মেট্রোর ডিজিট্যাল ঘড়ি বলছে পরবর্তী মেট্রো আসার কথা দুপুর ২.৪৫। বৃহস্পতিবার দুপুরের দমদম মেট্রো স্টেশনে কবিসুভাষমুখী প্ল্যাটফর্মে থিকথিকে ভিড়। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে ঘড়ি তখন জানান দিচ্ছে দুপুর ২.৫০। কিন্তু মেট্রোর দেখা নেই। এদিকে ভিড় বাড়তে বাড়তে তখন তিলধারণের জায়গা নেই। পুজোর দিন পনেরো আগে কেনাকাটা করতে শহরতলি থেকে এই থিকথিকে ভিড়ের গন্তব্য তখন দক্ষিণ কলকাতার ব্যস্ত সব পুজোবাজার। বিরক্তিকর অপেক্ষার শেষে যখন মেট্রো এসে পৌঁছল তখন বাজে ২.৫৫। তাতে ওঠার জন্য প্রায় হাতাহাতির পরিস্থিতি। কারও চশমা ফস্কে মেট্রো লাইনে। কারও ব্যাগ ছিটকে প্ল্যাটফর্মে। ভিড়ের অর্ধেক উঠতেই পারলেন না মেট্রোতে।
কিন্তু কেন মেট্রোর এই অবস্থা?
মেট্রো রেল সূত্রের খবর, এই মাস থেকেই নতুন রেক না এলেও পুজো উপলক্ষে অতিরিক্ত ২৮টি ট্রেন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এই বৃদ্ধি আদতে ‘ভার্চুয়াল’। অর্থাৎ নতুন করে কোনও রেক বা মেট্রো নিয়ে আসা হয়নি। মেট্রোর হাতে সর্বসাকুল্যে রেক রয়েছে ১৮টি, যার মধ্যে ৭টিই মান্ধাতার আমলের। সাধারণত এই ১৮টি রেক বা মেট্রোই সারাদিনে ২৭৪ বার (আপ এবং ডাউনে) চলাচল করে। পুজো উপলক্ষে এই ২৭৪ বারের সঙ্গে আরও ২৮ বার যুক্ত হয়ে মোট ৩০২ বার চালানো হবে মেট্রো। কিন্তু মাত্র ১৮টি রেককে এতবার চালাতে গিয়েই কার্যত ল্যাজেগোবরে হচ্ছে কর্তৃপক্ষ। যদিও বৃহস্পতিবারের ঘটনাকে অন্য ভাবে ব্যাখ্যা করছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ।
মেট্রোর দাবি, বৃহস্পতিবার যে সময়ে এই ঘটনাটি ঘটেছে তখন দমদমমুখী ট্রেনগুলিতে এত ভিড় হয় যে তা পৌঁছতে সময় নিচ্ছিল। ফলে সেই মেট্রোকে ফিরতি পথে চালাতে সমস্যা হচ্ছিল। এই কারণেই যাত্রীদের এই দুর্ভোগ। পরে অবশ্য এই সমস্যা মিটে যায় বলে মেট্রো কর্তৃপক্ষের দাবি। কেন এই দাবি অমূলক?
কর্তাদের একাংশের বক্তব্য, দক্ষিণ কলকাতায় পুজোর বাজার সারতে এই সময়ে দমদম, এবং উত্তর কলকাতা লাগোয়া শহরতলির একটা ভিড় লেগেই থাকে। ধর্মতলা, পার্কস্ট্রিট এবং গড়িয়াহাট চত্বরের বাজারের ভিড় জমা হতে থাকে দমদম মেট্রো স্টেশনে। ফলে একটি ট্রেন সময়মতো না এলেই ভিড় দ্বিগুণ হয়ে যায়। বৃহস্পতিবারও তাই হয়েছে। ২.৪৫ এর মেট্রো সময়ে না আসায় দু’টো মেট্রোর সময় পার হয়ে গিয়েছিল। মাত্রাতিরিক্ত ভিড়ে অস্বস্তিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয় স্টেশনে। ট্রেন না আসার কোনও ঘোষণা না থাকায় অস্বস্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়তে থাকে বিরক্তিও। সুতরাং পুজোর যে ভিড়ের কথা বলা হচ্ছে তা হয় কলকাতার দিকে, মানে দমদম থেকে কবি সুভাষ যাওয়া পথে। তাই ওই সময় উল্টোপথের যে কথা কর্তৃপক্ষ শোনাচ্ছেন তা ভিত্তিহীন। এই সমস্যার জন্য ভিড় নয়, দায়ী মেট্রোর নিজস্ব নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা—এমনটাই অভিমত কর্তাদের একাংশের। তবে এ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মেট্রোর শীর্ষ কর্তারা অবশ্য বলছেন, ‘‘বিষয়টা খতিয়ে
দেখা হচ্ছে।’’
মেট্রোয় নিত্য যাত্রীরা অবশ্য বলছেন, শুধু এ দিন নয়, মেট্রোর এই সমস্যা লেগে রয়েছে গত বেশ কয়েকদিন ধরেই। রাতেও সাড়ে সাতটার পর থেকে অনিয়মিত হয়ে পড়ছে মেট্রো পরিষেবা। যার ফলে শ্যামবাজার, সেন্ট্রাল, ধর্মতলা, রবীন্দ্রসদন, কালীঘাট, মহানায়ক উত্তমকুমার— এই সমস্ত স্টেশনগুলিতে অফিস ফেরত যাত্রী এবং পুজোর কেনাকাটার ভিড় মিলে দমবন্ধ করা অবস্থা দাঁড়াচ্ছে। যদিও এই পরিস্থিতির কারণ বা সমাধান কোনওটারই উত্তর মেলেনি মেট্রো কর্তৃপক্ষের তরফে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy