Advertisement
E-Paper

রোগী ভর্তির ‘নির্দেশ’, বিপাকে পাভলভ

নতুন মানসিক স্বাস্থ্য আইনে হাসপাতালে রোগী ভর্তির জন্য রিভিউ বোর্ড গঠনের কথা বলা হয়েছিল।

ঋজু বসু

শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০২০ ০২:৪১
পাভলভ মানসিক হাসপাতাল

পাভলভ মানসিক হাসপাতাল

পার্ক সার্কাস রেললাইনের ধারে ঘুরে বেড়ানো লোকটিকে খুঁজে পেয়েছিল রেলপুলিশের টহলদার বাহিনী। ওই ব্যক্তি মানসিক ভাবে সুস্থ নন, এমন নিদান দিয়ে তাঁর নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য কোর্টে আর্জি জানায় রেলপুলিশ।

এর পরেই ওই ব্যক্তিকে পাভলভ মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করানোর জন্য সেখানকার সুপারকে নির্দেশ দেন বিচারক। এমনকি, কোর্টের নতুন নির্দেশ না-আসা পর্যন্ত অনির্দিষ্ট কাল ওই ব্যক্তিকে সেখানেই রাখতে হবে বলেও জানিয়েছেন বিচারক। দু’মাস আগে শিয়ালদহ কোর্টের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের (জিআরপি ফাইল) সেই নির্দেশের পর থেকে ওই ব্যক্তিটির ঠাঁই হয়েছে পাভলভে। কোর্টের নির্দেশমতো ১৫ দিন অন্তর তাঁর বিষয়ে রিপোর্টও দিচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

কিন্তু পাভলভের মেডিক্যাল সুপার গণেশ প্রসাদ বলছেন, ‘‘কোর্টের নির্দেশমতো যাঁকে ভর্তি করেছি, তাঁর কিছু বৌদ্ধিক খামতি রয়েছে। কিন্তু তিনি মনোরোগী নন। এই ধরনের সমস্যায় সাধারণত হাসপাতালে রাখা হয় না।’’ বিষয়টি স্বাস্থ্য দফতরের উচ্চস্তরেও জানিয়েছেন বলে গণেশের দাবি।

২০১৭ সালের মানসিক স্বাস্থ্য আইন অনুযায়ী, কোনও মনোরোগী বিনা চিকিৎসায় কোথাও রয়েছেন বা তাঁর বিপদের সম্ভাবনা আছে বলে মনে হলে পুলিশ ম্যাজিস্ট্রেটের সাহায্য নিতে পারে। ম্যাজিস্ট্রেটও সেই ব্যক্তিকে দেখে কোনও মানসিক হাসপাতালকে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে বলতে পারেন। কিন্তু মানসিক স্বাস্থ্য আইনে এ-ও বলা রয়েছে যে, কেউ মনোরোগী কি না, তা বুঝে তাঁকে ভর্তি নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন মানসিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ওই মানসিক রোগী কত দিন বা অনির্দিষ্ট কাল হাসপাতালে থাকবেন কি না, তা-ও ঠিক করার এক্তিয়ার কারও নেই। পাভলভের সুপার বলছেন, “বিভিন্ন কোর্টের মাধ্যমে কোনও রোগী এলে মানসিক স্বাস্থ্য আইনমাফিক সাধারণত ১০ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়। কোনও রোগীকে অনন্তকালের জন্য ভর্তি রাখলে মানসিক হাসপাতাল আর আশ্রমে তফাত থাকে না।”

নতুন মানসিক স্বাস্থ্য আইনে হাসপাতালে রোগী ভর্তির জন্য রিভিউ বোর্ড গঠনের কথা বলা হয়েছিল। তাতে মনোরোগ চিকিৎসক, প্রাক্তন বিচারপতি, সমাজকর্মী এবং আগে মানসিক সমস্যায় ভুক্তভোগী সদস্যদের থাকার কথা। এ রাজ্যে সেই বোর্ড গড়ার রূপরেখা তৈরি করে তা বিধানসভায় গৃহীতও হয়। বোর্ড কার্যকর করার চূড়ান্ত পর্যায়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যকর্তাদের কাছে তা পাঠানো হয়েছে বলে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর।

মানসিক রোগীর অধিকার রক্ষাকর্মী রত্নাবলী রায়ের মতে, “মানসিক হাসপাতালে কারও ভর্তির বিষয়ে পুলিশ, কোর্টের সুপারিশ স্বাগত। কিন্তু তারাই এই সিদ্ধান্তের সর্বেসর্বা হলে মানসিক রোগ নিয়ে এক ধরনের সংস্কার বা ছুঁতমার্গ আরও চেপে বসে।” তাঁর প্রশ্ন, “কারও ডায়াবিটিস হলে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হবেন কি না, তা কে ঠিক করে?”

করোনা-পরিস্থিতিতে লকডাউনের শুরুতেই হাসপাতালগুলিতে গাদাগাদি ভিড় এড়াতে বলেছিল সুপ্রিম কোর্ট। ২৫০টি শয্যার পাভলভে এখন রোগীর সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি। লকডাউনের বিধি শিথিল হওয়ার সময়ে পুলিশ সপ্তাহে তিন-চার জনকেও আকছার ভর্তি করতে বলেছে। মানসিক স্বাস্থ্য বিশারদদের মতে, “কেউ নিজের নাম-পরিচয় বিষয়ে অসংলগ্ন কথা বললেই তাঁকে মানসিক রোগী বলে চালানোটা গোলমেলে। মনোরোগীদের মধ্যে বৌদ্ধিক খামতিসম্পন্ন কাউকে এনে ঢুকিয়ে দিলে সেটা তাঁর জন্য হিতে বিপরীতও হতে পারে।”

Pavlov Hospital Patient
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy