Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
Chhath Puja 2022

মধ্যরাতে ঘুম উড়ল বক্সের আওয়াজে, সঙ্গী দেদার বাজি

ভোরে সেই রাস্তা দিয়ে রবীন্দ্র সরোবরে ছটের পরিস্থিতি বুঝতে যাওয়ার সময়ে দেখা গেল, স্কুল খুলে যাওয়ায় অনেকেই স্কুলবাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে।

অবাধ: পুলিশের সামনেই দেদার বাজি ফাটাচ্ছেন ছটপুজোর পুণ্যার্থীরা। সোমবার, ইএম বাইপাস সংলগ্ন এলাকায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

অবাধ: পুলিশের সামনেই দেদার বাজি ফাটাচ্ছেন ছটপুজোর পুণ্যার্থীরা। সোমবার, ইএম বাইপাস সংলগ্ন এলাকায়। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২২ ০৬:২৭
Share: Save:

ছটপুজো উদ্‌যাপনের নামে বিধি ভাঙার পর্ব রবিবার রাতে যেখানে শেষ হয়েছিল, ঠিক সেখান থেকেই যেন শুরু হল সোমবার ভোরে! কোনও কোনও ক্ষেত্রে যা পেরিয়ে গেল আগের দিনের পরিস্থিতিকেও। দেদার শব্দবাজির দাপট যেমন ঘুম ভাঙাল, তেমনই কানে তালা ধরাল মাঝরাত থেকে সাউন্ড বক্স ও তাসা বাজিয়ে ঘাটের দিকে যাওয়া জনতার হুল্লোড়। অভিযোগ, পুলিশকে দেখা গেল সেই নীরব দর্শকের ভূমিকাতেই। যা দিনের শেষে প্রশ্ন তুলে দিল, যে পুলিশ দুই সরোবর বাঁচিয়ে প্রশংসা কুড়োল, সেই পুলিশই বাকি শহরকে বাগে আনতে এতটা দিশাহারা হল কেন?

এ দিন উৎসবের নামে সব চেয়ে বেশি আতঙ্কের চিত্র দেখা গিয়েছে কসবা কানেক্টরে। ভোরে সেই রাস্তা দিয়ে রবীন্দ্র সরোবরে ছটের পরিস্থিতি বুঝতে যাওয়ার সময়ে দেখা গেল, স্কুল খুলে যাওয়ায় অনেকেই স্কুলবাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে। সেখান দিয়েই যাচ্ছিল ছটের পুণ্যার্থী-বোঝাই একটি লরি। হঠাৎ সেই লরি থেকে ফুটপাতের দিকে উড়ে এল একটি আগুনের ফুলকি। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রবল শব্দে ফাটল বাজি! কোনওমতে দাঁড়িয়ে গেল সেখান দিয়ে যাওয়া কয়েকটি গাড়ি। কিন্তু যে লরি থেকে ওই বাজি ছোড়া হল, সেটি থামল না। সন্তানদের নিয়ে নিরাপদ দূরত্বে সরে দাঁড়ালেন আতঙ্কিত অভিভাবকেরা। পুলিশ কোথায়? চোখে পড়ল না কাউকেই।

একই রকম দৃশ্য নারকেলডাঙা মেন রোডে। ভোরের আলো তখনও ভাল ভাবে ফোটেনি। রাস্তায় গাড়ি আটকে দাঁড়ালেন এক জন। গাড়ি থামতেই দৌড়ে এসে রাস্তার মাঝখানে বাজির ‘শেল’ বসাল এক কমবয়সি। কাঁপা কাঁপা হাতে সলতেয় আগুন দিয়েই ছুট। শেল থেকে রকেটের গতিতে একের পর এক শব্দবাজি আকাশের দিকে উঠে ফাটতে লাগল। বাজির আওয়াজের সঙ্গে তখন পাল্লা দিচ্ছে ওই ছেলেদের উল্লাস। কাছেই দাঁড়ানো পুলিশকর্মীরা দেখেও কিছু বললেন না। এই বাজি ফাটানোর জেরে আটকে ছিল পুলিশের স্টিকার লাগানো একটি গাড়িও। কোনও ব্যবস্থা নেবেন না? এক পুলিশকর্মীর মন্তব্য, ‘‘বাচ্চা ছেলে! একটু আনন্দ করছে। ওদের আর কী বলব!’’ এমনই কিছু না বলার চিত্র সুভাষ সরোবর এলাকাতেও। সেখানে সরোবরে ঢুকতে না পারলেও সরোবরের পাঁচিলের দেওয়ালে চকলেট বোমা ফাটাতে দেখা গেল।

ভোরের দিকে ইডেন গার্ডেন্স সংলগ্ন রাস্তা দিয়ে ছটের পুণ্যার্থীরা দণ্ডি কাটতে কাটতে এগোচ্ছিলেন বাবুঘাটের দিকে। সেখানেই এক কিশোর হাঁটছিল চকলেট বোমার প্যাকেট নিয়ে। মাঝেমধ্যেই প্যাকেট থেকে বোমা বার করে আগুন লাগিয়ে ছুড়ে দিচ্ছিল যে দিকে খুশি! একটি বোমা গিয়ে পড়ল গঙ্গার দিকে এগোতে থাকা ভিড়ের মধ্যে। সেটি ফেটে জখম হলেন এক জন। কয়েক জন ছুটে সেই কিশোরকে ধরতে গেলে সে দৌড়ে একটি চলন্ত লরিতে উঠে পড়ল। পুলিশ কাছে থাকলেও লরিটিকে তারা দাঁড় করায়নি। ধরা হয়নি ওই কিশোরকেও। যদিও লালবাজার এ দিন পরিসংখ্যান দিয়ে জানিয়েছে, গত শনি ও রবিবার অভব্য আচরণের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে ৩৬৬ জনের বিরুদ্ধে। উদ্ধার হয়েছে ২৬.৭ কেজি নিষিদ্ধ বাজি। ওই ধরনের বাজি পোড়ানোর অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে ১৮ জনকে। যদিও যে হারে বাজি ফেটেছে, সেই তুলনায় এই গ্রেফতারি যথেষ্ট কম বলেই মত অনেকের।

অভিযোগ, সাউন্ড বক্সের দাপটও ছিল মাত্রাছাড়া। রাতে টিকতে না পেরে বহু এলাকা থেকেই থানায় বার বার ফোন করা হয়েছে। অভিযোগ, কিছু ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হলেও বহু ক্ষেত্রে ‘দেখা হচ্ছে’ বলেই এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। কোথাও পুলিশ গিয়ে রাত দেড়টায় বক্স বাজানো বন্ধ করলেও ফের তা শুরু হয়ে যায় আড়াইটে-তিনটে থেকে! এক পুলিশকর্মীর মন্তব্য, ‘‘আমাদেরও শুনতে হয়েছে, ছটে গানবাজনা না হলে চলে না। ভোরে সকলকে জাগিয়ে ঘাটে নিয়ে যেতেও নাকি জোরে গান লাগে।’’

কাদাপাড়ার কাছে একটি বস্তিতে রাত সাড়ে তিনটে থেকেই ডিজে বক্স বাজানোর অভিযোগ পেয়ে ভোরে যাওয়া হয়েছিল সেখানে। শোনা গেল, পুলিশ ঘুরে গিয়েছে। বক্স বন্ধ হয়নি। এক বাসিন্দার মন্তব্য, ‘‘বক্স না বাজলে আনন্দই নেই। পুলিশও জানে, ভোরের এই কয়েক ঘণ্টা ছাড় দিতেই হয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Chhath Puja 2022 Firecrackers DJ Box
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE