এ-ও এক বইমেলা! সেই সব বইয়ের, যারা বৃষ্টিতে ভিজেছিল!
পুজোর মুখে গত ২২ সেপ্টেম্বর রাতের অতিবৃষ্টিতে অন্যান্য বহু এলাকার মতো ভেসে গিয়েছিল কলেজ স্ট্রিট বইপাড়াও। ভিজে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল অজস্র বই। যার ফলে মাথায় হাত পড়েছিল বই ব্যবসায়ীদের। সেই সমস্ত ভিজে যাওয়া বই থেকে যেগুলি বাঁচানো গিয়েছে এবং মোটামুটি পড়ার মতো অবস্থায় আছে, সেগুলি বিপুল ছাড়ে বিক্রির জন্যই সোমবার বসেছিল এক দিনের এই অভিনব বইমেলা।
কিছু বই এতটাই ভিজে গিয়েছিল যে, শক্ত বাঁধাই থাকা সত্ত্বেও খানিকটা নরম হয়ে গিয়েছে। পাতাগুলি হয়ে গিয়েছে হলদে রঙের। কিছু বইয়ের পাতা আবার ভিজে গিয়ে অন্য পাতার সঙ্গে আটকে রয়েছে। সেই সব পাতা খুলতে গেলেই ছিঁড়ে যাচ্ছে। অনেক বই আবার প্রকাশকেরা রোদে শুকিয়ে কিছুটা ভাল অবস্থায় নিয়ে এসেছেন। তবু, সেই সব বই হাতে নিলে এখনও একটু স্যাঁতসেতে মনে হচ্ছে।
সেই রাতের অতিবৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া বইগুলি যতটা সম্ভব রোদে শুকিয়েছেন প্রকাশক ও বিক্রেতারা। এ দিন সেই সমস্ত বই নিয়েই কলেজ স্ট্রিট এলাকার বঙ্কিম চ্যাটার্জি স্ট্রিটে বসেছিল ভেজা বইয়ের মেলা। এক দিনের জন্য। ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ ছাড়ে পাওয়া গেল সেই সব বই। মেলার অন্যতম উদ্যোক্তা মারুফ হোসেন বললেন, ‘‘এই ধরনের বইমেলা আগে কখনও হয়নি। এই প্রজন্মের প্রচুর ছেলে-মেয়ে ভেজা বইয়ের এই মেলায় বই কিনতে এসেছিলেন। সমাজমাধ্যমে দেড় থেকে দু’মিনিটের রিলে ডুবে থাকা এই প্রজন্ম যে বই কিনতে এসেছে, তা দেখে খুব ভাল লাগল। আমাদের আরও উৎসাহিতও করল।’’ মারুফ জানান, সাধারণ মানুষের থেকে অর্থ সংগ্রহ (ক্রাউড ফান্ডিং) করে সে দিনের দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত প্রকাশকদের আর্থিক সাহায্যও করা হয়েছে।
টিনটিন থেকে শুরু করে শার্লক হোমস, ফেলুদা বা কাকাবাবু— সবই ছিল এ দিনের ভেজা বইমেলায়। তবে, টিনটিনের একটি বই খুলতে গিয়ে দেখা গেল, পাতাগুলি এমন ভাবে একটির সঙ্গে অন্যটি আটকে রয়েছে যে, খোলা যাচ্ছে না। বিক্রেতার আশ্বাস, ‘‘টিনটিনের বইটা বাড়িতে নিয়ে গিয়ে ছাদে আর একটু শুকোতে দিন। সব পাতা খুলে যাবে। পড়তে পারবেন। এত কম দামে টিনটিন আর পাবেন না।’’ সেই আশ্বাস শুনে কম দামে ভেজা টিনটিন কিনে নিয়ে গেলেন কয়েক জন পাঠক। কলকাতা বইমেলার মতো বই কিনে নিজস্বীও তুললেন অনেকে।
ভেজা বইয়ের মেলায় পরশুরামের ‘গড্ডলিকা প্রবাহ’ পাওয়া গেল অর্ধেক দামে। বইটির অবস্থা অতটা খারাপ নয়। মেলায় তাই ভেজা পরশুরাম হয়ে উঠল ‘হট কেক’। জীবনানন্দ দাশের ‘রূপসী বাংলা’ দেখে এক ক্রেতার সরস মন্তব্য, ‘‘এই বই তো ভিজে আরও রূপসী হয়ে উঠেছে।’’ পাশেই দেখা গেল, ভেজা নন্টে-ফন্টে সমগ্র কিনে দিতে বাবার কাছে বায়না ধরেছে এক খুদে।
ভেজা বই বিক্রির মাঝেই রাকেশ শর্মা, সুদেষ্ণা রায়েরা বলছিলেন,কী ভাবে ২২ সেপ্টেম্বর রাতের প্রবল বৃষ্টিতে দোকানের সমস্ত বই ভিজে গিয়েছিল তাঁদের। পরদিন সকালে সেই দোকানে এসে তাঁরা দেখেন, তাকের নীচে রাখা সমস্ত বই ভিজে গিয়েছে। কিছু বই জলে ভাসছে। রাকেশ জানান, সেই সমস্ত বই তাঁরা যত্ন করে রোদে শুকিয়েছেন।
প্রতি বছরই কলকাতা বইমেলায় বই বিক্রি করেন কলেজ স্ট্রিটের এক প্রকাশক কৌশিক দত্ত। তিনি বলেন, ‘‘কলকাতা বইমেলার মতো এই মেলাতেও নানা ধরনের বই বিক্রি করেছি। ক্ষতিগ্রস্ত বইগুলিকে যতটা সম্ভব রক্ষা করার চেষ্টা করেছি গত কয়েক দিন ধরে।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)