরে এটি নিতে হয়। তা না-হলে রোগী দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। কিন্তু আরআইও-র অনুরোধ সত্ত্বেও ইঞ্জেকশন কেনার টাকা আসছে না।

অসুখটা আলাদা, ওষুধ না-পাওয়ার কারণটাও এক নয়। তবু ওষুধের আকালে ক্রমশ মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন ‘উইলসন’ রোগের রোগীরা। এঁরা যে শুধু সরকারি হাসপাতালের রোগী, তা নন। বেসরকারি জায়গায় চিকিৎসা করান, এমন রোগীও রয়েছেন। এই রোগে রোগীর পাকস্থলী, যকৃৎ, মস্তিষ্ক-সহ বিভিন্ন অঙ্গে তামা জমতে থাকে। কারণ, শরীর থেকে তামা বার করে দেওয়ার প্রোটিনটি তাঁদের দেহে তৈরি হয় না। ভারতের বাজারে থাকা উইলসন রোগের একমাত্র ওষুধটি গত প্রায় দেড় বছর হল গায়েব হয়ে গিয়েছে। ফার্মাসিউটিক্যাল ব্যবসার জগতের খবর হল, ওষুধটিকে সরকার মূল্য-নিয়ন্ত্রণের মধ্যে নিয়ে আসায় লাভ কমে গিয়েছিল। তাই উৎপাদক সংস্থা ভারতে ওষুধ উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে।

২০১৭-’১৮ সালে আরআইও-তে ওষুধ কেনার জন্য একটি নির্দিষ্ট খাতে এক কোটি ৫০ লক্ষ টাকা পাঠিয়েছিল স্বাস্থ্য দফতর। এর মধ্যে এক কোটি ৪৮ লক্ষ টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। এ দিকে, ওই ইঞ্জেকশন আরও ৫০০টি কিনতে হবে। তার জন্য এক কোটি টাকা দরকার। ইঞ্জেকশনটির এক-একটির দাম ১৯ হাজার ২০০ টাকা। সেই টাকা স্বাস্থ্যভবন দিচ্ছে না। কারণও জানাচ্ছে না। গড়িয়ার বাসিন্দা, ৬৩ বছরের শিবদাস সাহা, বামনগাছির রীনা মণ্ডল, বেলেঘাটার সমীর আচার্যের মতো অনেক মানুষ ইঞ্জেকশনের জন্য হাসপাতালে এসে ফিরে যাচ্ছেন বারবার। দৃষ্টি নিভে আসছে, অথচ এত দামি ইঞ্জেকশন কিনে দেওয়ার সামর্থ নেই তাঁদের।

একই ভাবে উইলসন রোগের ১১০ জন রোগী নথিভুক্ত বাঙুর ইনস্টিটিউট অব নিউরোলজিতে। প্রতি মাসে সেখানে নতুন রোগী মেলে তিন-চার জন করে। ৫০ জন রোগী নথিভুক্ত এসএসকেএমে। এর বাইরে বেসরকারি ক্ষেত্রেও বহু রোগী রয়েছেন। বয়স দুই থেকে কুড়ির মধ্যে। এসএসকেএমের হেপাটোলজিস্ট অভিজিৎ চৌধুরীর কথায়, ‘‘সরকারের অবিলম্বে কিছু করা উচিত।
রোগীরা ওষুধ না পেয়ে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন, এটা ডাক্তার হয়ে সহ্য করতে পারছি না।’’ একই কথা বলেছেন বিআইএনের নিউরোলজি বিভাগের চিকিৎসক শ্যামল দাস। ‘‘অসহায় লাগছে। গোটা দেশে ওষুধটি নেই। যে রোগীরা ভাল হয়ে উঠেছিলেন, তাঁরা এখন বিছানা থেকে উঠতে পারছেন না, চলতে পারছেন না। হয়তো কয়েক দিন পরে মরে যাবেন।’’

GST Medicine Injection ইঞ্জেকশন
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy