এই দৃশ্য এখন রোজকার ব্যাপার।—ফাইল চিত্র।
গেদে কিংবা বনগাঁ লোকালের সঙ্গে দৃশ্যত কোনও ফারাক নেই হালফিলের কলকাতা মেট্রোর!
যে কোনও স্টেশনে অন্তত ছ’থেকে সাত মিনিট দেরি প্রায় নিয়মে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের একটা বড় অংশের। এক বার মেট্রো এলেও তাতে সুস্থির ভাবে ওঠা যাবে, সেই নিশ্চয়তা নেই। ঠাসাঠাসি ভিড়ে, আক্ষরিক অর্থেই মারামারি করে উঠতে হচ্ছে যাত্রীদের।
যেমনটা হল বৃহস্পতিবার সকালে। বেলগাছিয়া থেকে কালীঘাট যাচ্ছিলেন গৌতম বসু। ডিসপ্লে বোর্ড দেখাচ্ছিল, ট্রেন আসবে সকাল ১০টা ২১ মিনিটে। বাস্তবে সেটি এল ১০টা ২৮-এ। কিন্তু এলেই বা কি? কামরায় পা রাখার জায়গা নেই। শুধু বেলগাছিয়াই নয়, সকালের দিকে একই পরিস্থিতি থাকছে মহানায়ক উত্তমকুমার, রবীন্দ্র সরোবর, কালীঘাট, রবীন্দ্র সদনেও। ভিড়ের চাপে কামরার দরজা বন্ধ করাই দুষ্কর হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
কবি নজরুল থেকে দমদম পর্যন্ত যাত্রাপথে সময় লাগার কথা ৪৯ মিনিট। কিন্তু তা সম্পূর্ণ করতে প্রায়ই ৫৫ থেকে ৫৬ মিনিট লেগে যাচ্ছে। এর উপরে বয়সের ভারে নুয়ে পড়া রেকগুলির অবস্থা আর কহতব্য নয়। এক বার কোথাও সমস্যা দেখা দিলে তার জের থাকছে দিনভর। ডিসপ্লে বোর্ডের ঘড়ির সঙ্গে মেট্রো চলাচলের কোনও রকম সমতা থাকছে না।
বেহালার বাসিন্দা সৌমি রায়চৌধুরী ময়দান এলাকায় একটি বেসরকারি সংস্থার কর্মী। তাঁর কথায়, ‘‘ইলেকট্রনিক বোর্ড দেখাচ্ছে, ট্রেন আসছে ২ মিনিটের মধ্যে। তা এল আরও প্রায় ৭-৮ মিনিট পরে। ঘড়িতে দেখানো সময়ের সঙ্গে তাল না মিলিয়ে ট্রেন চলা খুবই বিরক্তিকর।’’
যাত্রীদের আরও অভিযোগ, কোনও রকম ঘোষণা ছাড়াই বোর্ডে দেখানো সময় পাল্টে যায়। অথচ কেন একটি ট্রেন নির্ধারিত সময়ে এল না, তা জানানোর কোনও ব্যবস্থা মেট্রোর তরফে নেই। বড় কোনও বিপর্যয় হলে একমাত্র তখনই ঘোষণা হয়।
কুঁদঘাটের বাসিন্দা বিকাশ সরকার বলেন, ‘‘মেট্রো কর্তৃপক্ষের ভাব এমন, যেন কয়েক মিনিটের মধ্যে ট্রেন পাওয়া যাচ্ছে সে-ই ঢের। সময় নিয়ে আবার প্রশ্ন করা কেন?’’ মেট্রো সূত্রের খবর, সম্প্রতি সব স্টেশনে টাইমার বসানো হয়েছে। ট্রেন আসার সময় হলেই তাতে সেকেন্ডের হিসেব ফুটে ওঠে। কিন্তু যাত্রীদের বক্তব্য, টাইমার বসায় সময়ানুবর্তিতায় উন্নতি তো হয়ইনি, উল্টে সেই টাইমার আরও বাড়াচ্ছে বিভ্রান্তি।
কিন্তু দেরির এই সমস্যা কেন?
মেট্রো কর্তৃপক্ষের দাবি, এসপ্লানেডে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সুড়ঙ্গ তৈরির জন্য ট্রেনের গতি ঘণ্টায় ১০ কিলোমিটারে নেমে আসায় প্রতি যাত্রায় অন্তত দু’মিনিট সময় বেশি লাগছে। পাশাপাশি তাঁরা আরও বলছেন, দমদম, এসপ্লানেড, রবীন্দ্র সদন, কালীঘাটের মতো স্টেশনগুলিতে ভিড়ের চাপে প্রায় সময়েই অতিরিক্ত এক মিনিট করে দেরি হয়ে যাচ্ছে।
এক মেট্রোকর্তা অবশ্য দেরির জন্য তাড়াহুড়ো করে যাত্রীদের একই ট্রেনে ওঠাকে দায়ী করেছেন। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, ‘‘যাত্রীরাও বহু সময়ে জোর করে উঠতে গিয়ে পরিস্থিতি জটিল করছেন। দরজা আটকে দেরি না করলে পরের ট্রেনটি তো সময়ে চলতে পারে। প্রায়ই দেখা যায়, ভিড় মেট্রোর ঠিক পরের ট্রেনটি ফাঁকা থাকে।’’ যাত্রীদের যদিও বক্তব্য, সময়ে ট্রেন না চলার জন্যই ভিড় বাড়ে। সময় বেশি লাগার জন্য সম্প্রতি ট্রেনের সংখ্যা ৩০০ থেকে কমিয়ে ২৮৪ করা হয়েছে। তার পরেও সময়ানুবর্তিতা ফিরছে কই?
মেট্রো কর্তৃপক্ষ অবশ্য এই সমস্যাগুলিকে আমল দিতেই রাজি নন। মেট্রোর মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায় শুধু বলেছেন, ‘‘এসপ্লানেডে ইস্ট-ওয়েস্টের কাজের জন্য প্রতি ক্ষেত্রে অন্তত ২ মিনিট বেশি লাগছে। যার প্রভাব পড়ছে পরের ট্রেনগুলিতে এবং সামগ্রিক পরিষেবায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy